বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংক (আইবিবি) থেকে বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছে দুবাই ইসলামিক ব্যাংক (ডিআইবি)। ১৯৮৩ সালে ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠালগ্নে এটির উদ্যোক্তা হিসেবে যুক্ত হয়েছিল ডিআইবি। ২০১৫ সালে এসে প্রায় ৩২ বছরের সেই সম্পর্ক ছিন্ন করতে যাচ্ছে দুবাই ইসলামিক ব্যাংক।
সম্প্রতি ডিআইবি তাদের হাতে থাকা বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ৬৭ লাখ শেয়ারের মধ্যে ৩৭ লাখ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে। পর্যায়ক্রমে হাতে থাকা বাকি শেয়ারও তারা বিক্রি করে দেবে বলে এক চিঠিতে জানিয়ে দিয়েছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হওয়ায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটেও উদ্যোক্তা শেয়ারধারী ডিআইবির শেয়ার বিক্রির ঘোষণা প্রকাশ করা হয়েছে।
ডিএসইর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ আগস্ট দুবাই ইসলামিক ব্যাংক তাদের হাতে থাকা শেয়ারের অর্ধেকেরও বেশি শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেয়। ওই ঘোষণায় ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে এসব শেয়ার বিক্রির কথা বলা হয়। ১০ আগস্ট ইসলামী ব্যাংকের প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ২৬ টাকা। গত মঙ্গলবার দিন শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩১ টাকায়। মঙ্গলবারের এ দাম বিবেচনায় নিলে ডিআইবি ঘোষিত বিক্রয়যোগ্য শেয়ারের দাম দাঁড়ায় প্রায় ১১ কোটি টাকা।
দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানার ব্যাংক হিসেবে ১৯৮৩ সালের ১৩ মার্চ বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় এটিই ছিল দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম ইসলামী ব্যাংক। ওই বছরের ২৩ মার্চ ৬৮১টি শেয়ার কিনে উদ্যোক্তা হিসেবে যুক্ত হয় দুবাই ইসলামিক ব্যাংক। পরবর্তী সময়ে ১৯৯০, ১৯৯৬, ২০০০ ও ২০০৩ সালে অধিকারমূলক (রাইট) শেয়ার কিনে ও বোনাস লভ্যাংশ পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের পরিমাণ বা বিনিয়োগ বেড়ে যায়। একপর্যায়ে ডিআইবির শেয়ার বেড়ে দাঁড়ায় ২ কোটি ৭০ লাখ, যা আইবিবির মোট শেয়ারের প্রায় ১ শতাংশ।
প্রতিষ্ঠালগ্নে বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ছিল আট কোটি টাকা। যা এক হাজার টাকার অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালুর ৮০ হাজার শেয়ারে বিভক্ত ছিল। পরবর্তী সময়ে আইবিবির প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য পরিবর্তিত হয়ে ১০০ টাকা এবং সর্বশেষ ১০ টাকা হয়।
আইবিবি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশের পাশাপাশি আরও সাতটি দেশের ব্যাংক খাতের বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছে দুবাই ইসলামিক ব্যাংক। এসব বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে ‘ব্যাংক অব খার্তুম’ নামে সুদানের এক ব্যাংকে বিনিয়োগ করবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, দুবাইয়ের ইসলামিক ব্যাংকের আদলেই এ দেশে ইসলামী ব্যাংকটি গড়ে তোলা হয়েছিল। বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল ডিআইবি। ৩২ বছর ডিআইবি আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে ব্যাংকটির উন্নয়নে কাজ করেছে।
আইবিবির শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, প্রতিষ্ঠালগ্নে ব্যাংকটির ৭০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা ছিল বিদেশিদের হাতে। ২০ থেকে ২৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক ছিল বাংলাদেশ সরকার। ক্রমান্বয়ে বিদেশি ও সরকারের মালিকানা কমতে থাকে। ৯০ দশকের পর থেকে বাংলাদেশ সরকারের হাতে থাকা ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়।
মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকের মোট শেয়ারের মধ্যে ৬০ শতাংশের মতো শেয়ারের মালিকানা বিদেশিদের হাতে রয়েছে।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে আইবিবির পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ৬১০ কোটি টাকা, যা প্রায় ১৬১ কোটি শেয়ারে বিভক্ত। মোট শেয়ারের মধ্যে ৫৮ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তাদের হাতে। সাধারণ শেয়ারধারীদের হাতে রয়েছে প্রায় ২১ শতাংশ এবং দেশি-বিদেশি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর হাতে রয়েছে বাকি ২১ শতাংশ শেয়ার। ইসলামী ব্যাংকের বিদেশি উদ্যোক্তাদের মধ্যে রয়েছে সৌদি আরবের ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, কুয়েত ফিন্যান্স হাউস, জর্ডান ইসলামিক ব্যাংক, কাতারের ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ করপোরেশন, বাহরাইন ইসলামিক ব্যাংকসহ আরও বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।– প্রথম আলো