বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-২০ টুর্নামেন্টের তৃতীয় আসরের ফ্র্যাঞ্চাইজ মালিকানার স্বত্ব পেতে আগ্রহ পত্র দিয়েছে এগার নতুন প্রতিষ্ঠান। দেশের বহুল পরিচিত, শীর্ষস্থানীয় অনেক প্রতিষ্ঠান এই তালিকায় রয়েছে। আবার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল ও বিসিবির অনেকেরই সবগুলো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেই।
আগের দুই আসরে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে বিসিবির। এবার তৃতীয় আসরে তাই সতর্ক পথেই হাঁটতে চায় বিসিবি। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের এক সদস্য বলেছেন, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে ফ্র্যাঞ্চাইজ দেয়া হবে না। যাদের স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান, শক্ত ভিত রয়েছে ব্যবসায় তাদেরকেই বাছাই করা হবে।
বিপিএলে আগ্রহপত্র দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য। উল্লেখ্য, এসব তথ্যের সবই প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইট থেকে নেয়া।
বেক্সিমকো গ্রুপ: বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ ব্যবসায়িক গোষ্ঠী হিসেবেই পরিচিত বেক্সিমকো গ্রুপ। বেসরকারি খাতে সবচেয়ে বড় শিল্পগোষ্ঠী তারা। ১৯৭০ সালে যাত্রা শুরু করে এই গ্রুপ। টেক্সটাইল, ট্রেডিং, মেরিন ফুড, রিয়েল এস্টেট ডেভলপমেন্ট, হসপিটালিটি, কনস্ট্রাকশন, ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজিস, মিডিয়া, সিরামিকস, এভিয়েশন, ফার্মাসিউটিক্যালস, ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস এবং এনার্জি সেক্টরে পদচারণা রয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপের। দেশে-বিদেশে প্রায় ৪৮ হাজার লোক এই গ্রুপে কর্মরত রয়েছেন।
ডিবিএল গ্রুপ: দুলাল ব্রাদার্স লিমিটেড, সংক্ষেপে ডিবিএল। স্বাধীনতার পরপরই ক্ষুদ্র আকারে শুরু হওয়া প্রতিষ্ঠানটি এখন গ্রুপ অব কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। ১৯৯১ সালে ডিবিএল গ্রুপ নামে যাত্রা শুরু হয় তাদের। স্পিনিং, নিটিং, ডাইং প্রিন্টিং, স্ক্রিণ প্রিন্টিং, গার্মেন্টস, প্যাকেজিং, সিরামিক টাইলস, টেলিকম ও গার্মেন্টস একসেসরিসের ব্যবসা রয়েছে এই গ্রুপের। বর্তমানে ২০ হাজার ১৫০ জন লোক এই গ্রুপে কর্মরত আছেন।
সোহানা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ: এই গ্রুপের কোনো ওয়েবসাইট পাওয়া যায়নি। তারপরও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সোহানা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রয়েছে কয়েকটি। ভিকন ইন্ডাস্ট্রিজ, সোহানা হাইটেক ইন্ডাস্ট্রি ও সোহানা জুয়েলারি এন্ড ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি। গ্রুপের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বেসরকারি চ্যানেল এশিয়ান টিভির ম্যানেজিং ডিরেক্টর। এছাড়া তিনি বিপিএলের প্রথম আসরে সিলেট রয়্যালসের অংশীদার ছিলেন। পরে তিনি নিজের শেয়ার বিক্রি করে দেন। দেশীয় কোম্পানি ওয়ালটনের সঙ্গেও ছিলেন তিনি।
বিবিএস ক্যাবলস: বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস লিমিটেড (বিবিএসএল) এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বিবিএস ক্যাবলস। ২০০৯ সালে এটি যাত্রা শুরু করে। গাজীপুরের শ্রীপুরে অবস্থিত এর ফ্যাক্টরি। ইলেকট্রিক ক্যাবলস, ওয়েরস, কন্ডাকটরস প্রস্তুত করে প্রতিষ্ঠানটি।দেশের অভ্যন্তরেও বেশ সুপরিচিত বিবিএস ক্যাবেলস। জিয়ামেন রিফ্লেক্টিভ ইনসুলেশন্স, পৃথিবী ইঞ্জিনিয়ার্স ও বিবিএস ডেভলপারস এই গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান।
মিডিয়াকম (স্কয়ার গ্রুপ): দেশের বিখ্যাত শিল্প প্রতিষ্ঠান স্কয়ার গ্রুপের হয়ে বিপিএলের আগ্রহপত্র জমা দিয়েছিল মিডিয়াকম। এটি মূলত মিডিয়া এজেন্সি। নানামুখী সেক্টরে তাদের বিচরণ রয়েছে। প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরীর হাতে গড়া স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৫৮ সালে। পরবর্তীতে ফার্মাসিউটিক্যালস, টেক্সটাইল, ইনফরমেশন টেকনোলজি, হেলথকেয়ার, ফুড ও হাসপাতাল রয়েছে স্কয়ার গ্রুপের। ২২ হাজার মানুষ এই গ্রুপে কাজ করছেন।
