আগামী ১৫ই আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে রাজনৈতিক নেতাদের ব্যানারে-ফেস্টুনে ভরে উঠেছে রাজশাহী। এদের সঙ্গে যোগ হয়েছেন জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার শীর্ষ হেরোইন ব্যবসায়ী শীশ মোহাম্মদ ও। রাজশাহী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ব্যানারে মহানগরীর প্রায় সব এলাকায় শীর্ষ এই মাদক ব্যবসায়ীর ব্যানার-ফেস্টুন শোভা পাচ্ছে। এতে রাজশাহীর আওয়ামীলীগ নেতাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।
গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আবু ফরহাদ জানিয়েছেন, শীশ মোহাম্মদ ওরফে শীশু গোদাগাড়ী উপজেলার সবচেয়ে বড় হেরোইন ব্যবসায়ী। থানায় মাদক ব্যবসায়ীদের যে তালিকা আছে তাতে শীশুর নামই প্রথমে আছে। তার নামে গোদাগাড়ী সহ দেশের বিভিন্ন থানায় অন্তত এক ডজন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলা আছে। চলমান আছে একটি অস্ত্র মামলা ও। এসব মামলায় কমপক্ষে ৫ বার পুলিশ তাকে আটক করেছে। সর্বশেষ গত বছরের ৩০ অক্টোবর ২শ গ্রাম হেরোইন সহ তাকে গোদাগাড়ী থানা পুলিশ আটক করেছিল। এরপর চলতি বছরের মার্চে তিনি আদালতে জামিন পেয়েছেন। হেরোইন সহ আটকের পর তার ব্যবহৃত এলিয়েন প্রাইভেটকারটি এখনো গোদাগাড়ী থানা চত্বরে পড়ে আছে। শীশ মোহাম্মদের ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, একের পর এক মাদকের মামলায় জড়িয়ে বেকায়দায় পড়ে শীশ মোহাম্মদ এখন সরকারী দলের নেতাদের পালে নাও ভেড়ানোর চেষ্টা করছেন। এ জন্যই অত্যন্ত সুকৌশলে তিনি ব্যানারে-ফেস্টুনে জাতীয় শোক দিবসের প্রচারণা চালাচ্ছেন।
শীশ মোহাম্মদের সাঁটানো ব্যানার-ফেস্টুনে শুধু লেখা আছে ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস। এ ছাড়া ফেস্টুনের নিচের অংশে তার নাম লেখা আছে। নামের নিচে লেখা আছে ‘রাজশাহী মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ। তবে শীশ মোহাম্মদ নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কোনো পদে আছেন কি না সে ব্যাপারে কিছু লেখা হয়নি।
এ ব্যাপারে কথা বলতে আজ বৃহস্পতিবার দিনভর শীশ মোহাম্মদের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ও সংযোগ পাওয়া যায়নি। ফেসবুকে বার্তা পাঠিয়ে ও তার কোনো সাড়া মেলেনি। জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জেডু সরকার বলেন, ‘শীশ মোহাম্মদ বর্তমান আ’লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই স্বেচ্ছাসেবক লীগে সক্রিয় হয়েছেন। তিনি নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের একজন সদস্য। নগর আ’লীগের একজন সহ-সভাপতির সঙ্গে তার বেশ সখ্যতাও আছে। এ জন্যই তিনি জাতীয় শোক দিবসের ব্যানার-ফেস্টুন সাঁটিয়েছেন’ গোদাগাড়ী থানায় মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকায় তার নাম এক নম্বরে থাকার বিষয়টি তাকে মনে করিয়ে দিলে জেডু সরকার বলেন, ‘কক্সবাজারের একজন এমপির নামে ও তো ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগ আছে। তাতে কি আসে যায়? রাজনীতিতে সমালোচনা থাকবেই। পেপারে লিখে কোনো লাভ নাই।’
তবে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নগর আওয়ামীলীগের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, শীশ মোহাম্মদের এখন অনেক টাকা। মাদক ব্যবসার সুবিধা নিতেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন। বর্তমানে রাজনীতির পেছনে তিনি দুহাতে টাকা ওড়াচ্ছেন। নগর আ’লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের অনেক নেতাই তার কাছ থেকে সুবিধা আদায় করে নিচ্ছেন। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গোদাগাড়ীর আলোচিত এই হেরোইন ব্যবসায়ীর জন্ম চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দুর্গম চর আলাতুলির কোদালকাটি এলাকায়। তার বাবার নাম ইসরাইল হোসেন। সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামে তার বাড়ি হওয়ার সুবাদে প্রায় ১৫ বছর আগে তিনি ভারত থেকে হেরোইন আমদানীতে জড়িয়ে পড়েন। এরপর দিনে দিনে তিনি হয়ে ওঠেন গোদাগাড়ীর শীর্ষ হেরোইন ব্যবসায়ী। ওই সময় গোদাগাড়ী এলাকায় একচেটিয়ে হেরোইন ব্যবসা করে অবৈধ পথে তিনি কোটি কোটি টাকা কামায় করেন। তারপর গোদাগাড়ীর গড়ের মাঠ এলাকায় জমি কিনে নির্মাণ করেন একটি বিলাসবহুল বাড়ি। রাজশাহী নগরীর সিটি ভবনের পশ্চিমে সান-ডায়াল কোচিং সেন্টারের উত্তরে বানিয়েছেন আরো একটি চারতলা বাড়ি। কয়েক বছর ধরে তিনি সেখানেই বসবাস করছেন। তবে হেরোইনের চালান আনা-নেওয়ার খোঁজ খবর রাখতে তিনি এখনো গোদাগাড়ী যান। গত বছরের অক্টোবরে গোদাগাড়ীতে হেরোইন সহ তাকে আটক ও করেছিল পুলিশ।
