সরকার আগে থেকে ব্যবস্থা না নিলে বিএনপি-জামায়াত সোমবার ঢাকায় বোমাবাজি করতো বলে মন্তব্য করেছেন মহাজোটের সংসদ সদস্যরা। তারা বলেছেন, মহাসমাবেশের নামে বিএনপি-জামায়াত শত শত বোমা ঢাকায় এনেছিলো।
সোমবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এ কথা বলেন।
ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলীর সভাপতিত্বে সোমবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর বক্তব্য রাখেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদমন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস, হুইপ সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক, র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) রফিকুল ইসলাম, ডা. আনোয়ার হোসেন, মজহারুল হক প্রধান, ফরিদুন্নাহার লাইলী, তহুরা আলী, অপু উকিল, মুহিবুর রহমান মানিক, জাতীয় পার্টির আবু তালহা প্রমুখ।
হুইপ সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, ‘দেশের উন্নয়নে সরকার ও বিরোধী দলের একসঙ্গে কাজ করা দরকার। আমাদের প্রয়োজন একটি দেশপ্রেমিক বিরোধী দল। অথচ আমাদের বিরোধী দল এমন একটি দল যারা আঁচলের নিচে নিরাপত্তা দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করে।’
তিনি বলেন, আজ বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া রাস্তায় নেমে এসেছেন। কিন্তু কেন? সরকার অত্যন্ত সচেতন থাকায় আজ বিএনপি সমাবেশের নামে কোন অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারেনি। তারা একাত্তরে মানুষ হত্যা করেছে। পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করেছে। তারা যেকোনো কাজ করতে পারে। আজ মহাসমাবেশের নামেও তারা মানুষ হত্যা করতে চেয়েছিলো।
এমিলি আরো বলেন, মহাসমাবেশে ঢাকার বড় বড় স্থাপনাসহ বিভিন্ন স্থানে শত শত বোমা হামলার পরিকল্পনা করেছিলো বিএনপি। তবে সরকার জনগণের জীবন রক্ষায় কঠোর ব্যবস্থা নেয়ায় তাদের সে পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে দেশে ৫শ’ বার বোমা হামলা হয়েছে। শেখ হাসিনার ওপর ১৯ বার হামলা হয়েছে। বিএনপির কাজই এটা। তাদের ধর্ম মিথ্যা, তাদের কর্মও মিথ্যা। তারা সব সময় পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়।
খালেদা জিয়ার একাধিক জন্মদিন রয়েছে জানিয়ে হুইপ আরো বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে কে জন্ম দিয়েছিলো, কয়বার ওনার জন্ম হয়েছিলো তা জনগণ জানতে চায়।’
বিরোধীদলীয় নেত্রীর সমালোচনা করে তিনি আরো বলেন, তিনি এতিমের সম্পত্তি আত্মসাৎ করেছেন। যিনি আদর্শ স্ত্রী হতে পারেন না, ভালো মা হতে পারেন না, তিনি ভালো নেত্রীও হতে পারে না।
সাগুফতা বলেন, ‘যারা মা-বোনের ইজ্জত নিয়েছে, তিনি তাদের রক্ষা করছেন। যার কাছে কালো টাকা থাকে তাকে চোর বলে। খালেদা জিয়া কালো টাকা সাদা করেছেন। খালেদা জিয়া চোর। তিনি বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারেন না।’
সোমবার সরকারের নেওয়া ব্যবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, ইতিহাস বিএনপি-জামায়াতকে সহ্য করবে না। জনগণকে বলবো, ‘আপনারা রাস্তা বের হতে পারেননি। ওরা মানুষ হত্যার পরিকল্পনা করেছিলো। বিএনপি-জামায়াতের বোমাবাজি করার পরিকল্পনা ছিলো।‘
মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, নির্বাচনের জন্য খালেদা জিয়া পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র কাছ থেকে ৫ কোটি রুপি নিয়েছেন-এ ঘটনায় বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। বেগম জিয়ার পাকিস্তান প্রীতি নতুন কিছু নয়।
