সাদা! শান্তি, আরাম, পবিত্র, নিষ্পাপ এ রকম অনেক শব্দই রংটির প্রতীক। নিষ্পাপ অথবা খুব সাধারণ ভাব তুলে ধরতে পারবেন এই রংটির মধ্য দিয়ে। ঠিক একইভাবে খুব জমকালো, অভিজাত ও সুরুচিপূর্ণভাবেও নিজেকে সাজিয়ে তোলা সম্ভব। সাদা অসাধারণ এ কারণেই। যেকোনো জায়গায় যেকোনো পরিবেশে মানিয়ে যায় চমৎকারভাবে।
উফ এত গরম। কান পাতলে দেখবেন সারা দিনে এই কথাটি সবাই কয়েকবার করে বলছে। হালকা ও উজ্জ্বল রং, আরামদায়ক কাপড়ে তৈরি পোশাকগুলোর চাহিদা এখন তুঙ্গে। আর শুভ্র সাদার আকর্ষণ ফেরানো অনেকটাই অসম্ভব। সারা বছর পোশাকে ব্যবহার হলেও গরমের সময়টাতে এর কাটতি বেশি হয় বলে জানান ডিজাইনাররা।
পশ্চিমা কিংবা দেশি ধাঁচেরফ্যাশন ডিজাইনার মাহিন খান বলেন, ‘সাদা রংকে খোলা ক্যানভাস বলা হয়। সাদার মধ্যে যেকোনো নকশা করা যায়। যেকোনো রং দিয়ে কালার ব্লকিং করা যায়। সাদার মধ্যে সব রং ভালো ফোটে। যেকোনো স্কার্ফ, দোপাট্টা নেওয়া যায়। সাদা পোশাকের সঙ্গে যেকোনো রঙের গয়না ভালো পরতে পারবেন। একই রঙের অথবা বিপরীত রঙের জ্যাকেটও ভালো লাগে। সাদাকে যেভাবে মানুষ চায়, সেভাবেই তুলে ধরতে পারে।’
দেশি পোশাকের পাশাপাশি পাশ্চাত্য পোশাকের মধ্যেও সাদার ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। জাম্পস্যুট, গাউন, স্কার্ট, টিউনিক, শার্ট, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ সবকিছুতেই আরামের পাশাপাশি এর ব্যবহারে বেশ জমকালো ভাব আনা সম্ভব। সাদা রঙের সাদামাটা শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ অথবা গাউনটি হয়তো আজকে রাতের জমকালো অনুষ্ঠানের জন্য একেবারেই বেমানান। ওপরে একই রঙের পাতলা কাপড়ের তৈরি জমকালো একটি পন্চো পরে নিন। একদমই অন্য রকম দেখাবে। গরমও অনুভূত হবে না। ফ্যাশন হাউস হুর-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান ডিজাইনার সৌমিন আফরিন বলেন, ‘এই সময়ে আরামের কথা চিন্তা করলে সাদা রংটার কথাই বেশি মনে পড়ে। আমি যেহেতু কাস্টমাইজড (ক্রেতার চাহিদা ও পরামর্শ অনুযায়ী পোশাকের নকশা পরিবর্তন করেন) কাজ করি, সেহেতু ক্রেতার চাহিদা, তাঁর ব্যক্তিত্ব, দাওয়াতের পরিবেশ সবকিছু মাথায় রেখেই পোশাকটি বানাই। দাওয়াতের জন্য মটকা, শিফন, জর্জেট, মসলিন, সিল্ক, অ্যান্ডি, জামদানি কাপড় ব্যবহার করতে পারেন। এখানে টিউনিকটিতে একদম ভিন্ন প্যাটার্ন ব্যবহার করেছি। হাতায় বাড়তি স্লিভ দিয়েছি। সাদার ওপরেও অনেক কিছু করা যায়। শাড়ির মধ্যে সাদা মুক্তা ব্যবহার করেছি। সাদার ওপরে সাদা নকশা করলে বেশি অভিজাত ভাব প্রকাশ পায়।’
মনোটোন লুক এখন বেশ চলছে। একটি রং বা তার কিছু শেড দিয়েই পুরো সাজপোশাক করাটা মনোটোন লুক। এই গরমে ছিমছাম দেখাতে মনোটোন ধাঁচের স্টাইল করেন অনেকে। এ ক্ষেত্রে সাদা রংটার জনপ্রিয়তা বেশ। সাদার সঙ্গে সব রংই মানিয়ে যাবে হেসেখেলে।
আরামের পাশাপাশি আভিজাত্য আনতে চাইলে এর সঙ্গে চাপা সাদা, বাদামি, খাকি, ছাই বা ধূসর কিংবা হালকা হলুদ রং বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিলেন মাহিন খান।
সাদা পোশাকের সঙ্গে মেকআপটা অনেক মজা করে করা যায়। রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন বলেন, ‘সাদা মানুষের সম্পূর্ণ সৌন্দর্য বের করে আনতে পারে। অনেককেই হয়তো কোনো বিশেষ রঙে মানায় না। কিন্তু সাদা রং ঠিকই মানিয়ে যায়। ত্বকের রং যাই হোক না কেন সাদা সবাইকেই মানায়।’
তাঁর মতে, সাদা পোশাকের সঙ্গে হালকা, গাঢ় সব ধরনের সাজই মানাবে। একটু গাঢ় রঙের লিপস্টিকও ব্যবহার করা যাবে। আবার একইভাবে খুব হালকা রঙের লিপস্টিকও মানিয়ে যাবে। কোন ধরনের দাওয়াতে যাচ্ছি, সেটা মাথায় রাখতে হবে।
চাপা গায়ের রং যাদের, মানাবে না বলে সাদা রংটা এড়িয়েই চলেন তাঁরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি খুবই ভুল ধারণা। কারণ সাদা রংটা চেহারায় আলোর প্রতিফলন করে। তখন উজ্জ্বল আভা পড়ে চেহারায়। সতেজ লাগে দেখতে। একটু ছিমছাম, সাদামাটাভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে চাইলে নরম, হালকা টোনের মেকআপে যাওয়া উচিত। আর খুব জমকালো ভাব আনতে চাইলে মুখের মেকআপটা জমকালো করতে হবে। ঠোঁটে লাল, কমলা, কফি, মেরুন, ম্যাজেন্টা যেকোনো রং ব্যবহার করা যায়। ব্লাশঅন অনেক গাঢ় করে করতে পারবেন। এমনকি চোখের সাজটাও ভারী করতে পারবেন। তবে কোনো একটা অংশের মেকআপ একদম হালকা রাখতে হবে। সাদা পোশাকের সঙ্গে গয়নার ক্ষেত্রে মুক্তা সবচেয়ে বেশি মানায় বলে মনে করেন আফরোজা পারভীন। তবে আপনি চাইলে যেকোনো ধরনের গয়নাই ফুটিয়ে তুলতে পারবেন সাদা পোশাকের ওপরে।