নোবেল লরিয়েট প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই মাত্র ইটালিতে তার ৫ দিনের সফর শেষ করলেন। মিলান এক্সপো ২০১৫ কাঠামোর অধীনে এই সফরে তিনি কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
জুলাই ১ থেকে ৩ তারিখে মিলানে অনুষ্ঠিত সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ ওয়ার্ল্ড ফোরামে তিনি প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ ওয়ার্ল্ড ফোরাম একটি আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নীতি ও কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করতে, পরষ্পর থেকে শিখতে ও নিজেদের মধ্যে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে মিলিত হয়। ইটালির ফাউন্ডেশন ও যুক্তরাজ্যের সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ কর্তৃক আয়োজিত সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ ওয়ার্ল্ড ফোরামে বিশ্বের এক হাজার জনেরও বেশী প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
বিশ্ব ব্যাপী ক্ষুধার সমস্যা মোকাবেলার উদ্দেশ্যে উপায় খুঁজে বের করার জন্য এই অনুষ্ঠানে প্রফেসর ইউনূসের সাথে প্যানেল আলোচনায় যোগ দেন ইটালির কৃষি, খাদ্য ও বন বিষয়ক মন্ত্রী জনাব মৌরিজিও মার্টিনা, ইটালির প্রাক্তন ক্রীড়া মন্ত্রী ও হিউম্যান ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট জনাব গিওভান্নি মেলান্দ্রি এবং ইটালির প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ইউরোপের নেতৃস্থানীয় নারী অধিকার কর্মী জনাব এমা বনিনো।
এ সফরে প্রফেসর ইউনূস ইটালির বৃহত্তম ব্যাংকের ফাউন্ডেশন কারিপলো ফাউন্ডেশন আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও তিনি যুব বেকারত্ব নিরসনে একটি সামাজিক ব্যবসা ফান্ড গড়ে তোলার বিষয়ে ফাউন্ডেশনের সভাপতি জনাব গুইসেপ্পে গুৎসেট্টির সাথে পৃথক বৈঠকে মিলিত হন।
৭ জুলাই তারিখে প্রফেসর ইউনূস এক্সপো মিলানো ২০১৫ -এ শীর্ষক কর্মসূচিতে মূল বক্তব্য প্রদান করেন। এই অনুষ্ঠানে প্রফেসর ইউনূস বলেন, সমান সুযোগ পেলে নারীরা সর্বোত্তম দক্ষতা দেখাতে পারে। এই অনুষ্ঠানে প্রফেসর ইউনূসের পাশাপাশি বক্তব্য রাখেন ইটালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব পাওলো জেন্টিলোনি। এছাড়াও প্রফেসর ইউনূস ফ্রান্সের সোশ্যাল বিজনেস ফান্ড ড্যানোন কমিউনিটিস আয়োজিত একটি কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের ইটালি সফরের চুড়ান্ত পর্বে ছিল ৮ জুলাই অনুষ্ঠিত একটি জমকালো অনুষ্ঠানে তাকে বলোনিয়া শহরের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করে।
বলোনিয়ার সিটি হলে এই উদ্দেশ্যে আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে বলোনিয়া শহরের মেয়র জনাব ভার্জিনিও মেরোলা প্রফেসর ইউনূসকে এই সম্মানসূচক নাগরিকত্ব তুলে দেন।
এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইটালির পার্লমেন্টের স্পীকার জনাব লরা বলদ্রিনি যিনি রোম থেকে গিয়ে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এই অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ইটালির প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জনাব রোমানো প্রদি ও তাঁর স্ত্রী, সিটি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট জনাব সিমোনা লেমব্রি এবং শহরের ৩৫০ জনেরও বেশী বিশিষ্ট নাগরিক। মেয়র জনাব বলদ্রিনি অনুষ্ঠানে প্রদত্ত তার বিশেষ বক্তব্যে প্রফেসর ইউনূসের বিভিন্ন কর্মকান্ডের প্রশংসা করেন এবং ইতালী ও বিশ্বের অন্যান্য স্থানে এ সকল কর্মকাণ্ডের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন। ইটালিতে অবস্থানরত বাংলাদেশী কমিউনিটি কর্তৃক এই অনুষ্ঠানে একটি রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন অনুষ্ঠানটিকে ইটালিয়ান অংশগ্রহণকারীদের কাছে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে।
সপ্তাহের শুরুতে ৪ জুলাই প্রফেসর ইউনূস উত্তর ইটালি থেকে দক্ষিণের নাপল্স শহরে একটি ট্রেন যাত্রায় অংশ নেন। এই ট্রেন যাত্রায় প্রফেসর ইউনূস ৫০ জন ইটালিয় তরুণের সাথে যুব সমাজের করণীয় নিয়ে গভীর আলোচনায় করেন। এই তরুণরা প্রফেসর ইউনূসের সাথে আলোচনায় অংশ নিতে এই ট্রেন যাত্রায় যোগ দিয়েছিল। নাপল্সে প্রফেসর ইউনূস স্কামপিয়া পরিদর্শন করেন, যার ১ লক্ষ জনগোষ্ঠীর ৭০ শতাংশ যুবক-যুবতীই বেকার। এলাকাটিতে মাদক ও সন্ত্রাস ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়ছে। প্রফেসর ইউনূস এলাকার নের্তৃস্থানীয় ব্যক্তিদের এ সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন পরামর্শ দেন।