গত বছর ট্রেবলজয়ী বার্সেলোনা এ মৌসুমেও দুরন্ত কিছু করারই ইঙ্গিত দিয়ে রাখল। শিরোপা জয় দিয়েই মৌসুম শুরু করেছে স্প্যানিশ জায়ান্টরা। উয়েফা সুপার কাপে লিওনেল মেসি, লুই সুয়ারেজ ও পেদ্রোর নানন্দিক পারফর্মে কাতালানরা ৫-৪ গোলে সেভিয়াকে হারিয়ে বছরের প্রথম ট্রফি ঘরে তুলেছে।
মঙ্গলবার রাতে জর্জিয়ার তিবিলিসিতে ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই পিছিয়ে পড়ে বার্সেলোনা। আন্তোনিও রেইসকে ডি বক্সের বাইরে হাভিয়ের মাসচেরানো ফাউল করলে ফ্রি-কিক পায় সেভিয়া। আর তাতে ২০ গজ দূর থেকে ডান পায়ের বাঁকানো শটে আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার বানেগা বল জালে জড়ালে এগিয়ে যায় গতবারের ইউরোপা চ্যাম্পিয়নরা।
শুরুতেই পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা কাটাতে অবশ্য বেশিক্ষণ সময় নেয়নি গতবারের ট্রেবল জয়ীরা। চার মিনিট পর সেভিয়ার মতো বার্সেলোনাও ঠিক একই জায়গায় ফ্রি-কিক পায়। তা থেকেই নিজের প্রথম গোলটি করে দলকে সমতায় ফেরান মেসি। তিন মিনিট পর আরেকটি সুযোগ পেয়েছিল বার্সেলোনা। কিন্তু ডান দিক থেকে ইভান রাকিতিচের ক্রসে ছোট ডি বক্সের সামনে থেকে বলে পা লাগাতে ব্যর্থ হন রাফিনিয়া। ষষ্ঠদশ মিনিটে আর হতাশ হতে হয়নি বার্সেলোনাকে। এবারও মেসি জাদু; ২৫ গজ দূর থেকে তার নেওয়া ফ্রি-কিক ডান পোস্টের গা ঘেঁষে জালে জড়ায়।
৪৪তম মিনিটে গোল করার দারুণ সুযোগ পেয়েও নষ্ট করেন লুইস সুয়ারেস। তার শটটি ঠেকিয়ে দেন সেভিয়া গোলরক্ষক। তবে ফিরতি বল পেয়ে সামনে থাকা প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের দুপায়ের মধ্যে দিয়ে বল বাড়ান উরুগুয়ের এই স্ট্রাইকার, যা থেকে সহজেই আলতো টোকায় ব্যবধান ৩-১ করেন ব্রাজিলের মিডফিল্ডার রাফিনিয়া।
বিরতির পর শুরুতেই ব্যবধান বাড়ানোর আরেকটি সুযোগ পান রাফিনিয়া, কিন্তু তার জোরালো শটটি ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক বেতো। দ্বিতীয়ার্ধের সপ্তম মিনিটে সেভিয়ার খেলোয়াড়দের ভুলে বল পেয়ে যান সের্হিও বুসকেতস। তার বাড়ানো বল ডি-বক্সের মধ্যে পেয়ে ঠাণ্ডা মাথায় স্কোরলাইন ৪-১ করেন সুয়ারেস।
ম্যাচের ভাগ্য তখনই লেখা হয়ে যায়নি। ৫৭তম মিনিটে সেভিয়ার অধিনায়ক রেইস ব্যবধান কমিয়ে লড়াইয়ে ফেরার আভাস দেন। এই গোলের সঙ্গেই যেন নিজেদের ফিরে পায় টানা দুইবারের ইউরোপা লিগ চ্যাম্পিয়নরা। একের পর এক আক্রমণে বার্সেলোনার রক্ষণে চাপ বাড়াতে থাকে তারা।
৭২তম মিনিটে ভিতোলাকে ডি বক্সের মধ্যে জেরেমি মাথিউ ফাউল করলে পেনাল্টি পায় সেভিয়া। তা থেকে ব্যবধান আরও কমান ফরাসি ফরোয়ার্ড কেভিন। আর ৮১তম মিনিটে কাছ থেকে নেওয়া শটে স্কোরলাইন সমান করে শিরোপা জয়ের আশা জাগিয়ে তোলেন সেভিয়ার বদলি খেলোয়াড় কোনোপ্লিয়াঙ্কা।
অতিরিক্ত সময়ে গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধেও অনেকটা সময় গোলবিহীন কেটে গেলে টাইব্রেকারের সম্ভাবনা জোরালো হয়। তখনই আরেকবার দেখা মেলে মেসি জাদুর।
১১৫তম মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে মেসির শট প্রতিপক্ষের দেয়ালে লেগে ফিরে আসে, ফিরতি বলে আর্জেন্টিনা তারকার শট প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে কিছুটা দিক পাল্টালেও ঠেকিয়ে দেন সেভিয়া গোলরক্ষক। কিন্তু বল আয়ত্ত্বে রাখতে পারেননি তিনি। ফিরতি বল পেয়ে খুব কাছ থেকে জালে জড়িয়ে দলকে উল্লাসে ভাসান স্প্যানিশ স্ট্রাইকার পেদ্রো।
বাকি সময়ে ফের সমতায় ফেরার দারুণ দুটি সুযোগ পেয়েছিল সেভিয়া। কিন্তু কোকের হেড সামান্যর জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার পর ফাঁকা পোস্টে গোল করতে ব্যর্থ হন ফরাসি ডিফেন্ডার আদিল রামি। তাই টানা দ্বিতীয় বছরেও উয়েফা সুপার কাপের শিরোপা জিততে না পারার হতাশা নিয়ে ফিরতে হয় দলটিকে। আর বছরের সম্ভাব্য ছয়টি শিরোপা জেতার পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল বার্সেলোনা।