ফেসবুকে কঠোর নজরদারি সরকারের

ফেসবুকে কঠোর নজরদারি সরকারের

ব্লগার নিলয় নীল (নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়) হত্যাকাণ্ডের পর ব্লগ বা ফেসবুকে কারা কী লিখছে সে বিষয়ে নজরদারি আবার কঠোর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর আগে ২০১৩ সালের gfghfমার্চে ফেসবুক ও ব্লগে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা কঠোর নজরদারি শুরু করে । কিছুদিন নজরদারির পর ধর্মবিরোধী লেখার অভিযোগে চার জন ব্লগারকে গ্রেপ্তারও করা হয়। এরপর শিথিল হয়ে যায় নজরদারি। এখন কারো বিরুদ্ধে ধর্মবিরোধী লেখার প্রমাণ পেলে তাকে গ্রেপ্তারেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দপ্তর ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

দায়িত্বশীল কয়েকজ কর্মকর্তা জানান, যারা ধর্ম অবমাননা করে ফেসবুক বা ব্লগে লিখে তাদের গ্রেপ্তারের জন্য গত রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্তের পর এ বিষয়ে কাজও শুরু করা হয়েছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আব্দুল কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরু হয়। এরপর কয়েকটি গণমাধ্যমে শাহবাগ আন্দোলনকারীদের নাস্তিক আখ্যা দেয়া হয়। উগ্রবাদী একটি দলের হামলায় নিহত ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারের লেখাকে ইসলামের চরম অবমাননা বলে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়। এরপর বিভিন্ন ইসলামি দল শাহবাগ আন্দোলনের বিরোধিতায় নামে। ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ ফেসবুক ও ব্লগে ইসলাম এবং হযরত মুহম্মদ (সা.) কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যকারীদের সনাক্ত ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটির প্রধান করা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব মাইন উদ্দিন খন্দকারকে। কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), আইন ও বিচার বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয়, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, এনএসআই ও ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক এবং পুলিশের (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) অতিরিক্ত ডিআইজিকে রাখা হয়েছিল। কমিটি গঠনের পর আইটি বিশেষজ্ঞ ও আলেমদের সঙ্গে দুটো সভাও করা হয়। একই সময় কারা ফেসবুক ও ব্লগে ধর্মবিরোধী লেখালেখি করছে তাদের ওপর নজরদারি শুরু করা হয়। কমিটি গঠনের ১৭ দিন পর ১ এপ্রিল ধর্মবিরোধী লেখালেখির অভিযোগে সুব্রত অধিকারী ওরফে শুভ, মশিউর রহমান বিপ্লব, রাসেল পারভেজ ও আসিফ মহিউদ্দিন নামের চার ব্লগারকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। সে সময় তা নিয়ে বেশ হৈচৈ হয়। এর পর ব্লগাররা জামিনে মুক্তি পান। এরপর ব্লগ ও ফেসবুকে লেখালেখির ওপর নজরদারিও শিথিল হয়ে পড়ে।

আলেমদের সঙ্গে সভার সময় আনজুমানে আল বাইয়্যিনাতের পক্ষ থেকে ৫৬ জন ব্লগারের তালিকা দেয়া হয়। সেদিন এই সংগঠনের মুখপাত্র ও দৈনিক আল ইহসানের সম্পাদক মোহাম্মদ মাহবুব আলমও সভায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ওই সময় যারা ইসলামের বিরুদ্ধে ব্লগে ও ফেসবুকে লেখালেখি করতো তাদের তালিকা দিয়েছিলাম। কমিটির দুটো বৈঠক হয়েছিল। এর পর আর কোনো বৈঠক হয়নি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওই সময় ব্লগে কারা ইসলামবিরোধী কথা লিখছে তার খোঁজ খবর রাখলেও পরে আর রাখা হয়নি।’

সোমবার এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন সব কিছুতেই আমাদের নজরদারি রয়েছে।২০১৩ সালে ব্লগারদের যে তালিকা কমিটির কাছে দেয়া হয়েছিল বাস্তব সংখ্যা তার চেয়েও বেশি। আমাদের হাতে ১০০ জনের বেশি ব্লগারের নাম রয়েছে যারা ধর্মের বিরুদ্ধে লিখেন।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মুক্ত মন নিয়ে একজন লেখালেখি করতেই পারেন। তাই বলে নির্দিষ্ট একটি ধর্ম নিয়ে লিখতে হবে? ধর্ম অবমাননার বিষয়ে দেশে সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। আবদুল লতিফ সিদ্দিকী একজন মন্ত্রী ছিলেন। ধর্ম অবমাননার মামলায় তাকে কারাগারে যেতে হয়েছে। ব্লগে যারা লিখছেন তারা নিশ্চয়ই লতিফ সিদ্দিকীর চেয়ে বড় কেউ নন। ব্লগে এসব না লিখলে আজ যে ঘটনাগুলো ঘটছে সেগুলো হয়তো এড়ানো যেতো।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই সকল ব্লগার হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবে সরকার। সে লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।’

বাংলাদেশ