যথাযোগ্য মর্যাদায় শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল- সকল ভবন ও হলে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও কালো পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, আলোচনা সভা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা প্রভৃতি।
এ উপলক্ষে সকালে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মের উপর এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোঃ কামাল উদ্দীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ আলী আকবর, বঙ্গবন্ধু সমাজকল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন শেখ, মুক্তিযোদ্ধা প্রাতিষ্ঠানিক কমান্ড ইউনিটের সদস্য প্রকৌশলী মফিজুল ইসলাম, কর্মচারী সমিতির সভাপতি মো. রেজাউল ইসলাম, কারিগরি কর্মচারী সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক, চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি শাজাহান পাটোয়ারী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমান অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন ।
ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, “১৯৭৫ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমনের কথা ছিল। সেদিন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার আর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা হয় নি। এর আগেই ঘাতকদের নির্মম বুলেটে তাঁকে শাহাদাৎ বরণ করতে হয়।”
ভিসি বঙ্গবন্ধুকে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসাবে বর্ণনা করে বলেন, “অভিধানে যত ভালো গুণ আছে, সবকিছুরই অধিকারী ছিলেন তিনি। তিনি শিক্ষকদের অত্যন্ত সম্মান করতেন। সবাইকে ‘তুই’ বলে সম্বোধন করলেও একজন তরুণ শিক্ষককেও ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করতেন। তিনি অত্যন্ত সৎ, উদার ও সাহসী ছিলেন। সাধারণ মানুষের ভাগোন্নয়নের সংগ্রামে তিনি মৃত্যু, জেল, জুলুমকে কখনও ভয় পান নি। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ কালরাতে তিনি বাসায় অবস্থান করছিলেন। আজীবন তিনি আভিজাত্য নিয়ে রাজনীতি করেছেন। ঘাতকদের বুলেটের সামনেও তিনি অবিচল ছিলেন। এই আভিজাত্য নিয়েই তিনি মৃত্যুকে আলিঙ্গণ করেন।”
ভিসি বলেন, “বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তৎকালীন জার্মান চ্যান্সেলর বাঙালি জাতিকে বিশ্বাসঘাতকের জাতি হিসাবে আখ্যা দিয়েছিলেন।” তিনি বিশ্বাসঘাতকের এই অভিধা থেকে মুক্তি পেতে এবং কৃতজ্ঞ জাতি হিসাবে নিজেদের প্রমাণ করতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
আলোচনা সভা শেষে ‘আরাধ্য বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়। পরে ভিসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপন করেন। এর আগে টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া, বাদ যোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদসহ প্রত্যেক হল ও আবাসিক এলাকার মসজিদে দোয়া মাহফিল এবং বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।