বস্কদের বুকের ভেতর এক নিদারুণ হতাশা আউলা বাতাস হয়ে ঘুরেছে ৩১টি বছর। প্রতি মৌসুমে বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মতো জায়ান্টদের শিরোপা উৎসব দেখে হয়তো বিষণ্ন মনে তারা বলেছে ‘দেখিস, একদিন, আমরাও’। সেই ‘একদিন’ অবশেষে এসেছে। ৩১ বছর পর বড় কোনো শিরোপা জিতেছে বস্কদের ক্লাব অ্যাথলেটিক বিলবাও। স্প্যানিশ সুপার কাপে দুই লেগে বার্সেলোনাকে ৫-১ ব্যবধানে হারিয়ে গড়েছে নতুন ইতিহাস।
বস্কদের বাস মূলত স্পেনের উত্তরে। স্বতন্ত্র কৃষ্টি-সংস্কৃতি আর নিজস্ব পরিচয়েই পরিচিত তারা। স্পেনের মধ্যেই বস্করা যেন বাস করে আরেক দেশে, অনেকটা কাতালানদের মতোই। কাতালানদের ক্লাব যেমন বার্সা, তেমনি বস্কদের বিলবাও। তবে বার্সার সঙ্গে বিলবাওয়ের একটি মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। ১৮৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ ক্লাবের মূল নীতি, বস্ক অঞ্চলের বাইরে অন্য কোনো খেলোয়াড় দলে না নেওয়া। ইউরোপীয় ফুটবলে যা এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এ নীতির জন্য ক্লাবটি যেমন সমালোচিত, তেমনি হয়েছে প্রশংসিত। আসলে নিজেদের অঞ্চলের খেলোয়াড়দের অবারিত সুযোগ ও নিজেদের সংস্কৃতি, স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতেই এ নীতি।
স্প্যানিশ ফুটবল ইতিহাসে বিলবাওয়ের অর্জন খুব যে বেশি, তা নয়। লা লিগা জিতেছে মোট আটবার। সর্বশেষ জয় ১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে। কোপা ডেল রে জিতেছে একই মৌসুমে। স্প্যানিশ সুপার কাপও ১৯৮৪ সালে। ১৯৮৪ সালটা যেন সব পাওয়ার বছর ছিল বস্কদের। তবে বুঝতে পারেনি, একের পর এক শিরোপা জয়ের আনন্দের পর বিরাট এক দুঃখগাথাই অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। আর সে দুঃখগাথার দৈর্ঘ্য হবে ৩১টি বছর!
অথচ গৌরব করার মতো বহু রেকর্ড রয়েছে বিলবাওয়ের দখলে। লা লিগার সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটি ৬০ বছর দখলে ছিল বিলবাওয়ের কিংবদন্তি তেলমো জারার। স্প্যানিশ লিগে তাঁর ২৫১ গোলের রেকর্ডটা এক সময় অস্পর্শনীয়ই মনে হয়েছিল। গত মৌসুমে রেকর্ডটি পেছনের পাতায় ঠেলে দিয়েছেন লিওনেল মেসি। লা লিগায় সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ডও বিলবাওয়ের। ১৯৩১ সালে বার্সাকে ১২-১ ব্যবধানে হারিয়েছিল বস্করা। লা লিগায় রিয়াল-বার্সার পর বিলবাও একমাত্র দল, যাদের কখনো অবনমন হয়নি। টানা খেলে গিয়েছে প্রতিটি মৌসুম।
তবে রেকর্ডে তো আর শিরোপা খরার আক্ষেপ দূর হয় না। দীর্ঘ খরা শেষে জয়ের বৃষ্টিতে সিঞ্চিত হয়েছে তারা। আর এ সাফল্যের পেছনে বড় অবদান বর্তমান কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দের। খেলোয়াড়ি জীবনে প্রায় অর্ধযুগ খেলেছেন বিলবাওয়ের হয়ে। তবে ক্লাবের হয়ে প্রাপ্তির খাতাটা শূন্যই ছিল। অবশেষে একটি মুকুট যোগ হলো কোচ হিসেবে। ব্যস্ত-সমস্ত ফুটবল টেকনিকের কারণে ডাক নাম তাঁর ‘পিঁপড়া’। শিরোপা জয়ের পর দারুণ তৃপ্তি খেলে যাচ্ছে ভালভার্দের মুখে, ‘অবশেষে শিরোপা জিতলাম। আমাদের সমর্থকের এটা পাওনা ছিল। দীর্ঘদিন ধরে আমরা এমন কিছুর জন্য মুখিয়ে ছিলাম। ১৯৮৪ সালের পর কত প্রজন্ম এল, গেল…। বিলবাওয়ের খেলোয়াড় হিসেবে কিছু জিততে পারিনি। তবে জানতাম, কোনো না কোনো সময় এ দিনটি আসবে।