এমিরেটসে ওয়েস্টহ্যাম ইউনাইটেডের কাছে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ০-২ গোলে আচমকা হেরে বসেছে শিরোপা প্রত্যাশি আর্সেনাল। এটা একদিনের পুরনো খবর। এমনকি, পুরনো খবর হচ্ছে, চেলসি থেকে আনা গোলরক্ষক পিটার চেকের কারণেই হার মানতে হয়েছে গানারদের। নতুন খবর তাহলে কি? গানার কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গার, এতসব কিছু না ভেবে বসে গেছেন পুরো ম্যাচের কাটাছেঁড়া করতে। তাতেই আশ্চর্য হয়ে দেখলেন, ১৬ বছরের এক বালকের সামনে কতই না অসহায় হয়ে পড়েছিলেন মেসুত ওজিল, সান্তি ক্যাজোলা, অলিভার জিরুড কিংবা থিও ওয়ালকটরা।
কে এই ১৬ বছরের বালক? নাম তার রিচ অক্সফোর্ড। ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডের কোচ স্লাভেন বিলিচ তার পরিচয়টা আরেকটু স্পষ্ট করে দিলেন এই বলে, ‘যদি মেসিও এবার আমার সামনে পড়ে, তাহলে আমি আর ভয় পাবো না। কারণ আমার হাতে রয়েছে রিচ অক্সফোর্ডের মত মিডফিল্ডার। যে মিডফিল্ডেই তাকে আটকে দেবে। আর সামনে এগুতে দেবে না।’
কী বলে স্লাভেন বিলিচ? পাগল-টাগল হয়ে গেলেন নাকি। বিশ্বের তাবৎ সেরা সেরা ডিফেন্ডার বলুন আর মিডফিল্ডার বলুন, দিনের পর দিন গবেষণা করেও যেখানে মেসিকে আটকানোর উপায় খুঁজে বের করতে পারছেন না, সেখানে কি না মাত্র ১৬ বছরের এক বালককে দিয়ে দিনি আটকে দেবেন বার্সার আর্জেন্টাইন ক্ষুদে যাদকুরকে?
বিলিচের কথায় যুক্তিও যথেষ্ট বেশি। অক্সফোর্ড যে অভিষেকেই বাজিমাত করে দেখালেন! আটকে দিয়েছিলেন ওজিল, জিরুড আর ওয়ালকটদের! রোববার এমিরেটস স্টেডিয়ামে স্বাগতিক আর্সেনালের মুখোমুখি হয়েছিল ওয়েস্টহ্যাম ইউনাইটেড। শক্তির বিচারে আর্সেনালের জয়টা হেসে-খেলেই আসবে বলে ভেবেছিল সবাই। কিন্তু; উল্টো গানারদেরই হারিয়ে দিল ওয়েস্টহ্যাম। এই ম্যাচেই পেশাদার ফুটবলে অভিষেক ঘটেছে ১৯৯৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর লন্ডনে জন্ম নেওয়া ফুটবলার রিচ অক্সফোর্ড!
শুরু থেকে ৭৯ মিনিট ছিলেন মাঠে। এর মধ্যে পুরো মধ্যমাঠ যেন একাই দখল করে রেখেছিলেন অক্সফোর্ড। আর্সেনালের নামকরা স্ট্রাইকার, মিডফিল্ডার কিংবা উইঙ্গাররা যতবারই মাঝ মাঠ থেকে ওয়েস্টহ্যামের গোলমুখে বল নিয়ে এগিয়ে যেতে চেয়েছে, ততবারই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন রিচ অক্সফোর্ড। মাঝমাঠ থেকেই রক্ষণের আসল কাজটি করে দিয়েছেন তিনি। আর আক্রমণ সাজানোয় ভূমিকা! সেটাও প্রশ্নাতীত। ৯৫ ভাগ পাসই সঠিক স্থানে পৌঁছে দিতে পেরেছেন অক্সফোর্ড।
রিচের কোচ স্লাভেন বিলিচ বললেন, এই এতটুকুন বয়সে ওজিল, জিরুড, সান্তি ক্যাজোলাদের যেভাবে সে মাঝ মাঠে সামলেছে, এবং আর্সেনালের সুযোগগুলো নষ্ট করে দিয়েছে, তাতে আমি নিশ্চিত দীর্ঘদিন মাঠ মাতানোর জন্যই খেলতে এসেছে সে। তার ক্যারিয়ার যে অনেক উজ্জ্বল এখনই বলে দেওয়া সম্ভব।
এমন অসাধারণ খেলার পর একটা প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠে গেছে। অক্সফোর্ডের বয়স আসলেই ‘১৬’ তো? জবাবটা দিয়েছেন বিলিচ নিজে। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যেই অনেকে আমাকে জিজ্ঞাসা করতে শুরু করেছেন, রিচ অক্সফোর্ডের বয়স আসলেই কত? আমি তাদের বলেছি, একেবারে ১৬ না হোক, কয়েকদিন বেশি কিংবা কম তো হবেই। আমি তার খেলায় রীতিমত মুগ্ধ। নিশ্চিত, নতুন প্রজন্মের অগ্রদূত সে।’
রিচ অক্সফোর্ড সম্পর্কে আরেকটি তথ্য, রিচের নেতৃত্বেই ২০১৫ ইউরোপীয় অনুর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছিল ইংল্যান্ড। কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিলো রিচের দল। স্পেনের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল তাদেরকে।