উন্নয়ন সহযোগীরা প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি: প্রধানমন্ত্রী

উন্নয়ন সহযোগীরা প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি: প্রধানমন্ত্রী

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় দেওয়া সহায়তাকে উন্নয়ন সহায়তার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে- এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নয়ন সহযোগীরা এখন পর্যন্ত তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর পার্লামেন্ট সদস্যদের নিয়ে বুধবার ঢাকায় আয়োজিত তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিগত দুই দশক ধরে বৈদেশিক সহায়তা কমছে। এখন দেখছি, জলবায়ু অর্থায়নের সাথে উন্নয়ন অর্থায়নকে মিলিয়ে ফেলা হচ্ছে। জলবায়ু অর্থায়ন কোনো দয়া-দাক্ষিণ্য নয়। এটা হচ্ছে, শিল্পোন্নত দেশগুলো যুগ যুগ ধরে যে বায়ু দূষণ করেছে তার ক্ষতিপূরণ।”

“এটি নতুন, অতিরিক্ত এবং অনুদান হিসেবে দিতে হবে”, যোগ করেন তিনি।

হোটেল রেডিসনে ‘ইন্টারন্যাশনাল মিটিং অব পার্লামেন্টেরিয়ান অব কান্ট্রিজ অব মোস্ট ভালনারেবল ক্লাইমেট চেঞ্জ: বিয়ন্ড কপ ১৭’ শীর্ষক এ সম্মেলনে ১৯টি দেশের সংসদ সদস্যের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন।

জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃসরকার প্যানেলের প্রতিবেদন থেকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, “সমুদ্রস্তরের উচ্চতা এক মিটার বাড়লে বাংলাদেশের এক-পঞ্চমাংশ ভূমি জলমগ্ন হবে। প্রায় ২ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে। এই মানুষগুলোর সঠিক চাহিদা মেটাতে লাগসই পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে।”

শিল্পোন্নত দেশগুলো কোপেনহেগেন জলবায়ু সম্মেলনে যেসব প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল- তা পূরণেও তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “২০১৩ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ‘গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড’ পরিচালনের লক্ষ্যে কীভাবে তহবিল সংগৃহীত হবে তাও পরিষ্কার নয়। সবুজ প্রযুক্তি হস্তান্তরের কোনো প্রক্রিয়াও দেখা যাচ্ছে না।”

বিভিন্ন দেশ থেকে আসা সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলার কৌশল নির্ধারণের সাথে সাথে কার্বন নিঃসরণ কমানোর পদ্ধতি নিয়েও আলোচনা করতে হবে। পাশাপাশি জনগণকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে আইনগত বাধ্যবাধকতাপূর্ণ নতুন একটি চুক্তি সম্পাদনের জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের আর দেরি করা ঠিক হবে না। জলবায়ু বিষয়ক একটি নতুন ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। যেখানে উন্নয়নশীল বিশ্ব, বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য পর্যাপ্ত অর্থ ও কারিগরি সহায়তা নিশ্চিত হবে।”

বাংলাদেশ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণের বিষয়ে সতর্ক আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আশা করি, আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরা আমাদের এ প্রচেষ্টায় সমর্থন যোগাবেন।”

সম্মেলনে আসা প্রতিনিধিদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আসুন, আমরা জনগণকে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি দেওয়ার প্রতিশ্র“তি পূরণে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করি। মোকাবিলা ও খাপ খাওয়ানোর কর্মসূচিগুলোও গ্রহণ করি। এলক্ষ্যে উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বকে মুখ্য দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করি।”

জাতীয় সংসদের স্পিকার আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে অন্যদের মধ্যে পরিবেশ ও বন মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সাল করিক কুন্ডি, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী ও বাংলাদেশ ইউএনডিপির প্রতিনিধি স্টিফেন প্রিজনার বক্তব্য দেন ।

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয় ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন ই¤প্র“ভিং ডেমোক্রেসি থ্রু পার্লামেন্টারি ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) প্রকল্পের অর্থায়নে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