একদিন আগেও ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশ পেয়েছে বাংলাদেশ দলের পাকিস্তান সফরে অনুমতি দিতে পারে আইসিসি। সেক্ষেত্রে আইসিসি প্যানেল ভুক্ত দুই দেশের আম্পায়ার এবং ম্যাচ অফিসিয়ালদের দিয়ে খেলা পরিচালনা করা হবে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামালসহ নয় সদস্যের পর্যবেক্ষক দল পাকিস্তান সফরের পর থেকে আলোচনায় গতি পায়। বিশেষ করে বিসিবি সভাপতি ‘পাকিস্তান নিরাপদ’ বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, তাতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সেখানে যাবে তা ধরেই নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষামূলক এই সফরে তিনটি ওয়ানডে হবে লাহোর এবং করাচিতে। লাহোরে একটি এবং করাচিতে দুটি ম্যাচ করার সিদ্ধান্ত নিলেও বিসিবি চাইলে তা পরিবর্তনের সুযোগ আছে।
বাস্তবতা হলো বাংলাদেশ দলের পাকিস্তান সফরের বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। যে পর্যবেক্ষক দল পাকিস্তান সফর করেছে তারা এখনপর্যন্ত কোন প্রতিবেদন জমা দেয়নি। সব কিছু হাতে পাওয়ার পর বাকি প্রক্রিয়া শুরু হবে। বিসিবি সভাপতি মোস্তফা কামাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তেমনটাই বলেছেন,‘সাধারণ কোন বিষয় না পাকিস্তান। অতএব পাকিস্তান অনেক দিনের ঘটনা বিবেচনায় নেওয়া হবে। আমরা আইসিসিকে অন্তর্ভুক্ত করবো। তার পরে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। অন্যথা হলে আমরা কোন সিদ্ধান্তে যাব না।’
প্রশ্ন করা হয়েছিলো আইসিসি দুই দেশের আম্পায়ার দিয়ে খেলা পরিচালনার অনুমতি দিলে বাংলাদেশ দল পাকিস্তানে খেলতে রাজি আছে কি না? উত্তরে বিসিবি সভাপতি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন,‘আমরা যাবো না। ‘স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিসের বাইরে কিছু হলে আমরা যাবো না। স্ট্যান্ডর্ড প্র্যাকটিস হচ্ছে আম্পায়ার্স, ম্যাচ রেফারি এবং অফিশিয়াল আইসিসি থেকে মনোনিত হতে হবে। আইসিসি আমাদেরকে বলেছে, এটা দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হওয়া মনে সেখানে যাওয়া না। আইসিসিকেও দায়িত্ব নিতে হবে। আইসিসি দায়িত্ব না নিলে কি হিসেবে আমার ছেলেদেরকে সেখানে পাঠাবো?’
পাকিস্তানের বন্ধু হয়ে উঠা কামাল ঢাকায় ফিরে ভোল পাল্টে ফেলেন। লাহোরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়েং বিসিবি সভাপতি বলেছিলেন,‘যা দেখলাম তাতে তো নিরাপদই মনে হচ্ছে। আপনাদের কথা দিচ্ছি পাকিস্তানে যাতে ক্রিকেট ফিরে আসে সেজন্য আমি এবং জাকা আশরাফ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবো। আইসিসির সদস্য অন্যদেশগুলোকে বোঝাবো, যাতে তারা পাকিস্তানে খেলতে আসে।’
২০০৯ সালের ৩ মার্চ লাহোরের লিবার্টি চত্বরে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের গাড়িতে বন্দুক হামলা হয়। ঘটনা স্থলে নিহত হন ছয় জন পুলিশসহ দুইজন বেসামরিক নাগরিক। জখমসহ আহত হয় ছয় লঙ্কান ক্রিকেটার। পাকিস্তান থেকে সেই যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নির্বাসনে গেছে আর ফেরেনি। ফেরার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়নি দেশটিতে। প্রায় প্রতিদিন কোন না কোন শহরে আত্মঘাতি বোমা হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। রোববার পেশোয়ারে বোমা হামলা হয়েছে রক্তাক্ত হয়েছে পাকিস্তান। আইনিশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হচ্ছেন। সমরিক কর্মকর্তাদের ওপরও হামলা চালায় জঙ্গী সংগঠনগুলো। যে দেশের নিরপত্তাবাহিনী নিজেদের রক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার।
এত সব জানার পরও পর্যবেক্ষক দল নিয়ে পাকিস্তান সফরে গিয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি মোস্তফা কামাল। যাওয়ার আগে ক্রিকেটারদের সঙ্গে পর্যন্ত আলোচনা করেননি। জাতীয় দলের বিদেশি কোচিং স্টাফরা সেখানে যেতে রাজি আছে কি না তাও জানেন না। তা হলে তার পাকিস্তান সফরের আসল উদ্দেশ্য কি? কামাল বললেন প্রতিশ্রুতি,‘ আমাদের একটা প্রতিশ্রুতি ছিলো পাকিস্তানে যাব। এফটিপিতে এপ্রিল মাসে আমাদের পাকিস্তান খেলা আছে, আপনারা জানেন। অন্য দেশগুলোকে আমরা যেভাবে দেখি, পাকিস্তানকে সে ভাবে দেখি না। পাকিস্তানকে আলাদা ভাবে দেখেছি এই কারণে, দীর্ঘদিন যাবত পাকিস্তানে ক্রিকেট হচ্ছে না। আমি মনে করেছি যেখানে আমার ছেলেরা যাবে, সেখানে আমার নিজের যাওয়া দরকার। এমন কি আইসিসি যদি বলে তোমরা যাও, দল পাঠাতে পার, তাহলেও আমি মনে করি যে, পাকিস্তানকে ‘স্পেশাল কেস’ হিসেবে নিয়ে সেখানে যাওয়া। সেই কারণে আমি সেখানে গিয়েছি। এবং আমার সাথে একটি সিকিউরিটি টিম নিয়ে গিয়েছিলাম।’
আইসিসির অনুমোদন পেলেও পাকিস্তানে যেতে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদল লাগবে। মোস্তফা কামালও জানেন শেষ ফারি সরকার,‘ আমি পর্যবেক্ষক দলটির প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছি। হাতে প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইসিসিকে লিখিত অবহিত করবো। আইসিসি যে সিদ্ধান্তের পর সরকারের অনুমতি লাগবে। কারণ যে কোন দেশে খেলতে যাওয়ার আগে আমাদের সরকারের অনুমোতদন লাগে। আমাকে নিয়মের মধ্যদিয়ে যেতে হবে। নিয়মের বাইরে কিছু হবে না।’