১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট খুনি ফারুক-রশীদ-ডালিমরা ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে যে ট্যাংক নিয়ে ধানমণ্ডিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বাড়ির নিরাপত্তা বাহিনীকে এবং সাভারে রক্ষীবাহিনীকে আতংকিত ও ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলেছিল, সেগুলো যে ভুয়া ট্যাংক ছিল, তাতে যে কোনো গোলা ছিল না, সে তথ্য রক্ষীবাহিনী বা সেনাবাহিনীর কেউ জানত না। জানতেন মাত্র চারজন- সেনাবাহিনী প্রধান, উপ-প্রধান, সিজিএস ও ডিজিএফআই। যাদের একজন ছাড়া সবাই শেখ মুজিবের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন। এমনকি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ফোর্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিজিএসকে ৩২ নম্বরে অবস্থিত বিদ্রোহী বাহিনীকে আক্রমণ করার জন্য আর্মি চিফ জেনারেল শফিউল্লাহ যখন অর্ডার দেন, তখন কর্নেল শাফায়াত জামিলকে নিয়ে তার ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ফোর্সসহ সিজিএস ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ শেরেবাংলা নগর ঘুরে এসে বলেন, ওদের হাতে সুপিরিয়র আর্মস অ্যামিউনিশন্স আছে বিধায় তাদের আক্রমণ করে পরাজিত করা সম্ভব নয়। আর্মি কোড ‘ডু আর ডাই’-এর কথা কীভাবে তারা ভুলে গেলেন? নাকি তারা সংবিধানকে ভুলে গেছেন?
যে আত্মঘাতী ও উচ্চাভিলাষী পথ সেদিন তারা বেছে নেন, সেই পথেই পরবর্তী সময়ে একে একে তাদের সব অপমৃত্যু ঘটে। সেনাবাহিনীর গৌরবময় অফিসার পদে যোগদানকালে দেশের সংবিধান ও রাষ্ট্রপতিকে রক্ষায় তারা জীবন উৎসর্গ করতে সদা প্রস্তুত মর্মে পবিত্র কোরআন শরিফ ছুঁয়ে যে শপথ বাক্য উচ্চারণ করেছেন, তা ১৫ আগস্টে তারা কার ইঙ্গিতে বিস্মৃত হয়ে গেলেন? অপরদিকে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত রুখতে বঙ্গবন্ধুর এমএসপি কর্নেল জামিলকে ডিজিএফআই পদে নিয়োগ দান করা হলেও তদানীন্তন ডিজিএফআই কর্নেল আবদুর রউফ তাকে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিতে গড়িমসি করেন এবং সময়ক্ষেপণ করে খুনিদের ষড়যন্ত্র দ্রুত এগিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন। এমনকি কর্নেল জামিল তার নতুন পদে যোগদান উপলক্ষে ঢাকার বিদেশী দূতাবাসগুলোয় কর্মরত ডিফেন্স এটাশেদের নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েও সে আমন্ত্রণপত্র প্রত্যাহার করে নেন। কারণ তখনও তিনি দায়িত্ব পাননি। তদানীন্তন ডিজিএফআই কর্নেল আবদুর রউফ নানা অজুহাতে তার দায়িত্ব হস্তান্তরে কয়েক সপ্তাহ বিলম্ব করেন। এক অজুহাত দেখিয়ে তিনি ছুটি নেন এবং বিদেশ গমন করেন। বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত গোপালগঞ্জের কর্নেল জামিলের কাছে যথাসময়ে, এমনকি বঙ্গবন্ধু হত্যার দু’-একদিন আগেও কর্নেল রউফ ডিজিএফআইয়ের দায়িত্ব কর্নেল জামিলের হাতে তুলে দিলে খুনিদের সব ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যেত এবং খুনিরা ফায়ারিং স্কোয়াডে গুলিবিদ্ধ হয়ে তাদের প্রাপ্য পেয়ে যেত। ডিজিএফআই কর্নেল আবদুর রউফ নানা টালবাহানা ও ছল-ছুতা করে দু’-তিন সপ্তাহের বেশি তার বদলি আদেশের বাস্তবায়ন বিলম্বিত করেন এবং বিদেশে অবস্থান করতে থাকেন। এ অস্বাভাবিক বিলম্বের প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের