মুন্সীগঞ্জে আড়াইশ যাত্রী নিয়ে মেঘনায় ডুবে যাওয়া লঞ্চটি টেনে তুলে তীরের কাছে নিয়ে এসেছে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ও রুস্তম। বুধবার সকালে আরো ৩০টি লাশ উদ্ধারের পর এ দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৬ জনে।
মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাহফুজুল হক জানান, এ পযন্ত ৩৪ জনের লাশ সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে ৩১টি লাশ স্বজনরা নিয়ে গেছেন।
এদিকে মেঘনার তীরে স্বজনদের আহজারি বাড়ছেই। চর কিশোরগঞ্জে খোলা লঙ্গরখানায় নির্ঘুম রাত কাটিয়ে সকালেই তারা হাজির হয়েছেন দুর্ঘটনাস্থলে। লঞ্চডুবির ৩২ ঘণ্টা পর প্রিয়জনকে জীবিত ফিরে পাওয়ার আশা বাদ দিয়ে এখন শুধু লাশটি নিয়ে বাড়ি ফিরতে চান তারা।
এমভি শরিয়তপুর-১ নামের দ্বিতল লঞ্চটি আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে শরীয়তপুরের নড়িয়া থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে সোমবার রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার কাছে দুর্ঘটনায় পড়ে। উদ্ধার পাওয়া যাত্রীরা বলেছেন, একটি কার্গো জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে তাৎক্ষণিকভাবে লঞ্চটি ডুবে যায়। রাতেই আরেকটি লঞ্চের সহায়তায় ২৫-৩০ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নৌ বাহিনী, কোস্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মীরা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে মোট ৩৬টি লাশ উদ্ধার করেন। এরপর উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়।
বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান শামসুদ্দোহা খন্দকার জানান, মেঘনার মূল চ্যানেলের চরকিশোরী এলাকায় প্রায় ৭০ ফুট পানির নিচে ডুবে গিয়েছিল লঞ্চটি। মঙ্গলবার দুপুরেই উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম লঞ্চটিকে বেঁধে ফেলে। কিন্তু উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা পৌঁছাতে রাত হয়ে যাওয়ায় রাতে উদ্ধারকাজ বন্ধ থাকে।
হামজা রাত ১টার দিকে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর বুধবার ভোরে আবার শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। ডুবুরিরা সকালে আরো ৩০ জনের লাশ উদ্ধার করেন বলে বিআইডব্লিউটিএর উপ পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান।
তিনি জানান, রুস্তম ও হামজার ক্রেন দিয়ে লঞ্চটিকে টেনে পানির ওপরে ভাসানো হয়েছে। তারপর সেটিকে তীরের ৬০০ ফুটের মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে।
তবে লঞ্চের তলা মাটিতে ঠেকে যাওয়ায় সেটিকে তীরে ভেড়ানো সম্ভব ন বলে রফিকুল ইসলাম জানান।
এ লঞ্চডুবির ঘটনায় নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএ এবং সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর এই তিনটি কমিটি করেছে।
নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান মঙ্গলবার দুপরে দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে সাংবাদিকদের জানান, নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ত্রিশ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। তবে একই পরিবারের একাধিক ব্যাক্তি মারা গিয়ে থাকলে পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকা করে পাবে।