আওয়ামী লীগ সরকারের দেওয়া অনুমোদন নিয়ে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো আওয়ামী লীগেরই সমালোচনা করছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের এই অবদানের কথা চ্যানেল কর্তৃপক্ষকে মনে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আজ বুধবার রাজধানীর রমনার সার্কিট হাউস রোডে তথ্য ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে ৩২টি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি বেতারের অনুমোদনও আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ই দেওয়া হয়েছে।
আমরাই দিলাম বেসরকারি টেলিভিশন। সেখানে বসে আমাদের সমালোচনাটাই সবচেয়ে বেশি। এ সুযোগটা আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে। সেটা যেন মনে রাখেন।’
দেশের সব মানুষের হাতে মোবাইল ফোন রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৬ কোটি মানুষের দেশে ১২ কোটি ৬৮ লাখ সিম আছে। এ সুযোগটা কে দিয়েছে? আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে। ডিজিটাল সেন্টার আমরা চেয়েছি। সমালোচনা করুন তবে যেন বিকৃত না করে, মানুষকে বিভ্রান্ত না করে। যেটুকু ভালো করেছি, সেটা বলারও যেন সাহস থাকে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘টেলিভিশন কিনে শুধু ব্যবসা করলে চলবে না। বাঙালি হিসেবে আমাদের চিন্তা, চেতনা, সংস্কৃতি যেন আরো বিকশিত হয়, সে বিষয়গুলোর দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।’
এ সময় গণযোগাযোগ অধিদপ্তর, গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটসহ সব সংস্থাকে পারদর্শী হিসেবে গড়ে তুলতে চান বলে জানান শেখ হাসিনা।
ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জন্য জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়নের কাজ এগিয়ে চলছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাংবাদিকদের জন্য অষ্টম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জন্য ওয়েজবোর্ড প্রণয়ন দরকার।’
এ সময় বিটিভির সদর দপ্তর ভবন নির্মাণ, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশকে উন্নত করা, ৩৮টি চলচ্চিত্রে সরকারের অনুদান দেওয়া হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
বর্তমান সরকার এসে মুক্তবুদ্ধির চর্চার দ্বার খুলে দিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ২১ বছর বাংলাদেশের জনগণ বিকৃত ইতিহাস দেখেছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বারবার গণতন্ত্রের ওপর আঘাত এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ, সে আলোকেই এখানে পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হয়।’
বাঙালি জাতি আজ যা কিছু পেয়েছে তার পেছনে বঙ্গবন্ধুর অবদান আছে বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে একসময় জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছিল। আমরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদকে কঠোর হস্তে দমন করেছি। আজকে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলছে। যেহেতু বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় ছিল। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিকভাবে এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। এটা এমনি এমনি হয়নি। আমাদের সুষ্ঠু নীতিমালা গ্রহণের মধ্য দিয়ে তা হয়েছে।’
সমাজে মাদক ব্যাধির মতো ঢুকে পড়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোনো মানুষ যেন মাদকাসক্ত না হয়, সে ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি দরকার। সে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারেন একমাত্র আপনারা, মিডিয়া।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য নানা ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সারা দেশে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করার মাধ্যমে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত হতে চাই। সেভাবেই আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে পরিণত করব। সেটার জন্য প্রচার দরকার। তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সেটা প্রচার করা এবং সামনে নিয়ে আসা দরকার। ইনশাল্লাহ, আর কেউ বাংলাদেশকে আটকাতে পারবে না। এ বিশ্বাস আমাদের আছে।
২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।
সরকার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিনিয়োগ নিয়ে আসছি। জীবন্ত মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার মতো নোংরা কাজ আর হতে পারে না। বিএনপি-জামায়াত জোট সেটাই করেছে। বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিকে স্থবির করে দিয়েছে। তারা এ দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। একাত্তরের ঘাতকদের মতো মানুষকে হত্যা করেছে।’
বাংলাদেশকে বিশ্ব সভায় মর্যাদার আসনে উন্নীত করার সুযোগ চান বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।