চক্রান্ত দ্রুততর করার এবং তা এগিয়ে আনার প্রস্তুতিতে কর্নেল রউফ প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখেন। অতঃপর যেদিন অর্থাৎ ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট বিকালে তিনি যখন ডিজিএফআইয়ের দায়িত্ব কর্নেল জামিলের হাতে হস্তান্তর করেন, তখন তিনি ১০০ ভাগ নিশ্চিত ছিলেন যে, কর্নেল জামিল ডিজিএফআইয়ের network of intelligence and counter-intelligence তার হাতের মুঠোয় নেয়ার সময় পাবেন না। পরিণতিতে ১৫ আগস্টের সূর্যের মুখ দেখার আগেই অর্থাৎ তার দায়িত্ব হস্তান্তরের ১০ ঘণ্টার মাথায় রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হবেন।
ডিজিএফআইয়ের ইন্টেলিজেন্সের ৬০ জন এবং কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্সের ৬০ জন ধুরন্ধর গোয়েন্দা ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে-বাইরে এবং ঢাকার স্পর্শকাতর স্থানে ও অবস্থানে ২৪ ঘণ্টা ধরে তিন ভাগে ডিউটি করে। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে ১৫ আগস্ট রাতে ৮টি ট্যাংক বেরিয়ে গেল, আর তারা সব চোখে ঠুলি পরেছিল বলে ডিজিএফআই আবদুর রউফের কোনো অফিসার তা দেখতে পায়নি বললে কোনো ‘কানা বগির ছা’ও তা বিশ্বাস করবে না। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অন্যতম সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ পদের বদলি আদেশ, বিশেষ করে ডিজিএফআইয়ের মতো চরম স্পর্শকাতর পদের বদলি আদেশ নানা ছল-ছুতায় অমান্য করার ও অস্বাভাবিক সময়ক্ষেপণের বিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী ও সেনাবাহিনী প্রধান, উপ-সেনাবাহিনী প্রধান এবং আর্মি এইচকিউ উদাসীন হয়েছিলেন ও উপেক্ষা করেছিলেন। এভাবে তাদের সবার বিশ্বাসঘাতকতায় ১৫ আগস্ট সকালে চিফ অব স্টাফের হেডকোয়ার্টারের কমান্ড ভেঙে পড়ে।
সিজিএস জেনারেল খালেদ মোশাররফ ও ৪৬ ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার কর্নেল শাফায়াত জামিলকে (যার অধীনে তিনটি ব্যাটালিয়ন নিয়োজিত ছিল) দেয়া আর্মি চিফের অর্ডার ‘attack & destroy the killers of the President’ আদেশ তামিল না করে ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে আর্মি চিফ জেনারেল শফিউল্লাহ কমান্ড নিজের হাতে তুলে নিতে পারতেন। কিন্তু তার আদেশ তামিল করার মতো কাউকে চারপাশে পাননি। এ বিষয়ে তিনি আমাকে বলেছেন, ‘সেদিন আমার চারপাশের বিশ্বাসঘাতকদের বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছিলাম আমি। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার সংবাদ নিশ্চিত হয়ে আমার চারপাশের সবাই খুনিদের পক্ষে চলে যায়। তাদের সবার বিশ্বাসঘাতকতায় আর্মি এইচকিউর ক্ষমতা সিস্ড হয়ে যায়।
১৫ আগস্টে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যে চক্রান্তের বীজ বপন করা হয়েছিল, সেই ষড়যন্ত্রের গুপ্তকথা জানতে আমি ’৯৪ সালে এক সরকারি কাজে চট্টগ্রামে যাই। বঙ্গবন্ধুর তদানীন্তন প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে ’৯৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর তার জামাল খান রোডের বাসায় সাক্ষাৎ করি। তিনি প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী থাকতে যখন ঢাকায় ৩ নম্বর মিন্টো রোডের বাসায় থাকতেন, তখন তার একান্ত সচিব আমার বন্ধু অধ্যাপক