কোথাও নেই তিনি। না হাই পারফরমেন্স (এইচপি) স্কোয়াডে, না ‘প্লেয়ার্স অব ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট’ (পনি) গ্রুপে। তবু কোচ সারওয়ার ইমরানকে অনুরোধ করে ‘পনি’তে বোলিং করার সুযোগ মিলছিল সোহাগ গাজীর। কিন্তু কাল যে জাতীয় দলে ব্রাত্য হয়ে পড়া আরেক স্পিনার এনামুল হকের সঙ্গে তাকেও সেখানে বোলিং করতে দেওয়া হলো না! পনির অনুশীলনে এই দুজনের হাত থেকে বল কেড়ে নেওয়া হয় একরকম। দুঃখ-অপমানে কান্নাভেজা চোখে একাডেমির মাঠ ছাড়েন বাংলাদেশ জাতীয় দলের অনেক জয়ের নায়ক এনামুল ও সোহাগ।
বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ের কারিগর এনামুল অনেক দিন ধরেই হিসাবের বাইরে। জাতীয় দলে সর্বশেষ খেলেছেন প্রায় আড়াই বছর আগে। সোহাগ সর্বশেষ সিরিজে একটি টি-টোয়েন্টি খেললেও তাকে যেন খরচের খাতায় ফেলা হয়েছে এরই মধ্যে। পনিতে তাও একরকম ‘নেট বোলার’ হিসেবে বোলিং অনুশীলনের সুযোগ করে নিয়েছিলেন।
মিঠুন আলীর বিপক্ষে বোলিং করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এই অফস্পিনার। পনিতে থাকা আল-আমিন হোসেন, রবিউল ইসলাম, আরাফাত সানি ও নাঈম ইসলামের সঙ্গে এই প্রোগ্রামের বাইরের সোহাগ ও এনামুলের হাতে বল তুলে দেন কোচ ইমরান। তখনই বিদেশি কোচিং স্টাফ থেকে নির্দেশনা আসে ওই দুজনকে বাদ দেওয়ার, যেন আরো ভালো করে পনির বোলারদের পরখ করতে পারেন কোচ। ‘এটি কী হলো! জাতীয় দলে এত দিন খেললাম, তার এই পুরস্কার!’- সতীর্থ সোহাগকে এমনটাই বলেন এনামুল। এরপর মন খারাপ করে বেরিয়ে যান একাডেমির মাঠ থেকে।
কোচ ইমরান ব্যাপারটি বুঝে পরে ফোন করে ডাকান দুজনকে। ‘এত মাইন্ড করলে কি চলে’- বলে তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু মন কি আর ভালো হয় তাতে! বাস্তবতা মানলেও ব্যাপারটি মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে সোহাগের, ‘এটি বুঝি যে, ওই প্রোগ্রামের ক্রিকেটারদেরই প্রাধান্য দেওয়া হবে। আর বিদেশি কোচ না হলে আমাদের সঙ্গে এমনটা করা হতো না। কিন্তু তবু যখন মনে হয়, আমাদের হাত থেকে বলটা কেড়ে নেওয়া হয়, তখন কষ্ট লাগে খুব।’ জাতীয় দলে আবার নিজের সহজাত সেরাতে প্রত্যাবর্তনের সিঁড়ি না পেয়ে হতাশাও পেয়ে বসে তাকে, ‘একটা প্লাটফর্ম না পেলে কিভাবে কী করব! একটা প্রোগ্রামের মধ্যে না থাকলে নিজেকে তৈরি করা কঠিন খুব। আমি কিংবা এনাম ভাই, রাজ ভাইদের মতো অনেকেই আছেন, যাঁদের হয়তো পনির মতো প্রোগ্রামে রাখলে আমরা উপকৃত হতাম।’
সপ্তাহখানেক আগে এই প্রোগ্রাম শুরু হয় আল-আমিন, রবিউল, শফিউল, আরাফাত সানি, শুভাগত হোম ও মিঠুনকে নিয়ে। পরে তাতে যোগ করা হয় নাঈম ইসলামকে। এইচপি-র জেনারেল ম্যানেজার স্টুয়ার্ট কার্পিনেনের কাছে গিয়ে এই ব্যাটসম্যান অনুরোধ জানানোর পর অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাঁকে। কিন্তু সোহাগের মতো আরো অনেকে থেকে গেছেন উপেক্ষিত।
কারণ হিসেবে অবশ্য এইচপির কোচদের ওপর অতিরিক্ত চাপের কথাই বললেন নির্বাচক হাবিবুল বাশার, ‘এইচপি স্কোয়াডে তো অনেক ক্রিকেটার। সঙ্গে পনিতে আরো ১৫-২০ রাখলে কোচরা এতজনের সঙ্গে কাজ করবে কিভাবে? সে কারণে এখানে খুব বেশি ক্রিকেটার আমরা নিইনি।’ এইচপি ও পনির ক্রিকেটাররা বিসিবি একাডেমির আবাসনসহ সব সুবিধার আওতাধীন। আবাসনের সীমাবদ্ধতার কারণেও পনিতে বেশি ক্রিকেটার নেওয়া সম্ভব নয় বলে জানা গেছে। আর এই প্রোগ্রামে খেলোয়াড় সংখ্যা বাড়ানোর পক্ষপাতী নন বিসিবি একাডেমির ডিরেক্টর অব কোচিং পল টেরি, ‘সংখ্যা বাড়লেই যে মান বাড়বে, আমার তা মনে হয় না।’
তবে সোহাগের মতো ক্রিকেটারদের সামনে সব দরজা বন্ধ হয়ে গেছে বলে মনে করেন না নির্বাচকরা। সামনে আরো সুযোগ আসবে বলে কাল দাবি করলেন হাবিবুল, ‘এইচপির প্রোগ্রাম শেষে স্পিন বোলিং ক্যাম্প হবে। সেখানে সোহাগকে নিশ্চয়ই ডাকা হবে। আর পনিতে আমরা চেয়েছি মূলত পেসারদের রাখতে। জাতীয় দলের নিকট ভবিষ্যতের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে সেটি করা হয়েছে।