: বার্সেলোনার জার্সি গায়ে লিওনেল মেসির আরও একটি জাদুকরী পারফরম্যান্সের সাক্ষী হলো ফুটবল দুনিয়া। আর এই পারফরম্যান্সের ঝলক বার্সেলোনাকে এনে দিয়েছে আরও একটি শিরোপা। উয়েফা সুপার কাপের তীব্র উত্তেজনায় সাজানো এই ফাইনালে সেভিয়াকে ৫-৪ গোলে হারিয়েছে তারা।
চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপাজয়ীরা সঙ্গে ইউরোপের দ্বিতীয় সেরা ক্লাব প্রতিযোগিতা ইউরোপা লিগ বিজয়ীদের এই লড়াই কাল হয়ে উঠেছিল দারুণ আকর্ষণীয়। খেলাটির প্রতিটি স্তরে লুকিয়ে ছিল একরাশ উত্তেজনা আর শ্বাসরুদ্ধকর আবহ। নিরপেক্ষ দর্শকেরা তো বটেই, মাঠের দুই দলের সমর্থকেরাও রীতিমতো তাড়িয়ে উপভোগ করেছেন এই ম্যাচ। মাঠের ফলাফল যা-ই হোক না কেন, উত্তেজনার ভেলায় চেপে এই ম্যাচে সত্যিকারের বিজয়ী ফুটবল খেলাটিই।
সেভিয়া নিজেদের দুর্ভাগা কিন্তু ভাবতেই পারে। ৪-১ গোলে পিছিয়ে থাকা ম্যাচে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৪-৪ বানিয়ে একে অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যাওয়াটা অসম্ভব কৃতিত্বেরই। কিন্তু মেসির মতো তারকারাই সাধারণ এসব ম্যাচে ব্যবধানটা গড়ে দেন—কাল তিবলিসিতে ঘটেছে ঠিক সেই ঘটনাই।
ম্যাচের শুরুতে এগিয়ে গিয়েছিল সেভিয়াই। এভার বানেগা এগিয়ে দিয়েছিলেন তাদের। কিন্তু মেসি এই পর্যায়ে ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে পরপর দুটি গোল করে বার্সেলোনার আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। এরপর লুইস সুয়ারেজ ও রাফিনিয়া আরও দুটি গোল করলে বার্সেলোনার সহজ জয় একপ্রকার নিশ্চিতই হয়ে গিয়েছিল। তবে হোসে আন্তোনিও রেইস, কেভিন গামেইরো ও ইয়েভেন কোনোপ্লিয়াঙ্কার তিনটি গোল সবাইকে অবাক করে দিয়েই ম্যাচে ফিরিয়ে আনে সেভিয়াকে। ৪-১ গোলে এগিয়ে থেকেও খেলাটিকে সমতায় দেখে বার্সা সমর্থকেরা আশঙ্কা করছিলেন বিপর্যয়ের। কিন্তু অতিরিক্ত সময়ের শেষ দিকে মেসির ফ্রিকিক পরবর্তী সময়ে বল পেয়ে পেদ্রো রদ্রিগেজ গোল করে বার্সেলোনাকে এনে দেন স্মরণীয় এক জয়।
ম্যাচ শেষে বার্সেলোনা কোচ লুইস এনরিকে এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও শ্বাসরুদ্ধকর খেলার কৃতিত্বটি দিয়েছেন প্রতিপক্ষকেই, ‘ম্যাচের ৫০ মিনিটের সময় মনে হচ্ছিল আমরা বুঝি খুব সহজেই জিতে যাচ্ছি। কিন্তু সেভিয়া যা খেলল, সেটা এক দুর্দান্তই। এমন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে মাঠে নামলে আগে থেকে বলা যায় না কী ঘটতে যাচ্ছে! ’
এনরিকে অবশ্য দারুণ খুশি এই শিরোপায়, ‘যা-ই হোক না কেন, এই জয়ে আমাদের দলের মেধা ও সৃষ্টিশীলতা প্রকাশ পেয়েছে। খেলাটা খুবই কঠিন ছিল। অবশ্য ট্রফি ও ম্যাচ জেতা কিন্তু সব সময়ই কঠিন, এটা মনে রাখা উচিত।’
ট্রফি জয়ের পাশাপাশি নিজ দলের খেলার ধরনটাও স্বস্তি দিচ্ছে এনরিকেকে, ‘আমরা খুবই পরিশ্রম করে ম্যাচটা বের করেছি। জেতার ধরনটাই আমাকে তৃপ্তি দিচ্ছে।’
দল দারুণ খেলেছে। তিন গোলের ব্যবধান ঘুচিয়ে খেলাটিকে অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্বও দেখিয়েছে। কিন্তু ট্রফিটা জিততে পারিনি। সেভিয়া কোচ অবশ্য মনে করেন সুপার কাপের শিরোপাটা সেভিয়ার ঘরেই আসা উচিত ছিল, ‘আমরা অবশ্যই সৃষ্টিশীল ফুটবল খেলেছি। বার্সেলোনাকে বিপাকেও ফেলেছি। কিন্তু ট্রফিটাই জিততে পারলাম না। তিনি বলেন, ‘যেকোনো ইউরোপীয় ফাইনালেই আপনাকে প্রতিপক্ষের সমীহটা আদায় করে নিতে হবে। সে জন্য আক্রমণই প্রধান অনুষঙ্গ। আমরা ম্যাচে সেটা করেই বার্সেলোনাকে উদ্বেগে রেখেছিলাম। কিন্তু শেষ অবধি পারলাম না।’