‘আমার জীবন চলচ্চিত্রের জন্য উৎসর্গ করেছি’

‘আমার জীবন চলচ্চিত্রের জন্য উৎসর্গ করেছি’

joyaগত পয়লা জুলাই ছিল অভিনেত্রী জয়া আহসানের জন্মদিন। বাংলাদেশি এই অভিনেত্রী এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কলকাতায়। এরই মধ্যে কলকাতায় মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত দুটি ছবি ‘আবর্ত’ এবং ‘একটি বাঙালি ভূতের গল্প’। মুক্তির অপেক্ষায় আছে সৃজিত মুখার্জির নতুন ছবি ‘রাজকাহিনী’।

জন্মদিনে জয়ার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রুমান গাঙ্গুলি। সাক্ষাৎকারটি ছাপা হয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়ার অনলাইন সংস্করণে।

প্রশ্ন: গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন ব্লগার খুন হয়েছেন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় হুমকি। একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হিসেবে আপনি এ বিষয়ে কী বলবেন? আপনার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কি তাহলে হুমকির মুখে?

জয়া: যা ঘটেছে সেটা দুঃখজনক এবং ভীতিকর। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের জন্মগত অধিকার এবং সেটা কেউ খর্ব করতে পারে না। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে অসংখ্য নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। নিজেদের অধিকার রক্ষার জন্য আমাদের দেশের মানুষ সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কিন্তু আজকের দৃশ্যপট বদলে গেছে। এখন যা ঘটছে, তাতে সবাই ভীতসন্ত্রস্ত, বিশেষ করে প্রগতিশীল মানুষ ও শিল্পীরা।

প্রশ্ন: আপনি বাংলাদেশের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত একজন অভিনেত্রী। শুরুতে টালিউডে আপনি কেমন সাড়া পেয়েছেন?

জয়া: (হাসি) যথেষ্ট উষ্ণতার সঙ্গে এবং বড় হৃদয় নিয়েই আমাকে গ্রহণ করেছে টলিউড। এখানকার মানুষজন আমাকে বুঝতেই দেয় না যে আমি তাদের কেউ নই, বাইরের মানুষ। আমি টলিউডের কাছে কৃতজ্ঞ। এখানকার পরিচালক, শিল্পী এবং টেকনিশিয়ানদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। দর্শকরা আমার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন এবং আমার মনে হয় এটা শুভ লক্ষণ, তারা আমার কাজ পছন্দ করছেন।

প্রশ্ন: এখানকার কোন কোন অভিনেতার সঙ্গে আপনি কাজ করতে চান? যাদের সঙ্গে কাজ করেছেন তারা বাদে।

জয়া: প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি এবং দেবের সঙ্গে কাজ করতে চাই। এর বাইরে ঋত্বিক চক্রবর্তী, পরমব্রত চ্যাটার্জি এবং শাশ্বত চ্যাটার্জির সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে। এর বাইরে যারা অভিনেতা নন, তাদের সঙ্গে কাজ করাটাও একটা চ্যালেঞ্জ। সুযোগ পেলে আমি সেটাও করে দেখতে চাই।

প্রশ্ন: আপনার কি মনে হয় টালিউড আপনার প্রতিভার সদ্ব্যবহার করতে পেরেছে?

জয়া: না। এত অল্প সময়ে সেটা করাও সম্ভব না। আমি মাত্র এখানে আমার ক্যারিয়ার শুরু করেছি এবং আমার নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। আমাকে আরো অনেক দূর যেতে হবে এবং আমি মাত্র সূচনালগ্নে রয়েছি। নিজেকে প্রমাণ করার জন্য আমি একটা চ্যালেঞ্জিং চরিত্রের অপেক্ষায় আছি। এখানকার পরিচালকরা ঝুঁকি নিতে ভয় পান। ‘আবর্ত’ করার পর আমি একই ধরনের চরিত্র করার জন্য অনেক অফার পেয়েছি। তাই একটা বিরতি নিলাম। এরপর রাজকাহিনীতে সৃজিত একটা দুর্দান্ত চরিত্রের প্রস্তাব দিল। আমি সেটা লুফে নিলাম। দর্শকরা দেখার পর তাদের রায় দেবেন জয়া আহসান আসলেই অভিনেত্রী কি না! আমি বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে চাই, যাতে আমি আমার অভিনয় প্রতিভাকে ঝালিয়ে নিতে পারি। বাংলাদেশের পরিচালকরা আমাকে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে কাজ করান, আমার ওপর তাদের সেই আস্থাটা রয়েছে। কয়েকদিন পরেই বাংলাদেশে আমার একটি ছবি মুক্তি পাবে, সেখানে আমি সার্কাসে কাজ করা এক মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। আরেকটি ছবিতে নারী সুপারহিরো চরিত্রে অভিনয় করেছি।

প্রশ্ন: কলকাতায় আপনাকে কাজের প্রয়োজনে প্রায়ই থাকতে হয়। যখন একা থাকেন এবং শুটিং থাকে না তখন কী করে সময় কাটান?

জয়া: আমি একা একা সময় কাটাতে পছন্দ করি। আমার বেডরুমে জানালা থেকে একটা গুলমোহর গাছ দেখা যায়। ওই গাছটার দিকে তাকিয়েই আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিই। রাস্তায় একা একা হাঁটি, মানুষজন দেখি, কলকাতার প্রতিটি কোনা ঘুরে দেখার চেষ্টা করি। আর আমি গান শুনতে খুব পছন্দ করি। তাই আমার আইপড সব সময় আমার সঙ্গেই থাকে। এখানে আমার অল্প কিছু বন্ধুবান্ধব হয়েছে। তাদের সঙ্গেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিয়ে কাটাই।

প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার বন্ধুবান্ধব কারা?

