ভারতীয় ব্যাটিংয়ে ‘দ্য ওয়াল’ নামে পরিচিত রাহুল দ্রাবিড়ের অভিষেক হয়েছিল আরেক গ্রেট সৌরভ গাঙ্গুলির সঙ্গে। সম্প্রতি দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে দীর্ঘদিনের সতীর্থ দ্রাবিড় (জ্যামি)’র অবসর নিয়ে অনেক কথা-ই বলেছেন ভারতের সফলতম টেস্ট অধিনায়ক গাঙ্গুলি।
ড্রেসিংরুমের বন্ধু প্রসঙ্গে টেলিগ্রাফকে দেওয়া গাঙ্গুলির সাক্ষাতকারটি তুলে ধরা হল-
দ্রাবিড়ের সিদ্ধান্তের সময়টা কি সঠিক হয়েছে?
কারো অবসর নিয়ে কথা বলা আমার বা যে কারোর জন্যই কঠিন। এটা একটা বড় সিদ্ধান্ত এবং এটা একজন ক্রীড়াবিদের জন্য জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।… যাই হোক তবু বলব, রাহুল সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে।
আপনার কাছে তাহলে এটা প্রত্যাশিতই ছিল?
হ্যাঁ।
আপনার জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া কতটা কঠিন ছিল?
খুবই কঠিন বিষয় ছিল… এ জন্য অনেকগুলো রাতই বিনিন্দ্র অতিবাহিত করতে হয়েছে। একজন ক্রীড়াবিদ তার কাজকে ভালোবাসে, ক্যারিয়ারকে ভালোবাসে.. খেলাটা তার কাছে অনেক কিছু। এটা হৃদয়ের অনেক কাছাকাছি থাকে। তাই অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত অনেক কঠিন বিষয়।
দ্রাবিড়ের সবচেয়ে বড় অবদান কোনটি?
যে সময়টাতে রাহুল খেলেছে সেখানে সে ভারতীয় ক্রিকেটের চিত্রটা বদলাতে সাহায্য করেছে। আমরা দেশের বাইরেও নিয়মিত জিততে শুরু করি.. (আর) দেশের মাটিতে প্রায় অপরাজেয় হয়ে উঠি। যেখানে প্রচুর রান করে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে রাহুল।
সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় আপনি দ্রাবিড়কে কোথায় রাখতে চান?
এটা কঠিন একটি বিষয়.. এটা বলাই যথেষ্ট হবে, রাহুল অনায়াসেই সর্বকালের সেরাদের তালিকায় স্থান পাবে।
ক্যারিয়ারের পুরোটা সময়জুড়েই দ্রাবিড়কে সচিনের ছায়ার তলে থাকতে হয়নি কি ?
সেভাবে ভাবছি না.. ক্রিকেট একটি দলগত খেলা এবং রাহুল অবশ্যই সন্তুষ্ট থাকবে যে সে অন্যদের পাশাপাশি সচিনের সঙ্গে খেলেছে।
আপনাদের দু’জনেরই একসঙ্গে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল (লর্ডস, ১৯৯৬).. দ্রাবিড় সম্পর্কে আপনার প্রথম অনুভূতি কি ছিল?
আমি রঞ্জি ট্রফিতে প্রথমবারের মতো রাহুলকে দেখি.. তার প্রতিভা ছিল.. অনেকেরই সেটা থাকে, কিন্তু সেটা ক্যারিয়ারে অর্থবহ করে ফুটিয়ে তুলতে পারে না যেটা রাহুল পেরেছে। তার দীর্ঘক্যারিয়ার ও রানের দিকে তাকালেই সেটা বোঝা যায়। সে তার প্রতিভার সদ্ব্যবহার করেছে এবং কঠিন পরিশ্রম করেছে।
দ্রাবিড়ের যে ইনিংসগুলো আপনার মনে থাকবে…
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০০১ এ ইডেন গার্ডেনে ১৮০ রানের ইনিংস, ২০০২ সালে হেডিংলেতে ১৪৮, ২০০৩-এ অ্যাডিলেডে ২৩৩, ২০০৪-এ রাওয়ালপিন্ডিতে ২৭০সহ ২০০১-২০০৫ সময়কালে টেস্টে অন্য যে কারো সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো আরো অনেক স্মরণীয় ইনিংস খেলেছে রাহুল।
টেস্টের তুলনায় দ্রাবিড় কি ওয়ানডেতে নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে ব্যর্থ ছিলেন?
না.. সেটা কিভাবে বলা সম্ভব? একদিনের ক্রিকেটে দশ হাজারেরও বেশি রান রয়েছে রাহুলের, যেটা বিশাল রান।
দলে দ্রাবিড় সবসময়েই একজন আদর্শ সতীর্থ ছিলেন, তাই নয় কি?
রাহুল ছিলেন একজন পূর্ণাঙ্গ টিমমেট বলতে যা বোঝায় সেটাই। যা বলা হত সেটাই তিনি পালন করতেন।
২০০০ এর এপ্রিলে আপনি অধিনায়ক থাকাকালে ম্যাচ কেলেঙ্কারির বিষয়টি ফাঁস হয়। কিন্তু দ্রাবিড় ছিলেন মুষ্টিমেয় সেই দলের সদস্য যারা ড্রেসিংরুমে কোনো কালো দাগ পড়তে দেননি।
হ্যাঁ। বিশেষত এক্ষেত্রে রাহুলের মতো দলের অন্য সিনিয়রদের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ। সেটা ছিল ভিন্ন একটি প্রজন্ম। অনেকেই যেটাকে সোনালি প্রজন্ম বলে অভিহিত করে থাকেন। আশা করি ভারতীয় ক্রিকেট আবারো সেরকম একটি প্রজন্ম দেখতে পাবে।
একটু অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক.. দ্রাবিড়ের সঙ্গে আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল, কিন্তু যখন তার কাছে অধিনায়কত্ব হারান তখন সম্পর্কটা ঘোলাটে হয়ে উঠেছিল.. আজ কিভাবে সেই সম্পর্ক মূল্যায়ন করতে চান?
আমাদের সম্পর্ক কখনো টানা-পোড়েনের মধ্যদিয়ে যায়নি। … হ্যাঁ রাহুল যখন অধিনায়ক হয় তখন আমি বাদ পড়েছিলাম। কিন্তু সেটা কোচ গ্রেগ চ্যাপেলের কারণে। সে কারণেই ওই সময়ে কিছুটা হতাশ ছিলাম। তবে কারণটি ঠিকই বুঝেছিলাম (কেন দ্রাবিড়কে চ্যাপেলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হচ্ছে)।
দ্রাবিড়কে কি ভারতীয় ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত রাখা উচিৎ?
অবশ্যই.. রাহুলের অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগানো উচিৎ। তবে খেলা থেকে কিছুদিন দূরে থাকার পর।
তাকে কোন ভূমিকায় দেখতে চান?
সেটা বোর্ডের ব্যাপার.. তারাই সেটা দেখবে। বর্তমানে রাহুলকে তার সন্তান সমিত ও অনভয়ের ভাল বাবা হিসেবেই থাকতে দিন।