সুরঞ্জন সেনের সঙ্গে বহুবার তার বাসায় গিয়েছি। তার জামাল খান রোডের বাসায় ওই সাক্ষাৎকারের সময় তার পুত্র ডা. মঈনুল ইসলাম চৌধুরীসহ তাদের পরিবারের আরও লোকজন উপস্থিত ছিলেন এবং অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরী লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত ছিলেন। চট্টগ্রামে তার বাড়িতে অসুস্থ অবস্থায় শুয়ে শুয়ে দেয়া সাক্ষাৎকারে সেই ১৫ আগস্টের ট্রাজেডির অজানা রহস্যের পর্দা তিনি উন্মোচন করেছিলেন, যা বাঙালি জাতির কাছে শত-সহস্র বছর ধরে কারবালার চেয়েও ভয়াবহ নিষ্ঠুর ট্রাজেডি হিসেবে গণ্য হয়ে থাকবে। বিষাদ সিন্ধুর কবি মশাররফ হোসেন অথবা মেঘনাদবধ মহাকাব্যের রচয়িতা কবি মাইকেল মধুসূদন যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে তারা ১৫ আগস্ট নিয়ে ট্রাজিক মহাকাব্য রচনা করতেন এবং শত-সহস্র বর্ষ ধরে বিশ্বব্যাপী বাঙালি ভাই-বোনেরা ১৫ আগস্টে বুক চাপড়ে মহররমের মতো মাতম করতেন।
বেডে শুয়ে দেয়া সাক্ষাৎকারের প্রথমে জনাব চৌধুরী খুব আবেগতাড়িত হয়ে গেলেন। তার দু’চোখের কোনা গড়িয়ে অবিরত ধারায় ফোঁটা ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল। প্রায় ৫-৭ মিনিট তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে থাকলেন। তারপর ধীরে ধীরে উন্মোচন করলেন ১৫ আগস্টের সেই খলনায়কদের আসল চেহারা। যে চেহারা দেশবাসী কখনও দেখতে পায়নি। তিনি প্রথমে বললেন, ‘আপন স্নেহে বঙ্গবন্ধু আমাকে সব মন্ত্রণালয়ের চেয়ে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছিলেন, আমার নৈতিক সততার ওপর বিরাট আস্থা রেখে।’ তিনি বারবার বাকরুদ্ধ কণ্ঠে চোখের পানি মুছতে মুছতে বললেন, বঙ্গবন্ধুকে আমরা রক্ষা করতে পারিনি, এর দায়-দায়িত্ব শফিউল্লাহ, সেনাবাহিনী, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর চেয়ে আমার সবচেয়ে বেশি ছিল। সব হারিয়ে, বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে আমরা যখন সর্বহারা হয়ে গেলাম, তখন বুঝলাম রাষ্ট্রনীতিতে কাউকে সহজে বিশ্বাস করতে নেই। বঙ্গবন্ধু আগস্টের প্রথম সপ্তাহে এই হুশিয়ারি ঠিকই দিয়েছিলেন। কিন্তু আমার অ্যাসেসমেন্টে মারাত্মক ভুল হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর অ্যাসেসমেন্ট সঠিক ছিল। বঙ্গবন্ধু খবর পাচ্ছিলেন এবং আমিও খবর পাচ্ছিলাম যে, সেনাবাহিনীর ভেতরে বিচ্ছিন্ন কিছু ষড়যন্ত্র চলছে। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন এবং তাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর শীর্ষের দু’-একজন এ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আমাদের কয়েকটি বন্ধু রাষ্ট্রের গোয়েন্দারাও সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আমাদের বারবার সতর্ক করছিল। কিন্তু সন্তানতুল্যরা কেউ যে পিতার প্রাণ বধ করবে, এটা বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাসই হতো না। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর সামনে আমাকে উদ্দেশ করে বলেছেন, স্যার, বঙ্গবন্ধুর গায়ে আঁচড় লাগার আগে আমার বুক বুলেটে ঝাঁজরা করতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি সøেহে তাকে বুকে টেনে নিয়ে সন্তানের মতো আদর করতে। শেখ কামাল, জামালের মতো আদর করতে। আর আজ যখন পেছনের দিকে তাকাই, তখন ভাবি, কত বড় ভুল হয়ে গেছে!
