১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জাড়িত থাকার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলায় দেয়া মৃত্যুদন্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আরও ৮টি আপিল বর্তমানে উচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির স্থায়ী কিমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর আপিলের চূড়ান্ত রায় ঘোষণা জন্য আগামী ২৯ জুলাই দিন ধার্য রয়েছে। গত ৭ জুলাই তার আপিলের ওপর শুনানি শেষে রায় ঘোষণার এ তারিখ ধার্য করা হয়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৪ বিচারপতির বেঞ্চ রায় ঘোষণার দিন ধার্য করে আদেশ দেয়। এ নিয়ে ট্রাইব্যুনাল থেকে আপিল বিভাগে আসা পঞ্চম আপিল মামলার শুনানি শেষে চুড়ান্ত রায় ঘোষণার পর্যায়ে পৌঁছলো।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদন্ড বহাল রাখার পর পরই গত ১৬ জুন শুরু হয় আপিল বিভাগে আসা ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে পঞ্চম আপিলের শুনানি। সাকা চৌধুরীর আপিল আবেদনটি আপিল বিভাগে পঞ্চম আপিল মামলা। আসামি জামায়াত নেতা গোলাম আযম ও বিএনপি নেতা আব্দুল আলীম মৃত্যুবরণ করায় তাদের মামলায় আনা আপিল অকার্যকর ঘোষণা করা হয়েছে। আপিলে শুনানির অপেক্ষায় থাকা মামলার আসামিরা হলেন- মতিউর রহমান নিজামী, মীর কাশেম আলী, মোবারক হোসেন, সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার, এটিএম আজহারুল ইসলাম, আব্দুস সুবহান, পলাতক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার ও মাহিদুর রহমান।
২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি প্রথম রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ দিয়ে প্রথম রায় ঘোষণা করা হয়। পলাতক থাকায় তিনি আপিলের সুযোগ পাননি। এর পর একই বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ এ মামলার চুড়ান্ত রায়ে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদন্ড দেয়; যা ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর কার্যকর করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের তৃতীয় রায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশ হয়। এর বিরুদ্ধে আপিলের রায়ে গতবছর ১৭ সেপ্টেম্বর তার সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদন্ডের আদেশ দেয় আপিল বিভাগ। ২০১৩ সালের ৯ মে চতুর্থ রায়ে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদন্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলেও কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদন্ড বহাল রাখে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। গত ১১ এপ্রিল কামারুজ্জামানের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।
পঞ্চম রায়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতের আমীর গোলাম আযমকে ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই ৯০ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি অপেক্ষমান থাকাবস্থায় গতবছর ২৩ অক্টোবর কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। ইতোমধ্যে তার আপিলটি অকার্যকর ঘোষণা করা হয়েছে। একই বছরের ১৭ জুলাই ষষ্ঠ রায়ে জামায়াতের বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিলেও তার মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে গত ১৬ জুন রায় ঘোষণা করেছে আপিল বিভাগ। মামলার পূর্নাঙ্গ রায় প্রকাশের পর আসামিপক্ষ রায় রিভিউর আবেদন করবে বলে জানায়। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জানায় আইন ও বিধান অনুযায়ি রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া চলবে।
২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সপ্তম রায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসির রায় হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিল শুনানি শেষে রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে। একই বছরের ৯ অক্টোবর বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমকে আমৃত্যু কারাদন্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। দন্ড ভোগ করা অবস্থায় ৮৩ বছর বয়সে গতবছর ৩০ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ফলে তার আপিল মামলাটি অকার্যকর ঘোষণা করে আপিল বিভাগ। বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ৭১’ এর ২ আল-বদর নেতা আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর মৃত্যুদন্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। তারা দুজনেই পলাতক রয়েছেন। ফলে তারা আপিলের সুযোগ পাননি।
দশম রায়ে গতবছর ২৯ অক্টোবর জামায়াতের বর্তমান আমীর মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করা হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। একাদশ রায়ে গতবছর ২ নভেম্বর জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদন্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
গতবছর ১৩ নভেম্বর ঘোষিত ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র ও বিএনপি নেতা পলাতক জাহিদ হোসেন ওরুফে খোকন রাজাকারকে মৃত্যুদন্ড রায় দেয় ট্রাইব্যুনাল। এটি ছিলো দ্বাদশ রায়। আসামি পলাতক থাকায় আপিলের সূযোগ পাননি। ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার মোবারক হোসেনকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে গতবছর ২৪ নভেম্বর ঘোষিত রায় ট্রাইব্যুনালে দেয়া ১৩তম রায়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষে আনা আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে গতবছর ২৩ ডিসেম্বর টাইব্যুনাল ১৪ তম রায় ঘোষনা করেছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিলও শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
গত বছর ৩০ ডিসেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে ট্রাইব্যুনাল ১৫ তম রায় ঘোষণা করে। এ রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ আনা আপিল শুনানির অপেক্ষায় ররেছে। জামায়াতের নায়েবে আমীর আব্দুস সুবহানকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে গত ১৮ফেব্রুয়ারি ঘোষিত রায় ট্রাইব্যুনালের ১৬ তম রায়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ আপিল দায়ের করেছে। এ আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
জাতীয় পার্টির নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার পলাতক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারকে আমৃত্যু কারাদন্ড দিয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত রায় ট্রাইব্যুনালের ১৭ তম রায়। আসামি পলাতক থাকায় আপিলের সূযোগ পাননি। তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে রাস্ট্রপক্ষ আপিল করেছে। আপিলে আসামির মৃত্যুদন্ডের আর্জি জানানো হয়েছে। যা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। চাপাইনবাবগঞ্জের রাজাকার মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুকে মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদন্ড দিয়ে গত ২০ মে ঘোষিত রায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ১৮তম রায়। রায়ের বিরুদ্ধে আসামি মাহিদুর রহমানের পক্ষে আপিল দায়ের করা হয়েছে। গত ৯ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজাকার পলাতক সৈয়দ মোঃ হাসান আলী ওরফে হাছেন আলীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদন্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করা হয়। এটি ছিল ট্রাইব্যুনালের ১৯ তম রায়।