নিজেদের স্বাধীনতা দিবসে গল টেস্টে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে গেছে ভারত। প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচে ভারতকে ৫৪ রানে হারিয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল শ্রীলঙ্কা। এভাবেও কেউ মুখ থুবড়ে পড়তে পারে! চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। কুমার সঙ্গককরার বিদায়ী টেস্টে তাকে অবিশ্বাস্য জয় উপহার দিলেন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটাররা। জয়ের নায়ক কে? বাছতে বসলে প্রথমেই উঠে আসবে দীনেশ চাণ্ডিমালের নাম। তিনি ম্যাচের নায়ক। যার দুরন্ত ব্যাটিংয়ের দৌলতে লড়াইয়ের রাস্তায় ফিরে এসেছিল শ্রীলঙ্কা। তার অপরাজিত ১৬২ রানের দৌলতে পাল্টা কামড় দেওয়ার জায়গায় চলে এসেছিল তারা। এবং আর একজনের কথা না বললে ম্যাচ রিপোর্টই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তিনি রঙ্গনা হেরাথ। যিনি কার্যত একাই শ্রীলঙ্কাকে জয়ের রাস্তায় নিয়ে গেলেন। তার বাঁ-হাতের স্পিনের ঘূর্ণিতে দিশেহারা হয়ে গেলেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। হেরাথ একাই তুলে নিলেন সাত-সাতটি উইকেট।
ভারতীয় দলের সামনে টার্গেট ছিল মাত্র ১৭৬ রান। কিন্ত্ত শ্রীলঙ্কান স্পিনারদের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিনে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা যে পারফরম্যান্সের নজির রাখলেন, তাকে ভয়ঙ্ককর, কুত্সিত ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। ভারতীয় দল বেআব্রূ হয়ে পড়ল হেরাথ-কৌশলের স্পিনের জাদুতে। মুথাইয়া মুরলীধরনের মতো স্পিনার এঞ্জেলো ম্যাথুজের হাতে ছিল না। কিন্ত্ত যারা আছেন, তারা যে খুব একটা কম নন, তা প্রমাণ করে দিলেন শনিবার। আগের দিন ভারত শেষ বেলায় ব্যাট করতে নেমে ১ উইকেট হারিয়ে করেছিল ২৩ রান। অপরাজিত ছিলেন ইশান্ত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান। খেলা হয়েছিল ৮ ওভার। এদিন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা খেললেন ৪১.৫ ওভার। অর্থাত্ মোট ৪৯.৫ ওভার। পুরো পঞ্চাশ ওভারও তাঁরা খেলতে পারলেন না। তার আগেই অল আউট মাত্র ১১২ রানে। কল্পনা করা যায়, ধারে-ভারে রীতিমতো ওজনদার ভারতীয় ব্যাটিং এদিন তুলেছে মাত্র ৮৯ রান।
কেন এই বিপর্যয়? অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস? না কি বিপক্ষকে তুচছতাচিছল্য করা? কোনওটাই অসম্ভব নয়। তুড়ি মেরে রান উঠে যাবে, এই মনোভাবই ভারতকে ডুবিয়েছে। একইসঙ্গে ডুবিয়েছে ম্যাচ প্র্যাকটিসের অভাব। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলেন শিখর ধাওয়ান। দ্বিতীয় ইনিংসে করলেন মাত্র ২৮। লোকেশ রাহুল দুই ইনিংসেই ব্যর্থ। চোখে লাগল রোহিত শর্মার আউট হওয়ার ধরন। গতকালের রানে সঙ্গে মাত্র ৭ রান যোগ করতেই না করতেই হেরাথের বলে এলবিডব্লু আউট হলেন ইশান্ত (১০)। তারপরই ফিরলেন রোহিত (৪)। হেরাথের বল বুঝতে না পেরে বোল্ড হলেন তিনি। বলের লাইনেই যেতে পারলেন না। বিরাট আউট হলে কৌশলের বলে। গোড়ালির সমান উচ্চতার বল ফ্লিক করতে গিয়ে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে দুরন্ত ক্যাচ ধরলেন সিলভা। আম্পায়ার বুঝতে পারেননি। ভারত অধিনায়ক নিজেই বেরিয়ে যান ক্রিজ ছেড়ে। ধাওয়ানকে নিজের বলেই ক্যাচ ধরে আউট করলেন কৌশল।
আর ঋদ্ধিমান সাহা। ৫ বোলার নিয়ে খেললে উইকেটরক্ষকের ভূমিকা রীতিমতো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তাঁকেই ষষ্ঠ ব্যাটসম্যানের কাজটা করতে হয়। তিনি যখন নামলেন ভারত তখন রীতিমতো কোণঠাসা। এই পরিস্হিতিতে তিনি যদি ধৈর্য ধরে দলকে টেনে নিয়ে যেতেন, তা হলে নিজের ভবিষ্যত্ অনেকটাই সুরক্ষিত করতে পারতেন। কিন্ত্ত হেরাথকে স্টেপ আউট করতে গেলেন অযথা। স্টাম্প আউট হলেন। করলেন মাত্র ২ রান। বাংলার উইকেটরক্ষককে বুঝতে হবে, তিনি ধোনির জুতোয় পা গলিয়েছেন। দল তার কাছে বড় ইনিংস চায়।
এরপর শুধুই যাওয়া আসার খেলা। হরভজন সিং (১), রবিচন্দ্রন অশ্বিন (৩) সবাইকেই তুলে নিলেন হেরাথ। শেষ বেলায় অজিঙ্ক রাহানে (৩৬) একটা চেষ্টা করেছিলেন। কিন্ত্ত উল্টোদিকে কেউ সাহায্যই করতে পারলেন না। আর একটা কথা। খেলা শুরুর আগে ৬৯তম স্বাধীনতা দিবসে গল-এ জাতীয় পতাকা তুললেন রবি শাস্ত্রী। ক্রিকেটাররা গাইলেন জাতীয় সংগীত। ভারত অধিনায়ক স্বাধীনতা দিবসে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন টুইটারে। সবই হল, বাইশ গজে ক্রিকেটারদের মধ্যে কিন্ত্ত জাতীয়তাবোধের ছিটেফোঁটাও দেখা গেল না।