’৭৫-এর মার্চে এসে বঙ্গবন্ধুর মুখ্য সচিব আমার মামা রুহুল কুদ্দুস প্রথমবারের মতো আকস্মিকভাবে জানতে পারলেন, সেনাবাহিনীর একটি চক্র দেশের রাষ্ট্রপতির টেলিফোনে গোপনে আড়ি পাতছে এবং তার সব কথাবার্তা ও গোপন আদেশ-নিষেধ গোপনে জেনে যাচ্ছে। দেশের রাষ্ট্রপতির কার্যক্রমের ওপর বিনা অনুমতিতে গোপন তৎপরতা চালানো দেশদ্রোহিতা ও সংবিধানের মারাত্মক লংঘন। এটা জানার পর তিনি বিস্মিত হয়ে গেলেন। তিনি প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক নুরুল ইসলামের সঙ্গে গোপনে সাক্ষাৎ করে জানতে চাইলেন আর্মির এ তৎপরতার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন কি-না। অথবা তার কোনো অনুমোদন এতে আছে কি-না? তিনিও বিস্মিত হয়ে গেলেন। তখন রুহুল কুদ্দুস তাকে এ বিষয়ে কোথাও মুখ না খোলার জন্য বললেন এবং এ বিষয়ে তিনি যে তার সঙ্গে কথা বলেছেন, সে বিষয়েও দ্বিতীয় কারও সঙ্গে আলোচনা না করার জন্য বললেন। এ বিষয়ে তিনি আমাকে তার স্ত্রী হামিদা কুদ্দুস, তার পুত্র (শেখ হাসিনার সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা) এহসানুল আমিন বাবুর সামনে বলেছেন, ‘অতঃপর আমি বঙ্গভবনে বঙ্গবন্ধুর অফিসে গিয়ে তার কক্ষে উপস্থিত তাহেরউদ্দীন ঠাকুর ও অন্যদের সরিয়ে দিয়ে সব ঘটনা বললাম। তিনি আমার দিকে কিছুক্ষণ নির্বাক তাকিয়ে রইলেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি সেনাবাহিনীকে আপনার টেলিফোন বাগিং (আড়িপাতার) করার জন্য বলেছেন? নাকি তারা আপনার অনুমতি নিয়ে এ কাজ করেছে? সরলপ্রাণ বঙ্গবন্ধু হেসে বললেন, ‘এমন কোনো অনুমতি আমি কাউকে দেইনি। তবে তোমাদের সবকিছুতে সন্দেহ। তারা আমার সন্তান। তারা এসব নিশ্চয়ই আমার ভালোর জন্য করেছে।’
বঙ্গবন্ধুর হিমালয়সম বিশ্বাস ছিল, কোনো বাঙালি কোনোদিন তাকে হত্যা করবে না। বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিকে ভালোবেসে তিনি তার জীবন-যৌবন, ধন-মান, সাধ-আহ্লাদ সব কারাগারের অন্ধকারে বিসর্জন দিয়েছেন। তার প্রিয় জীবনের চেয়েও প্রিয়তম বাঙালি জাতির জন্য বারবার হাসিমুখে দৃপ্ত পায়ে ফাঁসির মঞ্চে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। বছরের পর বছর কারাগারের অসীম অন্ধকারে বিনিদ্র রজনী তার কেটে গেছে, প্রিয় সন্তানদের চেহারা এক পলক দেখার সৌভাগ্য হয়নি। মুক্তিদূত মুজিব ১৯৭১ সালে হাজার বছরের শৃংখলিত বাঙালি জাতির শৃংখল টুটে দিয়ে বাঙালি জাতিকে আজাদ করে দিয়েছেন এবং তাদের বসবাসের জন্য বিশ্বের বুকে ‘বাংলাদেশ’ নামে স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি দেশ তাদের উপহার দিয়েছেন, যেখানে গত ৬০ বছর যুদ্ধরত ফিলিস্তিনিদের ও কাশ্মীরিদের একটি স্বাধীন দেশ হয়নি।
১৪ আগস্ট রাত ১২টায় যখন ডিজিএফআইয়ের তদানীন্তন পরিচালক গোপালগঞ্জের অধিবাসী স্কোয়াড্রন লিডার আজিজ বঙ্গবন্ধুকে ঘুম থেকে তুলে তার অনুমতি প্রার্থনা করে বললেন, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে খুব সন্দেহপূর্ণ কিছু ঘটনা ঘটছে বলে আমরা ক্যান্টনমেন্ট সিলগালা করে দিতে চাই। সেই অটল বিশ্বাসে বঙ্গবন্ধু তার মাথায় স্নেহমাখা হাতের পরশ বুলিয়ে বললেন, ‘তুই খেয়েছিস? না খেয়ে থাকলে কামালের মাকে ডেকে তুলি, কিছু খেয়ে নে। … ওরে আমাকে কেউ মারবে না। তোর মতো একই রকম কথা রোজ রাতে শুনে আমি ঘুমাতে যাই। আবার সকালে ঘুম ভেঙে উঠে দেখি আমি বেঁচে আছি। তোর কাছে একই কথা শুনলাম। এখন ঘুমাতে যা। কাল সকালে আসিস। তোর সাথে বসে সজনে ফুলের ভাজি দিয়ে একসাথে নাশতা খাব।’
স্কোয়াড্রন লিডার আজিজের অসীম দুঃখ যে, তিনি খুনিদের প্রতিরোধে ব্যর্থ হন বলে তাকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ১৫ আগস্ট সকালে সজনে ফুলের নাশতা খাবার শেষ ইচ্ছা পূরণ হয়নি! (সংক্ষেপিত)