বিরোধীদলের নেতা খালেদা জিয়াকে পাকিস্তানে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, ‘আপনি পাকিস্তানের কাছ থেকে এখনও টাকা খেয়ে যাচ্ছেন। যেখান থেকে টাকা নিয়েছেন সেখানেই চলে যান। বাংলার মাটিকে কলুষিত করবেন না।’
বুধবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু স্কোয়ারে ১৪ আয়োজিত গণজমায়েতে দেওয়া প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
বিরোধী দলের নেতার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন আপনার আর কোনোদিন পূরণ হবে না। আমরা গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন করব।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি চালের দাম ১০ টাকা থেকে ৪০ টাকা করে গেছে। আমরা জিনিসপত্রের দাম কমিয়েছি। গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বাড়িয়েছি। বাংলাদেশের কোনো এলাকায় খাদ্যসঙ্কট নেই। মানুষকে বিনামূলে খাবার দিয়ে আমরা খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। সারের দাম কমিয়েছি। তিন দফায় সার কৃষকদের কাছে চলে যাচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সাড়ে চার লাখ মানুষকে চাকরি দিয়েছি। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছি। সমুদ্রসীমানার বিরোধ মীমাংসার জন্য আমরা জাতিসংঘে আমাদের দাবি উপস্থাপন করেছি। ভারতের কাছ থেকে আমরা গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেশবাসীকে বলবো, মনে রাখবেন, যুদ্ধ করে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন করেছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা থাকবে, ভোটাধিকার নিশ্চিত হবে–সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। গণতন্ত্র নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলতে দেবো না। আমি বিরোধী দলের নেতাকে বলবো, পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার ওই পথ ভুলে যান। বাংলাদেশে আর সেটা হবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) ক্ষমতায় যেতে চান দুই নম্বর পথে। কিন্তু বাংলাদেশে আর কেউ দুই নম্বর পথে ক্ষমতায় যেতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, আল-বদরদের ঠাঁই বাংলার মাটিতে হবে না। খালেদা জিয়া, আপনি পাকিস্তানের টাকা খেয়েছেন, এখনো খেয়ে যাচ্ছেন। পাকিস্তানের প্রতি আপনার এতো দরদ থাকলে আপনি তাদের কাছেই চলে যান।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাদের আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পরাজিত করেছি, বিএনপি নেত্রী, তাদের কাছে আপনি মাথা নত করেন। তাদের কাছ থেকে টাকা নেন। এটা লজ্জার কথা। কিন্তু আপনার লজ্জা করে না।’
শেখ হাসিনা প্রশ্ন তোলেন, ‘আপনি (খালেদা) দালালি করেন কাদের? পরাজিতদের কাছে দেশ বিক্রি করতে চান? এজন্যই ক্ষমতায় এসে দেশে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছিলেন?’
তিনি বলেন, ‘গত তিন বছরে পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, উপ-নির্বাচন, ইউপি নির্বাচনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় ৫ হাজার নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো হস্তক্ষেপ হয়নি। জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া মুখে এক বলেন, করেন আর এক। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন `ইভিএম এ ভোট মানি না` বলে নির্বাচন বর্জন করে তিনি দলীয় প্রার্থীকে বহিষ্কার করেন। পরে বিএনপির প্রার্থী যখন নির্বাচিত হলেন তখন তিনি (খালেদা) তাকে ফুল দিয়ে কাছে টেনে নেন। এতে তিনি যে থুথু ফেললেন আবার সেই থুথু চেটে নিলেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিরোধী দলের নেতা বলেছেন, দেশের অর্থনীতি ভালো নেই। আপনার নিজের অর্থনীতি ভাল না-ও থাকতে পারে। আপনি চোরাই টাকা জরিমানা দিয়ে সাদা করেছেন। আপনার ছেলেরা, মন্ত্রীরা এটা করেছে। আপনার লজ্জা করে না তাই ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের টাকা মেরে খান। আপনার লজ্জা হওয়া উচিত।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার মাস মার্চ, বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। এই স্বাধীনতা ও বিজয়ের মাসেই খালেদা জিয় যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, আল বদরদের রক্ষার জন্য ষড়যন্ত্র করেন। তাদের রক্ষার জন্য মার্চ মাসে আপনি `ঢাকা চলো` কর্মসূচি দিয়েছিলেন। কিন্তু আপনি তাদের বাঁচাতে পারবেন না।’
বিএনপির ১২ মার্চের সমাবেশ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত ১৮ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের নামে ফজরের নামাজের পর বোমাবাজির ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। এরপরও আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি বলে তাদের এই কর্মসূচিতে বাধা দিইনি। তবে একটাই শর্ত ছিলো, বোমাবাজি ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারবেন না।’
বর্তমান সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সময় দেশে কোনো দুর্ভিক্ষ হয়নি। খাদ্যাভাব নেই, কৃষককে সারের জন্য গুলি খেতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘পত্র পত্রিকায়, বেসরকারি টেলিভিশনে সরকারের সমালোচনা হচ্ছে, কিন্তু আমরা বাধা দেই নি।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির সময়ে ১৬ জন সাংবাদিক হত্যা করা হয়েছে। ১৮ শ’ সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তারা দেশকে জঙ্গিবাদ, বোমাবাজের দেশে পরিণত করেছিলো। তারা ১০ টাকার চাল ৪০ টাকায় খাইয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বেকারদের চাকরি দিয়োছি, হাসপাতাল করেছি, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার করেছি, ডাক্তার নিয়োগ দিয়েছি, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি, ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে বই দিয়েছি। বাংলাদেশে বিশ্বে এখন উন্নয়নের মডেল হিসেবে পরিচিত। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলে এসব বন্ধ করে দেবেন বলে হুমকি দিয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রী জনসমাবেশ সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা জনসভা ডেকেছিলাম। কিন্তু মানুষের উপস্থিতি জনতার মহাসাগরে পরিণত হয়েছে। আমরা রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি, দেশের গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেবো না।’