এর আগে ২০০৭ সালের ১০ এপ্রিল একটি বিদেশী পিস্তল ও ২শ গ্রাম হেরোইন সহ গোদাগাড়ী পৌরসভার মহিষালবাড়ি এলাকায় শীশ মোহাম্মদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। এখনো পর্যন্ত তিনি কমপক্ষে ৭ বার আটক হয়ে কারাভোগ করেছেন। তবে প্রতিবারই তিনি জামিনে বেরিয়ে হেরোইন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, চর আলাতুলিতে শীশ মোহাম্মদের হেরোইন ব্যবসা পরিচালনায় সহযোগীতা করেন তার চাচা সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান খোঁয়াজ আলী। কয়েক বছর আগে তিনিও অস্ত্র, হেরোইন ও জাল টাকা সহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। বর্তমানে ঢাকায় বসে শীশ মোহাম্মদের হেরোইনের খদ্দের খুঁজে দেন তারই চাচাতো ভাই হুমায়ুন কবীর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শীশ মোহাম্মদ ওরফে শিশুর বাবা ইসরাইল হোসেন চর আলাতুলি ইউনিয়ন বিএনপির একজন নেতা। শিশুও এক সময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে প্রতিপক্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে তার একের পর এক হেরোইনের চালান আটক হতে থাকায় তিনি রাজশাহী নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ছত্রছায়ায় যাওয়ার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী মহানগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের মুঠোফোনে কয়েকদফা ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।
গোদাগাড়ীতে সাংবাদিকদের সাথে বারসিকের মত বিনিময়
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীদের সাথে মত বিনিময় করেছে বেসরকারী গবেষণা সংস্থা বারসিক। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়ন পরিষদ হলরুমে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মাটিকাটা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম। সভায় বারসিকের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন সংস্থাটির রাজশাহী অঞ্চলের এলাকা সমন্বয়কারী জাহিদ আলী।
মত বিনিময় সভায় গোদাগাড়ী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আলমগীর কবির তোতা, সাধারণ সম্পাদক জামিল আহমেদ, পৌর প্রেসক্লাবের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, গোদাগাড়ী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী, স্থানীয় সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম ও রিমন রহমান সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীরা অংশ নেন। ছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, সংরক্ষিত নারী সদস্য ও বারসিকের ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড ওয়াচ গ্রুপের সদস্যরা।
সভায় স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভবনা এবং এসব ক্ষেত্রে বেসরকারী সংস্থা ও সাংবাদিকদের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সময় বারসিকের কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম ও গোদাগাড়ীর প্রোগ্রাম ফিল্ড ফ্যাসিলিটেটর এনামুল হক উপস্থিত ছিলেন।
গোদাগাড়ীতে বিপুল পরিমাণ জন্ম নিরোধক বড়ি উদ্ধার
রাজশাহীর গোদাগাড়ী সীমান্তে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ জন্ম নিরোধক ‘সুখি’ বড়ি উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে গোদাগাড়ী উপজেলার ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন চর আষাড়িয়াদহ গ্রামের একটি বাড়ির পেছন থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় সেগুলো উদ্ধার করা হয়। তবে এ সময় কাউকে আটক করতে পারেনি বিজিবি।
৩৭ বিজিবির গোদাগাড়ীর সাহেবনগর সীমান্ত ফাঁড়ির নায়েক সুবেদার আকরাম হোসেন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফাঁড়ির হাবিলদার আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে বিজিবির একটি দল চর আষাড়িয়াদহ গ্রামে অভিযান চালায়। এ সময় একটি বাড়ির পেছন থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় তিন বস্তায় ১৮ হাজার ৭শ পাতা ‘সুখি’ বড়ি উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক মূল্য ৯ লাখ ৩৫ হাজার ৪০ টাকা।
তিনি আরো জানান, বিপুল পরিমাণ এসব বড়ি ভারতে পাচারের জন্য সীমান্ত এলাকার গ্রামে মজুদ করে রাখা হয়েছিল। উদ্ধার হওয়া এসব বড়ি কাষ্টম বিভাগে জমা দেওয়া হবে। এ ঘটনায় গোদাগাড়ী থানায় মালিকবিহীন একটি মামলাও করা হবে।