জয়া: আমি তো মনে করি ইন্ডাস্ট্রির সবাই আমার বন্ধু (হাসি)। রাজকাহিনীতে ১১ জন অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ করার পর তাদের সবার সঙ্গেই আমার ভালো খাতির হয়ে গেছে। এটা একদমই খাঁটি বন্ধুত্ব, যেখানে শুধু ভালোবাসা রয়েছে কোনো শত্রুতা নেই। এটাই আমার কাছে বড় অর্জন বলে মনে হয়।

প্রশ্ন: বাংলাদেশে আপনি বাণিজ্যিক ঘরানার বাইরে ছবি করার জন্য পরিচিত। টলিউডে আপনি যেসব ছবিতে কাজ করেছেন ‘আবর্ত’, ‘রাজকাহিনী’ বা ‘একটি বাঙালি ভূতের গপ্পো’- এগুলোও মূল ধারার বাণিজ্যিক ছবি নয়। আপনি কি ইচ্ছে করেই বাণিজ্যিক ছবি এড়িয়ে যাচ্ছেন?

জয়া: আসলে ব্যাপার সে রকম কিছু না। অবশ্যই ইন্ডিপেনডেন্ট এবং বিকল্পধারার ছবিই আমার প্রথম পছন্দ। কিন্তু সেই সঙ্গে ভালো গল্পের কমার্শিয়াল ছবিতেও আমি কাজ করতে চাই। বাণিজ্যিক ছবি হলেও গল্প এবং আমার চরিত্রে চমক থাকতে হবে।

প্রশ্ন: টালিউডের সঙ্গে বাংলাদেশের সিনেমার তুলনা করতে বললে কী বলবেন?

জয়া: বাংলাদেশের ব্যাপারে আমি আবেগি এবং তাই আমি এ ব্যাপারে নিরপেক্ষ মতামত দিতে পারব না। তবে এটা বলতেই হয়, ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে টালিউড অনেক বেশি পেশাদার। হয়তো আপনাদের সিনেমার বড় বাজার এবং কাঠামোর কারণে এই পেশাদারিত্ব এখানে গড়ে উঠেছে। আমাদের দেশে সিনেমা হলগুলো নিয়ে আমরা বড় ধরনের সমস্যায় রয়েছি। প্রজেকশন ব্যবস্থা এবং পোস্ট প্রডাকশন সুবিধা সেখানে খুবই অপ্রতুল। আবার একই সঙ্গে সিনেমার প্রতি আমাদের প্রবল ভালোবাসা রয়েছে, এই ভালোবাসার কারণেই আমাদের সব ত্রুটি আড়াল হয়ে যায়। প্রতিবছর বাংলাদেশে বেশ ভালো কিছু ছবি নির্মিত হয়। সরকারও সিনেমার উন্নয়নে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। পরিচালক এবং শিল্পীদের একটা নতুন প্রজন্ম কাজ করছে। যাদের গল্প বলার ধরন অসাধারণ এবং সিনেমার প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসা রয়েছে।

প্রশ্ন: প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি চেষ্টা করছেন টালিউডের সঙ্গে আপনাদের ঢালিউডের একটা যোগসূত্র স্থাপন করতে। কিন্তু আলোচনার অগ্রগতি খুব ধীর। এ সম্পর্কে আপনি কী বলবেন?

জয়া: আমরা সবাই আসলে খুব চেষ্টা করছি। বুম্বাদা (প্রসেনজিৎ) ও গৌতম দা (গৌতম ঘোষ) দুজনেই খুব চেষ্টা করছেন এবং আমাদেরও বেশ কয়েকজন নির্মাতা তাদের সঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে দুই দেশের মানুষেরই এ বিষয়ে আপত্তি রয়েছে। তারা বুঝতে চান না পৃথিবীর মানচিত্রে সাড়ে ৩০ কোটি বাঙালি রয়েছেন এবং তারাই আমাদের দর্শক। বাংলা হচ্ছে বিশ্বের পঞ্চম সর্বাধিক কথিত ভাষা।

প্রশ্ন: পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে কাজের মধ্যে আপনি আপনার ব্যক্তিগত জীবন, সময় এবং কাজগুলোর মধ্যে কীভাবে সমন্বয় করেন?

জয়া: সমন্বয় করাটা খুবই কঠিন একটা কাজ। যখন আমি কলকাতায় থাকি তখন বাংলাদেশে আমার কাজের পরিবেশটাকে মিস করি। আবার যখন দেশে থাকি, তখন কলকাতার বন্ধুদের এবং এখানকার পরিবেশ খুব মিস করি।অদ্ভুত একটা পরিস্থিতি! কিন্তু আমার অভিযোগ করার কোনো সুযোগ নেই কারণ এই পেশাটা আমি ভালোবেসে বেছে নিয়েছি।

প্রশ্ন: এবার একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন, জয়ার ব্যক্তিগত জীবনে কী ঘটছে?

জয়া: (হাসি) তেমন কিছুই না আসলে। আমার জীবনটা আমি চলচ্চিত্রের জন্য উৎসর্গ করেছি। আমার ব্যক্তিগত কোনো স্বপ্ন নেই, কারণ আমি চলচ্চিত্রের স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে আছি। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

বিনোদন