সৌদি আরব নিঃসন্দেহে বদলে যাচ্ছে।
ঐতিহাসিকভাবে তেল সমৃদ্ধ এই রাজতন্ত্র মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক এবং সামরিক ইস্যুতে একধরণের রক্ষণশীল ধরি-না-ছুঁই-পানি ধরণের দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়ে আসছে। অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার স্বার্থে সরাসরি কোথাও নাক গলানো থেকে বিরত থেকেছে।
কিন্তু তেলসমৃদ্ধ এই রাজতন্ত্র এখন স্পষ্টতই বহুদিনের সেই কৌশল থেকে সরে এসে নিজের শক্তি প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বেশ কিছু অজানা ঝুঁকি নিতেও তারা পিছপা হচ্ছেনা।
প্রতিবেশী ইয়েমেনে সৌদি আরব গত চার মাসের বেশি সময় ধরে হুতি বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত।
সিরিয়াতে প্রেসিডেন্ট বাশার বিরোধী ইসলামপন্থি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে প্রতি নাটকীয়ভাবে সাহায্য বাড়িয়েছে সৌদি আরব।
ইরানের প্রসঙ্গে সৌদি সরকার পশ্চিমাদের বার্তা দিয়েছে, যদি তারা নিশ্চিত হয় তেহরান পারমানবিক বোমা বানাতে সমর্থ হয়েছে, সৌদি আরবও ওই পথে যেতে দ্বিধা করবে না।
কেন কৌশলে এই পরিবর্তন?
কেন সৌদি আরব এই পথে এগুচ্ছে – তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিবিসির প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিশ্লেষক ফ্রাঙ্ক গার্ডনার ঠিক দু বছর আগে সৌদি রাজ পরিবারের দুই ক্ষমতাসীন সদস্যের সাথে তার একটি সাক্ষাতের উল্লেখ করেছেন।
ওই সাক্ষাৎ হয়েছিল জেদ্দায় লোহিত সাগরের পাশে এক প্রাসাদে তৎকালীন যুবরাজ এবং বর্তমান বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল-আজিজ আল সউদ এবং তার সবচেয়ে প্রিয় পুত্র প্রিন্স মোহামেদ বিন সালমানের সাথে।
সে সময় বাদশাহ সালমান সৌদি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ছিলেন এবং মরক্কোতে অবকাশ যাপন কাটছাঁট করে ফিরে এসেছিলেন। কারণ ছিল, সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে মার্কিন ক্ষেপনাস্ত্র হামলায় পরিকল্পনায় যুক্ত হওয়া।
রাশিয়ার চাপে সেই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরিকল্পনা শেষ মুহূর্তে স্থগিত হয়ে যায়।
কিন্তু সৌদি আরব চাইছিল মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের একমাত্র মিত্র প্রেসিডেন্ট আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে সিরিয়ায় সুন্নিপন্থি সরকার বসুক।
ফলে তারপর থেকে সৌদি শাসকদের ভেতর এমন ধারণা শক্ত হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বার্থ দেখছে না। এবং তখন থেকেই সৌদি রাজপরিবারের সদস্যরা এবং নীতি নির্ধারকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা নিজেরাই নিজেদের মত কাজ করবেন।
ইরান ভীতি
সৌদি আরবের ভেতর ভয় ঢুকেছে ইরানে তাদেরকে সামরিকভাবে ঘিরে ফেলছে এবং এখনই পাল্টা জবাব দিতে হবে।
সাদ্দাম পরবর্তী ইরাকের সরকারে ইরানপন্থি শিয়াদের নিয়ন্ত্রণ এবং লেবাননে ইরানপন্থি হিজবোল্লার শক্তি নিয়ে সৌদি আরব বেশ কিছুদিন ধরেই উদ্বিগ্ন। প্রতিবেশী ইয়েমেনে শিয়া হুতিদের হাতে সৌদি সমর্থক সরকারের পতনে সেই ভয় কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
ইয়েমেনে শিয়া হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিক তৎপরতাকে সৌদিরা প্রকৃতপক্ষে ইরানকে মোকাবেলা হিসাবে বিবেচনা করছে।
সৌদি বিমান হামলায় গত চার মাসে ইয়েমেনে কয়েক হাজার মানুষ মারা গেছে।
শেষ কোথায়?
বহু বিশ্লেষক বলছেন, সৌদি আরবের এই কৌশলের পরিণতি খুব খারাপ হবে।
তারা বলছেন, সিরিয়ার মতো দেশগুলোতে যে সব ভয়ানক গোষ্ঠীগুলোকে সৌদি আরব সাহায্য করছে, তাতে সুন্নি জিহাদি তৎপরতা উৎসাহিত হচ্ছে। পরিণতিতে খোদ সৌদি আরবের রাস্তাতেই আইএসের মত গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা দেখা দেবে।
তবে অনেকে আবার বলছেন আরব বসন্তের পরিণতিতে আরব বিশ্বের বিশাল অংশে যে বিশৃঙ্খলা, প্রাণহানি আর হানাহানি তৈরি হয়েছে, তাতে আমেরিকার ওপর ভরসা কমিয়ে নিজেদের স্বার্থ দেখা ছাড়া সৌদিদের কোনো উপায় নেই।– বিবিসি