ভারতের রঘুনাথগঞ্জে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকের মশলা উদ্ধারের ঘটনায় ঘুম হারাম রাজ্য সরকারের৷ ধৃতদের জেরা করে এর পেছনে বড় চক্রান্তের সম্ভাবনা আঁচ করছেন গোয়েন্দারা৷
বিস্ফোরকের মশলা পাচারের নেপথ্যে অন্যতম মূল পাণ্ডা বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দি রয়েছে বলেও তারা জানতে পেরেছেন৷ সংশোধনাগারের ভেতরে বসে তিনি মোবাইলের মাধ্যমে পাচারের তদারকি করছিলেন৷ এটা জানতে পেরে পুলিশ ও গোয়েন্দারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন৷
উদ্বিগ্ন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও৷ তিনি ঘটনাটির তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন সিআইডির হাতে৷ দিল্লি রওনা হওয়ার আগে সোমবার ওই সিদ্ধান্ত জানিয়ে গিয়েছেন মমতা৷ পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা দফায় দফায় ধৃত তিনজনকে জেরা করা হচ্ছে। যদিও গোয়েন্দাদের ধারণা, ওই তিনজনই নানাভাবে বিভ্রান্ত করছে তাদের৷
ঘটনাটির সঙ্গে বাংলাদেশের মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠী জামায়াত উল-মুজাহিদিনের যোগ আছে বলে রোববার প্রাথমিকভাবে মনে করেছিলেন পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্তারা৷ কিন্ত্ত সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত ধৃতদের জেরা করে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য না আসায় তাদের মাথাব্যথা আরো বেড়েছে৷
কী কারণে এত বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকের মশলা কলকাতা আনা হচ্ছিল তা নিয়ে শংসয় থেকেই যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এর আগে সতর্কবার্তা দিয়েছিল যে, স্বাধীনতা দিবসের আগে কলকাতায় বড়সড় নাশকতার পরিকল্পনা আছে জামায়াতের৷
ওই সংগঠনের প্রথম সারির এক নেতার উপস্থিতিতে জুলাইয়েই উত্তর ২৪ পরগনার এক গোপন ডেরায় এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছিল৷ বাংলাদেশের ওই নেতাটি কলকাতা শহরেই গা-ঢাকা দিয়ে আছে বলে গোয়েন্দারা রিপোর্ট দিয়েছিলেন৷ রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই নেতা গত মে মাসেই লালগোলায় বাংলাদেশ সীমান্ত পার হয়ে বেশ কিছুদিন ঘাঁটি গেড়েছিল মুর্শিদাবাদে৷
ঘটনাটির তদন্তে এনআইএ’র একটি দল মঙ্গলবারই বাংলাদেশে যাবে৷ খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর থেকেই ওই দলটি মুর্শিদাবাদে আছে৷ তারা মুকিমনগরের মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মোফাজ্জ্বল হোসেন ওরফে লাদেনসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলেও বেশ কয়েকজন অভিযুক্তের টিকির নাগাল এখনো পায়নি৷
তার মধ্যেই নতুন করে নাশকতার পরিকল্পনায় মুর্শিদাবাদের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে এনআইএ কর্তাদের কপালে৷ পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের যে বন্দির নাম জেরায় উঠে এসেছে, তার নাম সাইদুল শেখ৷ তার নির্দেশেই বিস্ফোরকের মশলা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বলে ধৃতেরা পুলিশকে জানিয়েছে৷ পুলিশ এখন সাইদুলকে জেরা করার পরিকল্পনা করছে৷
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, সাইদুল শেখ সংশোধনাগারে বসে কীভাবে মোবাইল ব্যবহার করেছে তা জানতে তদন্ত করা হবে৷ ধৃত তিনজনকেই দীর্ঘক্ষণ জেরা করা হয়েছে৷ ওদের দেয়া তথ্যগুলোর সত্যতা যাচাই করে দেখা হচ্ছে৷
যে তথ্যগুলো পুলিশ পেয়েছে, তার অন্যতম হল বিস্ফোরক এসেছিল ঝাড়খণ্ড থেকে৷ ধৃত সিন্টু শেখ ওই তথ্য দিয়েছে৷ সুতি থানা এলাকার বাসিন্দা সিন্টু ১১ মাস আগে ২ বছর জেল খেটে বেরিয়েছিল৷ জাল নোট পাচার ও অপহরণের মামলা ছিল তার বিরুদ্ধে৷
পুলিশ জানিয়েছে, বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী জাল নোট পাচারে মদদ দিয়ে থাকে৷ সেজন্যই তার সঙ্গে জামায়াতের যোগ খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো৷ তবে ধৃত অপর দু’জনের সঙ্গে জামাতের শীর্ষ নেতাদের সরাসরি যোগ না-ও থাকতে পারে বলে পুলিশ মনে করছে৷
ওই দু’জনের পরিচয় ও পূর্ব ইতিহাস ঘেঁটে পুলিশ ও গোয়েন্দারা মনে করছেন, তারা নেহাতই লিঙ্কম্যান হতে পারে৷ ওদের দু’জনের মধ্যে আখতার শেখ পেশায় গাড়িচালক৷ আর রফিকুল ইসলাম গ্রামে ঘুরে খাবারের জিনিস ফেরি করে৷
দু’জনই জঙ্গিপুর থানা এলাকার বাসিন্দা৷ সিন্টু শেখের নির্দেশে তারা বিস্ফোরকের মশলা বোঝাই পাঁচটি বস্তা নিয়ে গাড়িতে উঠেছিল বলে জেরায় জানিয়েছে৷ তিন জনকেই সোমবার পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে বহরমপুর আদালত৷ তাদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা ছাড়াও জাল নোট পাচারের অভিযোগও রুজু করেছে পুলিশ৷ পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এখন তাদের জেরা করে সুনির্দিষ্টভাবে তিনটি তথ্য জানার চেষ্টা করছে৷
তথ্যগুলো হলো- (১) জামায়াতের সঙ্গে সিন্টু বা কারাবন্দি সাইদুলের সত্যিই সম্পর্ক আছে কিনা, (২) স্বাধীনতা দিবসের আগেই কেন এত বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকের মশলা কলকাতা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল? (৩) ওই বিস্ফোরক কোথা থেকে আনা হয়েছিল? এর উত্তর পেলেই পাচারকারীদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হবে বলে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মনে করছে৷ সেই সঙ্গে কলকাতাই নাশকতার লক্ষ্য ছিল কিনা, জানা যাবে তা-ও৷ সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া