জয়ের খুব কাছে গিয়ে হারের অভিজ্ঞতা অনেক। এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচেও তাই হলো। পাকিস্তানের বিপক্ষে উত্তেজনার পারদ চড়িয়ে শেষপর্যন্ত হেরে গেলো ২১ রানে।
আপসোস নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এলেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। বললেন,‘২০/২২টি রান বেশি হয়ে গেছে।’সত্যিই তো বাংলাদেশ দল হেরেছে ২১ রানে। পাকিস্তান দল ২২ রান কম করলে বাংলাদেশের যা স্কোর হয়েছে তাতে তো জিতে যায়!
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ২৬৩ রান মোকাবেলা করে জেতা বাংলাদেশের জন্য কঠিন টার্গেট ছিলো। বিশেষ করে পাকিস্তানের সুশৃঙ্খল বোলিংয়ের বিপরীতে সেটা আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং। তারপরেও শেষপর্যন্ত লড়াইয়ে ছিলেন ক্রিকেটাররা। আল-আউটের আগে ২৪১ রানের ইনিংস প্রতিদ্বন্দ্বীতারই চিত্র।
তামিম ইকবাল এবং নজিমউদ্দিন চৌধুরীরর উদ্বোধনী জুটি যেভাবে ধীরে চলো নীতিতে খেলতে থাকে, তাকে যুদ্ধ জয়ের আভাস ছিলো না। পহাড় সমানা চাপ নিয়ে খেলতে যাওয়া তামিম ১৩টি বল মোকাবেলা করে রানের খাতা খোলেন। তাও এক রান নিয়ে। উদ্বোধনী জুটিতে ৪৫ তুলে উইকেটটা ছুড়ে এলেন নাজিমউদ্দিন। ১০.৫ ওভারে আইজাজ চিমার অফ সাইডের বল থার্ডম্যান দিয়ে বের করতে গিয়ে উমর গুলের হাতে ধরা পড়েন ব্যক্তিগত ৩০ রানে।
তামিম-জহুরুলের দ্বিতীয় জুটিতেও যোগ হয় ৪৫ রান। ভালোই খেলছিলেন দু’জনে। ভিক্টোরিয়ার ইনিংস ওপেন করার অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগান। এবারও ক্রিজে থেকে গেলেন তামিম। জহুরুলের ২৩ রান হওয়ার পর আফ্রিদি উইকেট ভেঙ্গে দেন। তামিমকে যত ধরণের বিতর্ক আকড়ে ধরেছিলো ৮৯ বলে ৬৪ রানের ইনিংস খেলে তা মুছে ফেলেন। যে হাফিজকে ১১টি বল ডট দিলেন শেষপর্যন্ত তার শিকার তামিম। বলটা অফ-সাইডে পিচ করে বাক নেওয়ায়, ঠিক সময়ে ব্যাট আনতে পারেননি। তখন ২৮.৩ ওভারে ১৩৫ রান ছিলো বাংলাদেশের। ষষ্ঠ জুটিতে সাকিব এবং নাসির হোসেন খেলাটাকে জমিয়ে তোলেন ৮৯ রান যোগ করে। ৪৭ রান তুলে নাসির বোল্ড আউট না হলে খেলার চেহারা অন্যরকম হতো। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমও মনে করেন নাসিরের আউটে খেলা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে,‘তামিমের আউট এবং নাসিরের আউটকে আমার কাছে খেলার টার্নিং পয়েন্ট মনে হয়। বিশেষ করে নাসির উইকেটে থাকলে অন্যরকম হতো।’
পাকিস্তানের ইনিংসের দিকে তাকালে দুই ওপেনার মোহাম্মদ হাফিজ এবং নাসির জামশেদকেই কারিগর মনে হবে। তারা যেভাবে খেলছিলেন তাতে করে একটা সময়ে মনে হচ্ছিলো ৩০০ রানের ওপরে গিয়ে শেষ হবে। অসম্ভব একটা টার্গেট ছুড়ে দেবে বাংলাদেশের সামনে। তা হয়নি বোলারদের বাদান্ততায়। হাফিজ এবং জামশেদ ২৩৫ রানে আলাদা হলে নিয়ন্ত্রণ পায় স্বাগতিক শিবির। হফিজ ৮৯ এবং জামশেদ ৫৪ রান করেন। উমর গুলের ব্যাট থেকেও ৩৯ রান আসে।
সাহাদাত হোসেন তিনটি, সাকিব দুইটি এবং রাজ্জাক ও মাশরাফি একটি করে উইকটে নেন। তিন পেসার খেলানোর যে ঝুজিটা নিয়েছিলো বাংলাদেশ, তার সুফল মোটামুটি পেয়েছে। ম্যাচটা বাংলাদেশ না জিতলেও পরের ম্যাচের প্রেরণা যোগাবে। মুশফিকুরও তাই মনে করেন,‘অনেকগুলো ইতিবাচক দিক আছে এই ম্যাচে। সেগুলো নিয়ে পরের ম্যাচ খেলতে যাবো। তামিম, সাকিব এবং নাসির খুবই ভালো ব্যাটিং করেছে। তামিম আর সাকিব তো বিশ্বমানের ক্রিকেটার। যে কোন সময় জ্বলে উঠতে পারে।’
এশিয়া কাপের আগে নানা বিতর্ক জেঁকে ধরেছিলো বাংলাদেশ দলকে। বিশেষ করে তামিমের বাদ পড়া প্রশ্নবানে জজ্জরিত করেছে বিসিবিকে। তামিমের এই ফেরাকে স্বস্তির মনে করছেন অধিনায়ক,‘বিশেষ করে তামিম যে জায়গা থেকে এসেছে এবং বড় একটা ইনিংস খেলেছে তার জন্য এটা খুবই ভালো হয়েছে।’
জয়ে এশিয়া কাপ শুরু করতে পারায় সুবাতাস বইছে পাকিস্তান শিবিরে। অলরাউন্ডার হাফিজ জানালেন,‘সাকিব এবং নাসির যখন খেলছিলো তখন একটা টেনশন ছিলো। কিন্তু বিশ্বাসও ছিলো বোলাররা ম্যাচ বের করে আনবে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ খুবই ভালো খেলেছে।’
পাকিস্তানকে একটা ভালো সংগ্রহ এনে দেওয়ায় পাশাপাশি বোলিং নৈপূণ্যের জন্য ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন মোহাম্মদ হাফিজ,‘আমার ইনিংসটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। উমর গুলও ভালো ব্যাট করেছে। সে নেটে চেষ্টা করছিলো। সুযোগ আসায় কাজে লাগিয়ে দেয়।’