অপু উকিল বলেন, ‘আপনি যখন লংমার্চ করেন, তখন গাড়িতে ড্রাইভার ছাড়া কেউ থাকে না। আপনি যখন হরতাল ডাকেন তখন কোনো পিকেটার পাওয়া যায় না। আপনি শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলতে চান। আপনার সময় শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে নির্মূল করতে চান বলেই আপনার সময়ে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের জন্য প্রণীত নিরাপত্তা আইন তুলে নিয়েছিলেন।’
এসব কারণে জাতীয় কমিশন গঠন করে বেগম খালেদা জিয়ার বিচার দাবি করেন তিনি।
অপু উকিল আরো বলেন, ‘আপনি সরকারকে ল্যাংড়া-লুলা করতে চান। সেটা কিভাবে করবেন? আপনাকে তো আল্লাহই লুলা-ল্যাংড়া করে রেখেছেন।’
সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ফরিদুন্নাহার লাইলী বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী লুলা-ল্যাংড়া বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে প্রতিবন্ধীদের অপমান করা হয়েছে। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য এমন হতে পারে না।
জাতীয় পার্টির আবু তালহা বলেন, বর্তমান মহাজোট সরকারের সফলতা অনেক বেশি হলেও বড় ব্যর্থতা হচ্ছে শেয়ারবাজার ধ্বস। শেয়ারবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। এ কারণে দেশে আজ মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। এ খাতে দোষী ব্যক্তিদের অবশ্যই শাস্তির মুখোমুখি দাঁড় করাতে হবে।
র আ ম মোকতাদির চৌধুরী বিএনপির ১২ মার্চ মহাসমাবেশের কড়া সমালোচনা করে বলেন, ‘মার্চ মাস মাথা না নোয়ানোর মাস। দেশের মুক্তিসংগ্রাম ও আত্মত্যাগের এক গর্বিত মাস। আর এ মাসেই বিএনপি সমাবেশ করছে, হুমকি দিচ্ছে মন্ত্রী/এমপিরা যেন ঘর থেকে বের না হন। আমার প্রশ্ন, আমরা ঘর থেকে বের হলে তারা কী করবেন? তারা কি একাত্তরের ২৫ মার্চের মতো আমাদের পিষ্ট করে ফেলবেন, মেরে ফেলবেন?’
তিনি বলেন, বিরোধী দলীয় নেতা সরকারকে ল্যাংড়া-লুলা করবেন বলে হুমকি দিচ্ছেন। তিনি কিভাবে ল্যাংড়া-লুলা করবেন? এটি একটি হাস্যকর উক্তি।
তিনি বলেন, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকামুখী কোনো যানবাহন বন্ধ করেনি সরকার। যে যার মতো শঙ্কিত ছিলো। তিনি বলেন, ‘তাদের রাজনীতি আমরা দেখেছি। জিয়াউর রহমানের শাসন দেখেছি। ১৯৯১ থেকে খালেদা জিয়ার রাজনীতি দেখেছি। পরে ২০০১ থেকেও দেখেছি। এর হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি। কিন্তু এখনও পুরোপুরি মুক্তি আসেনি। এখনও কালো ছায়া আছে। সেই ছায়া আমরা দেখেছি ফেব্রæয়ারিতে, মার্চে।’
মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা হচ্ছেন জননেত্রী, আর বিএনপি খালেদা জিয়াকে বলে দেশনেত্রী। জনগণের ভাগ্যেন্নয়নে শেখ হাসিনা কাজ করেন বলেই তিনি জননেত্রী। আর জনগণ নয়, তার একমাত্র টার্গেট দেশের ক্ষমতা। যাতে তিনি ক্ষমতায় থেকে লুটপাট, দুর্নীতি, লুন্ঠিত অর্থ বিদেশে পাচার এবং নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেন।’
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া বলেন সরকার নাকি ব্যর্থ! আসলে তিনি ঠিকই বলেছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থেকে এতিমের টাকা মেরে খেতে পারেনি, হাওয়া ভবন তৈরি করে দেশের অর্থ-সম্পদ লুন্ঠন করতে পারেনি, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে বোমা মেরে মানুষ খুন করতে পারেনি। এসব দিক দিয়ে সত্যিই সরকার ব্যর্থ।