ইনডেক্স গ্রুপ: কনসাল্টিং কোম্পানি হিসেবেই শুরু হয়েছিল ইনডেক্স গ্রুপের। পরবর্তীতে এটি উৎপাদন, পরিসেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে। দেশের অভ্যন্তরে ইনডেক্স গ্রুপ এখন বেশি পরিচিত পাওয়ার এন্ড এনার্জি সেক্টরের মাধ্যমে। কনসালট্যান্সি থাকলেও এনার্জি (তেল, গ্যাস), বিদ্যুৎ, এগ্রো, লজিস্টিকস, ইকো ট্যুরিজম ও শিপ বিল্ডিং বিভাগে তাদের পদচারণা রয়েছে। এই গ্রুপের চেয়ারম্যান শফিউল্লাহ মুনীর মূলত হকির সংগঠক। তিনি মোহামেডান ক্লাবের হকির কর্মকর্তা। হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।
ব্লুজ কমিউনিকেশন্স: ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি হিসেবেই এটি পরিচিত। ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজে লেখা আছে, প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্যও শহরে সেরা অনুষ্ঠান আয়োজন। সম্প্রতি যারা বেঙ্গল ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক ফেস্টিভাল, সুফি ফেস্ট ঢাকা (সুফি ফেস্টিভাল) আয়োজন করেছিল।
নেটওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: এটি আইসিটি ভিত্তিক কোম্পানি। ১৯৯৬ সাল থেকেই বাংলাদেশে কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠান। গোটা দেশ জুড়েই এটিএম সার্ভিস এবং এটিএম’র পূর্ণাঙ্গ আইটি সাপোর্ট, সেবা দিয়ে থাকে নেটওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ। দেশে বিদ্যমান ব্যাংকগুলোর এটিএম বুথের সেবা রয়েছে। যেখানে গ্রাহক ব্যাংকে না গিয়ে লেনদেন করতে পারেন। এটিএম সুইচিং সফটওয়্যার, ইউরোনেট ডেভিট কার্ড সলিউশন, ইন্টিগ্রেটেড ক্রেডিট কার্ড সিস্টেম, ইউরোনেট ইএমভি চিপ কার্ড সলিউশন্স সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি।
বেঙ্গল কমিউনিকেশন্স: ওয়েবসাইটে প্রবেশ না করা গেলেও প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ডিজিটাল ক্যাবল টিভির সংযোগ দেয়া হয় এই প্রতিষ্ঠান থেকে। দেশের সবচেয়ে বড় ক্যাবল সিস্টেম অপারেটর হিসেবেই তাদের পরিচিতি বেশি। ফাইবার অপটিক লিজিং, ইন্টারনেট সার্ভিস, ডিজিটাল ক্যাবল টিভি, এনালগ ক্যাবল টিভির সার্ভিস দিয়ে থাকে এই প্রতিষ্ঠান। বেসিসের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী বেঙ্গল কমিউনিকেশন্স ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু করে। ২৮৩ জন লোক এখানে কর্মরত রয়েছেন।
এক্সিওম টেকনোলজি: ক্রিকেটাঙ্গনে বেশ পরিচিত নাম এক্সিওম টেকনোলিজ। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান হিসেবে সবাই জানে। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এক্সিওমের আরো কয়েকটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রিজবিজ ডট বিজ, রিজ ইভেন্টস, ইনস্টিটিউট অব হোটেল ম্যানেজমেন্ট এন্ড হসপিটালিটি লিমিটেড, বি টু এম টেকনোলজি, তেজারি নামক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গত এক দশক ক্রিকেটে কাজ করছে এক্সিওম। বিভিন্ন সময়ে বিসিবির পার্টনার ছিল। বর্তমান সময়েও হোম সিরিজে বিসিবির টিকিট স্বত্ব, ইনস্টেডিয়া বিজ্ঞাপনের স্বত্বের মালিক তারা। এছাড়া ওয়েব হোস্টিং, গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন-ডেভলপমেন্ট, মাল্টিমিডিয়া ট্রেনিং, টিভি কর্মাশিয়ালের কাজ করে থাকে এই প্রতিষ্ঠান।
ফাইবার অ্যাট হোম লিমিটেড: বিপিএলের আগ্রহপত্র জমা দেয়া শেষ প্রতিষ্ঠান ছিল এটি। ফাইবার অ্যাট হোম মূলত টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক ভিত্তিক কোম্পানি। ২০০৯ সালে বিটিআরসি থেকে ন্যাশানওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) লাইন্সেস পায় প্রতিষ্ঠানটি। দেশের সকল উপজেলায় অপটিক্যাল ফাইবার ভিত্তিক ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক তৈরি করছে তারা। যা ব্যবহৃত হচ্ছে মোবাইল অপারেটর, ক্যাবল টিভি অপারেটর, আইএসপি প্রোভাইডারদের কাজে।