পাকিস্তানি কাওয়ালি শিল্পী ওস্তাদ নুসরাত ফতেহ আলী খান ১৯৯৭ সালের ১৬ আগস্ট লন্ডনে মারা যান। অসাধারণ গায়কী ক্ষমতার জন্য তাকে বিশ্ব সংগীতের অন্যতম গায়ক মনে করা হয়। তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা উচুঁলয়ে গান গাইতে পারতেন। তার হাত ধরে কাওয়ালি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তাকে ‘শাহেন-ই-কাওয়ালি’ নামে ডাকা হয়। ২০০৬ সালে টাইম ম্যাগাজিনে তাকে ৬০ বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ ১২ জন শিল্পীর অন্যতম হিসেবে তুলে ধরে।
নুসরাত ফতেহ আলী খান ১৯৪৮ সালের ১৩ অক্টোবর পাকিস্তানের ফয়সালাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ওস্তাদ ফতেহ আলী খান। তার পরিবারের রয়েছে ৬০০ বছর কাওয়ালি ঐতিহ্য। খুব ছোটবেলাতেই সংগীতের প্রতি তার গভীর মমত্ববোধ তৈরি হয়। রাগ ও বলবান্দিশ পর্বে যাওয়ার আগে তবলায় হাতেখড়ি নেন। পরবর্তী সময়ে ধ্রুপদী সংগীত খেয়াল শিক্ষায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৬৪ সালে বাবার মৃত্যুতে সংগীত প্রশিক্ষণে খানিক ছেদ পড়ে। পরে চাচা মুবারক আলী খান ও সালামত আলী খানের কাছে প্রশিক্ষণ নেন।
১৬ বছর বয়সে ফয়সালবাদে প্রথমবারের মতো জনসম্মুখে গান করেন। ১৯৭১ সালে পারিবারিক কাওয়ালি দলের প্রধানের দায়িত্ব নেন। এরপর কাওয়ালি দল নিয়ে প্রথমবারের মতো রেডিও পাকিস্তানের জাশন-ই-বাহারান নামের বার্ষিক সংগীত উৎসবে গান পরিবেশন করেন। তার বেশির ভাগ গান উর্দু ও পাঞ্জাবি ভাষায়। তবে ফারসি, ব্রজ ভাষা ও হিন্দিতেও গান করেছেন। পাকিস্তানে তার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘হক্ব আলী আলী’। এটি প্রচলিত একটি গান। প্রচলিত গায়কী ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার কিছু পরিবর্তন এনে তিনি গানটি পরিবেশন করেন।
১৯৮০-এর দশকে ইংল্যান্ডের ওরিয়েন্টাল স্টার এজেন্সির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তার গান ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিমা অনেক শিল্পীর সঙ্গে মিলে কাজ করেছেন তিনি। চল্লিশটির বেশি দেশে সংগীত পরিবেশন করেছেন। এ সময় তিনি বিশ্বের অসংখ্য বড় বড় সংগীত উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮৫ সালে পিটার গাব্রিয়েলের সঙ্গে মিলে ‘দ্য লাস্ট টেম্পটেশন অব ক্রাইস্ট’ ছবিতে কাজ করেন। ১৯৯০ সালে কানাডীয় সংগীতজ্ঞ মাইকেল ব্রুকের সঙ্গে ‘মাস্ত মাস্ত’ ও ১৯৯৬ সালে ‘নাইট সং’ অ্যালবামে কাজ করেন। ১৯৯৫ সালে ‘ডেড ম্যান ওয়াকিং’ এর সাউন্ডট্রাকে পার্ল জ্যামের প্রধান গায়ক এডি ভেডারের সঙ্গে কাজ করেন। এ আর রহমানের ‘বন্দে মাতেরম’ অ্যালবামে ‘গুরুস অব পিস’ গানে কন্ঠ দেন। এ ছাড়া আরও অনেকের সঙ্গে কাজ করেন। এ সব কাজে তিনি পশ্চিমা সংগীতের সঙ্গে কাওয়ালির অভূতপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটান। তিনি পাকিস্তানি ও ভারতীয় ছবিতে অনেক গান করেছেন। এ ছাড়া অন্য অনেকের গলায় তার গান ব্যবহৃত হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে অসংখ্য অডিও-ভিডিও অ্যালবাম। তার জনপ্রিয় কয়েকটি গান হলো- আল্লাহ হু, ইয়ে জো হালকা হালকা, মাস্ত মাস্ত, হক্ব আলী আলী, শাহবাজ কালান্দার, ইয়া হাইয়ু ইয়া কাইয়ুম, কিনা সোনা, মোরা সাইয়া, নি মাই জানা জোগি যে নীল এবং তুমহে দিল্লাগি ভুল জানি পড়েগি।
১৯৮৭ সালে পাকিস্তানি সংগীতে অবদানের জন্য প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে অ্যাওয়ার্ড ফর প্রাইড অব পারফরমেন্স গ্রহণ করেন। ১৯৯৫ সালে পান ইউনেস্কো মিউজিক প্রাইজ। ১৯৯৬ সালে মন্ট্রিয়েল ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে গ্রান্ড পিক্স ডেস আমেরিকাস পুরস্কার জিতেন। একই বছর পান ফুকুয়োকা এশিয়ান কালচারাল প্রাইজ। এ ছাড়া আরও অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। তার ওপর ৫টির মতো ডকুমেন্টারি নির্মিত হয়েছে।