ফেলানী হত্যার পুনর্বিচারের আশ্বাস পাওয়া গেলেও, বিএসএফ-এর আদালতে ন্যায় বিচারের আশা নেই, বলছেন মানবাধিকার কর্মীরা৷ তাদের কথায়, বিএসএফ-এর আচরণে কোনো পরিবর্তন আসেনি৷ বন্ধ হয়নি সীমান্ত হত্যা, অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনা৷
২০১১ সালের ৭ই জানুয়ারি বাংলাদেশের কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর গুলিতে নিহত হয় কিশোরী ফেলানী৷ তার লাশ দীর্ঘ সময় কাঁটাতারের ওপর ঝুলে ছিল৷ এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলে বিএসএফ প্রাথমিক তদন্ত করে তাদের নিজস্ব আদালতে বিচার শুরু করে৷ ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বিএসএফ-এর আদালত বিএসএফ জওয়ান আসামি অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয়৷ পরবর্তীতে এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হলে একই আদালত মামলাটির পুনর্বিচার করে৷ চলতি বছরের ৩রা জুলাই দেয়া রায়ে আবারো অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করে খালাস দেয় বিএসএফ-এর নিজস্ব আদালত৷ এ রায়ের বিরুদ্ধে শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের মানবাধিকার সংগঠনগুলোও অবস্থান নিয়েছে৷
এরপর গত সপ্তাহে ভারতে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সম্মেলনে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, ‘‘ফেলানীর পরিবার চাইলে বিএসএফ আবারো রায় পুনর্বিবেচনার উদ্যোগ নেবে৷”
এ বিষয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠস আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিচালক নূর খান বলেন, ‘‘যদি পুনর্বিচারের কথা বলা হয় তাহলে তা হতে হবে সিভিল আদালতে৷ কারণ বিএসএফ-এর নিজস্ব আদালতে ন্যায় বিচার যে পাওয়া যাবে না, তা এরইমধ্যে প্রমাণ হয়েছে৷ তারা আসলে তাদের আদালতে ফের বিচার করার নামে আরেকটি প্রহসন করতে চায়৷”
ফেলানী হত্যা মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন জানান, ‘‘বিএসএফ-এর তদন্তেই প্রমাণিত যে, অমিয় ঘোষ ফেলানীকে হত্যা করেছেন৷ অথচ বিচারে বলা হচ্ছে, ঘোষ আত্মরক্ষার জন্য গুলি করেছেন, তাই তিনি নির্দোষ৷ নিরস্ত্র এক কিশোরী কিভাবে একজন সশস্ত্র বিএসএফ জওয়ানের জীবনের প্রতি হুমকি হতে পারে?” তাই তিনি বলেন, ‘‘এবার বিএসএফ-এর বাইরে কোনো আদালতে আমার বিচার চাই৷ আমারা অতি দ্রুত পুনর্বিচারের আবেদন করব৷”
ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম জানান, ‘‘আমি আমার সন্তান হত্যার ন্যায় বিচার পাইনি৷ আমি ন্যায় বিচার চাই৷”
মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, ‘‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের নানা ইতিবাচক দিক এখন আমরা দেখতে পেলেও, সীমান্তের ব্যাপারে কোনো উন্নতি দেখতে পাচ্ছি না৷ সীমান্ত হত্যাসহ নির্যাতন এবং অপহরণ আগের মতোই চলছে৷”
আসক-এর হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সীমান্তে ২৩ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন বিএসএফ সদস্যদের হাতে৷ তাদের মধ্যে ১৫ জনকে গুলি ও আটজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ এছাড়া অপহরণ করা হয় প্রায় ১১০ জনকে৷ ২০১৪ সালে বিএসএফ-এর হাতে নিহত হয় ৩৩ জন আর ২০১৩ সালে হত্যা করা হয়েছিল ৩৮ জন বাংলাদেশিকে৷
নূর খান বলেন, ‘‘এই পরিসংখ্যানই বলে দেয় যে, সীমান্তে বাংলাদেশিদের প্রতি বিএসএফ-এর মনোভাব কেমন৷ ভারতের শীর্ষ পর্যায় থেকে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার কথা বার বার বলা হলেও, বাস্তবে তার প্রমাণ মিলছে না৷”
ফেলানী হত্যা মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘‘সীমান্তে সত্যিই যদি হত্যা বন্ধ করতে চাইতো বিএসএফ, তাহলে ফেলানী হত্যা মামলার রায় নিয়ে এত নাটক করত না৷”- ডিডব্লিউ