আগামী সংসদ অধিবেশনে ‘ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং বিল’ (এফআরএ) পাস হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং বিলের ওপর সংসদীয় কমিটির সংশোধনী প্রস্তাব পছন্দ না হওয়ায় এটি প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার রাতে সচিবালয়ে বিলটি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ কথা জানান। বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, এফবিসিসিঅই সভাপতি মাতলুব আহমাদ, ঢাকা চেম্বার সভাপতি হোসেন খালেদ, ‘দি ইনস্টিটিউট অব চার্ট্যার্ড একাউন্টস অব বাংলাদেশ’ (আইসিএবি)-এর সভাপতি মসিহ মালিক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
কোম্পানির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা ও মান নিশ্চিত করতে ২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর মন্ত্রিসভায় ‘ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট, ২০১৪’-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এর আগে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ‘ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং’ নামে একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। কিন্তু পরে এটি আর আইনে রূপ দেওয়া হয়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর নতুন এ সরকার মনে করে যে, এ ধরনের একটি আইন থাকা দরকার। এ প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের মে মাসে ‘ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট’-এর একটি খসড়া প্রথমবার মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয়। এ সময় মন্ত্রিসভা প্রস্তাবিত আইনটির বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ দেয়। এরপর ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে দ্বিতীয়বার মন্ত্রিসভায় এটি উপস্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ১৯ আগস্ট এ আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
বৈঠক প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিলটি আমিই প্রত্যাহার করেছিলাম। তবে প্রত্যাহার মানে সংসদ থেকে প্রত্যাহার নয়, আলোচনা থেকে প্রত্যাহার। সংসদীয় কমিটিই বিলটি আবার সংসদে উপস্থাপন করবে এবং সেটি আগামী সংসদ অধিবেশনেই পাস হবে।’
সংসদ থেকে বিলটি প্রত্যাহারের কারণ সম্পর্কে মুহিত বলেন, ‘বিলটিতে কিছু সংশোধনীসহ পাসের জন্য সংসদীয় কমিটি সুপারিশ করেছিল। কিন্তু তাদের সংশোধনী প্রস্তাবগুলো আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। এ বিষয়ে আমি সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যানকে বলেছিও যে, সংশোধনী প্রস্তাবগুলো আমার পছন্দ হয়নি।’
মুহিত বলেন, ‘সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান আমাকে বলেছেন যে, বিলটি নিয়ে তার কোনো ভিউ নেই। কয়েকজন সদস্য সংশোধনী দিয়েছেন। তারপর এটি পাস হয়েছে। তবে আপনার যদি কোনো বিষয়ে আপত্তি থাকে সেভাবে পাঠান, আমরা সেটাই গ্রহণ করব।’
তিনি বলেন, ‘বিলের ওপর আমার মতামত দেওয়ার জন্য সংসদীয় কমিটি দুই মাস সময় দিয়েছে। তবে ইতিমধ্যেই তারা এ সংক্রান্ত বৈঠক ডেকেছে। এ মাসেই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবে বিলটি নিয়ে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করেছি।’
আইনটি আপনি যেভাবে করতে চেয়েছিলেন, এখন সেভাবেই এটা করা হচ্ছে কি ন। এ প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘তাদেরও তো কিছু কথা শুনতে হবে। তবে বড় কোনো চাপ ছিল না। এখন বিলটির বিষয়ে কোনো সংশোধনী আনা হলে সেটা নিয়ে সংসদ অধিবেশনেই আলোচনা হবে।’
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে এফবিসিসিআই সভাপতি মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘আইনটির বিষয়ে প্রধান শর্ত হচ্ছে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টটা যাতে স্বচ্ছ ও সঠিক হয়। সবাই যাতে আইনটি বুঝতে পারে। আইনটির বিষয়ে আমাদের কিছু পর্যবেক্ষণ ছিল, সেটা অর্থমন্ত্রীকে আমরা দিয়েছি। তিনি সেগুলোর অনেকগুলোই গ্রহণ করেছেন। আশা করি আমরা একটা ভাল আইন পাব।’
ঢাকা চেম্বার সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন, ‘এফআরএ হওয়াটা আমাদের দেশের জন্য ভাল। বৈঠকে আমরা এর গঠন, এক্সিকিউশন ও এর কন্ট্রোলে কারা কারা থাকবেন সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি এবং আলোচনা খুবই ফলপ্রসূ হয়েছে।’
আইসিএবি-এর সভাপতি মসিহ মালিক চৌধুরী এফসিএ বৈঠক প্রসঙ্গে বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সরকার আইনটি নিজে থেকেই করার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু আমরা এটা কোনোদিন শুনিনি। আমাদের জানা মতে, এটি বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশন ছিল। তারা এখন এ ব্যাপারে কিছুটা নমনীয় হয়েছে। যাহোক, সরকার আইনটি করতে চাচ্ছে। আমরা বলেছি যে, এটা করলে কোনো সমস্যা নেই। তবে সবাইকে নিয়েই আইনটি করা উচিত।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, “এ আইনের আওতায় একটি ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্র্টিং কাউন্সিল গঠন করা হবে। আইন প্রয়োগে এ কাউন্সিলই হবে অভিভাবক। কাউন্সিলে একজন চেয়ারম্যান ও ১০ জন সদস্য থাকবেন। সার্চ কমিটির মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। চেয়ারম্যানের অধীনে চারজন নির্বাহী পরিচালক থাকবেন। তারাও সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে। সরকার গেজেট জারির মাধ্যমে অভিজ্ঞদের নিয়ে ‘আপিল নিষ্পত্তিকারী কর্তৃপক্ষ’ গঠন করবে। কাউন্সিলে চারটি বিভাগ থাকবে। এগুলো হচ্ছে- মানদ- নির্ধারণী বিভাগ, আর্থিক প্রতিবেদন পরিবীক্ষণ বিভাগ, নিরীক্ষাচর্চা পুনঃনিরীক্ষণ বিভাগ ও প্রয়োগকারী বিভাগ। এ আইন ভঙ্গের জন্য এক বছর থেকে পাঁচ বছরের কারাদ- এবং অডিটরদের ১ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।