চলতি অর্থবছরে ৪৬ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা বাজেট ঘাটতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
এ ঘাটতি পুষিয়ে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণ করতে আগামীতে কিছু ‘অপ্রিয়’ সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে বলেও জানান তিনি।
রোববার জাতীয় সংসদে ‘২০১২ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-ডিসেম্বর) পর্যন্ত বাজেট বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন’ উপস্থাপনের সময় তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছিলো ৪৫ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৫ শতাংশ। সম্ভাব্য সংশোধিত বাজেটে ঘাটতি বেড়ে ৪৬ হাজার ৩২৮ কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে। যা জিডিপির ৫ দশমিক ১ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১ লাখ ১৮ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা। সাড়ে তিন হাজার কোটি হ্রাস পেয়ে এ লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ১৪ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে।
তিনি আরো জানান, টু-জি লাইসেন্স ফি ২ বছরের জায়গায় ৩ বছরে বিস্তৃত করায় কর বহির্ভূত রাজস্ব আয় ৪ হাজার কোটি কমিয়ে ১৮ হাজার ৬শ’ কোটি নির্ধারণের বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে।
অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ সাড়ে ৫ হাজার কোটি কমিয়ে ৪০ হাজার ৫শ’ কোটি পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে।
বাজেটে সম্ভাব্য পরিবর্তনের বিষয় বলতে গিয়ে মুহিত বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে অনুন্নয়ন খাতের কিছু ক্ষেত্রে যেমন ভর্তুকি ব্যবস্থাপনায় ব্যয় বেড়েছে। বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ জিডিপির ২ দশমিক ৩ শতাংশ ধরা হলেও বর্তমানে বিভিন্ন সংস্থা থেকে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকির দাবি এসেছে তা বাজেটের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। যা জিডিপির ৪ দশমিক ৩ শতাংশ।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের অব্যাহত মূল্য বৃদ্ধি আমাদের অর্থনীতির জন্য অপ্রত্যাশিত কিছু ঝুঁকির সৃষ্টি করেছে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অভিঘাত মোকাবেলায় আমরা এরইমধ্যে যথাযথ নীতি-কৌশল গ্রহণ করেছি। যেখানে আমাদের বেশ কিছু অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সামনের দিনগুলোতেও নিতে হতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ৪ মার্চ প্রথম প্রান্তিকের প্রতিবেদন উপস্থ’াপনের সময় সম্পদের সীমাবদ্ধতা, ভেতর ও বাইরের বাধা সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরে নির্ধারিত ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেন।
মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন ‘চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফতি ছিলো উর্ধ্বমুখি। ফলে সামগ্রিকভাবে এ সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানিসহ খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি,ভারতের উচ্চ মূল্যস্ফীতি, টাকার অবচিতি, সরকারি ঋণ নেওয়া এবং ‘হাই পাওয়ারড মানি’ সৃষ্টি মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণ হিসেবে কাজ করেছে।’
মুহিত বলেন, রিজার্ভ পরিস্থিতি নিয়ে সাময়িক সংকট তৈরি হলেও সরকারের নেওয়া বিভিন্ন নীতির কারণে আগামীতে রিজার্ভ পরিস্থিতি আরো স্বস্তিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত আর সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারণের ফলে দারিদ্র কমেছে এবং মূল্যস্ফীতির প্রভাব হতদরিদ্রের ওপর খুব একটা প্রভাব পড়েনি।’
প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, ভর্তুুকি ব্যয় বাড়ার কারণেই সরকারের অনুন্নয়ন ব্যয় বেড়েছে। ভর্তুকির চাপ কমানো ও সরকারি ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার উদ্দেশ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে সরকার মূল্য সমন্বয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।’
আগামীতে জ্বালানি তেলের দাম আরো বাড়ানো হবে উল্লেখ করে মুহিত বলেন, এরইমধ্যে একাধিকবার জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। যতক্ষণ না জ্বালানির দেশীয় মূল্যের সঙ্গে আমদানি মূল্য সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় ততক্ষণ এ ধরনের সমন্বয় অব্যাহত থাকবে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ সম্পর্কে মুহিত বলেন, গত অর্থবছরের এই সময়ে তুলনায় রিজার্ভ ১৪ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ডিসেম্বর, ২০১১ শেসে রির্জাভের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৬৩৪ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এ পরিমান রিজার্ভ দিয়ে ৩ দশমিক ২ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরো বাড়াতে অবকাঠামোখাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ ও সহজ শর্তে বৈদেশিক ঋণ পাওয়ার লক্ষ্যে সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
দেশের পুঁজিবাজার সম্পর্কে বলতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী গত ২৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর একটি প্রশ্নোত্তর তুলে ধরেন। বিএনপির এএম মাহবুব উদ্দিন খোকনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী পুঁজিবাজারের দরপতন ও সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে সংসদকে জানান।
বক্তব্যের শেষে অর্থমন্ত্রী অর্থনীতি সম্পর্কে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘এদেশের বিভিন্ন শ্রেনী- পেশাজীবীদের কেউ কেউ সবসময়ই নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। তারা তিল কে তাল করতে বড় আনন্দ পান।