নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার উত্তর নাড়িবাড়ি তিনরাস্তার মোড় থেকে সোনাবাজু বাজার কালভার্ট পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার পাকাসড়ক দীর্ঘদিন যাবৎ সংস্কারের অভাবে যেকোনো পরিবহনতো দূরের কথা খানাখন্দকে পরিপূর্ণ হয়ে মানুষ চলাচলের ও অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে স্বাধীনতা পরবর্তীকাল থেকে ৪৪ বছর ধরে তুলসীগঙ্গা নদীর ওপরে নির্মিত সোনাবাজু ব্রীজটির পুনঃ নির্মানের কাজ বারবার ব্যাহত হওয়ায় জন ভোগান্তি চরম আকার ধারন করেছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, স্বাধীনতা পূর্বকাল থেকেই গুরুদাসপুর থেকে উত্তর নাড়ি বাড়ি তিনরাস্তার মোড় দিয়ে পোয়ালশুড়া, পাটপাড়া, সোনাবাজু, জালশুকা, রয়নাভরট, লক্ষীকোল-বড়াইগ্রাম-মৌখাড়া-আহাম্মদপুর হয়ে তদানিন্তন রাজশাহী জেলা পরিষদ নিয়ন্ত্রিত ওই পাকাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন ১৫-২০ খানা যাত্রীবাহী বাস নাটোর ও রাজশাহী সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত যাতায়াত করতো কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে পাকবাহিনীর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ৭১ এর ১৭ ডিসেম্বর এক্সক্লুসিভ বিস্ফোরনের মাধ্যমে সোনাবাজুর তুলসীগঙ্গার ব্রীজটি উড়িয়ে দেয়ার পর থেকেই ওই ব্রীজ দিয়ে কোনো ভারি যানবাহন চলাচল করতে পারেনি। তবে জেলা পরিষদ ও স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ওই ব্রীজের ওপর কাঠের পাটাতন ফেলে বা বাইপাস সড়ক তৈরী করে জন চলাচল নিশ্চিত করে কোনো মতে।
ইতোমধ্যে সড়কটি নাটোর জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রনে আসার পর থেকে আর কোনো মেরামত না হওয়ায় গোটা সড়কটি পরিণত হয়েছে খানাখন্দকে। ফলে সাইকেল-মোটরসাইকেল যোগে চলাও দুস্কর এখানে। এখন ১০ কিলোমিটার ঘুরে হয়তোবা নয়াবাজার হয়ে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়ক দিয়ে নয়তো নাজিরপুর-হালসা-দত্তপাড়া হয়ে নাটোরে যেতে হয় গুরুদাসপুর বাসীকে। এছাড়াও সোনাবাজুর তুলসীগঙ্গা নদীর ওপরে নির্মানাধীন ব্রীজটি অর্ধ-নির্মিত অবস্থায় ১০ বছর যাবৎ পড়ে থাকলে ও দেখার কেউ নেই।
এ ব্যাপারে গুরুদাসপুর উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আব্দুল আজিজ বলেন, তার বসতবাড়ি সহ সমস্ত জমিজমা ধারাবারিষা ইউনিয়ন এলাকাতেই। ইতিপূর্বে তিনি ওই ভগ্নদশা সড়ক ও ব্রীজটি মেরামতের জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়ে ও সমস্যাটির কোনো সমাধান না হওয়ায় ভোগান্তির শিকার হয়েছে এলাকার লক্ষাধিক মানুষ।
ধারাবারিষা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল মতিন মাষ্টার জানান, নাড়িবাড়ি মোড় থেকে সোনাবাজুর বাজার কালভার্ট পর্যন্ত পাকা সড়কটি সম্পূর্ণ ধারাবারিষা ইউনিয়ন এলাকা দিয়ে বয়ে গেছে। সড়কটি ভগ্নদশা থাকায় এই ইউনিয়নের সমস্ত উন্নয়ন কর্মকান্ড ব্যাহত হচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে ওই সড়কের কাজ সহ ব্রীজটি মেরামত করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
ওই সড়ক সংলগ্ন পাটপাড়া ও সোনাবাজু উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক ও আব্দুল মজিদ জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ ওই সড়কটি বেহাল অবস্থায় থাকায় মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ব্যবস্থা ব্যাহত হলেও কার কাছে বলবো কথাগুলো? শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এলাকাবাসী ও সড়কটির জন্য ভোগান্তির শেষ সীমায় পৌছে গেছে। এ ভোগান্তির অবসান হওয়া খুবই জরুরী।
যোগাযোগ করলে নাটোর জেলা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জিকরুল ইসলাম জানান, ওই সড়কটি মেরামতের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হলে ও এ পর্যন্ত কোনো টাকা পয়সা বরাদ্দ না পাওয়ায় মেরামত কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তুলসীগঙ্গা নদীর ওপরে নির্মানাধীন অসামাপ্ত ব্রীজটি আদৌ সমাপ্ত হবে কিনা সে ব্যাপারে বলতে রাজি নন।