বরাবরের মতোই ভিড়, দুর্ভোগ আর যাত্রী ভোগান্তির মধ্য দিয়ে গতকাল শুক্রবার ঈদ উপলক্ষে বাসের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রচণ্ড তাপদাহ সহ্য করে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকে পাননি বাড়ি ফেরার টিকিট। অন্যবারের মতো এবারও রয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ। আগের মতো বাস টার্মিনালগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী না থাকায় এবার যাত্রীদের ভোগান্তি আরও বাড়ছে।
প্রতি বছরই ঈদের আগে বাসের টিকিট হয়ে যায় সোনার হরিণ। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। শুক্রবার ভোরে সেহরি খেয়েই অনেকে দাঁড়ান টিকিটের লাইনে। সকালের আলো ফোটার আগেই দীর্ঘ লাইন তৈরি হয় কাউন্টারগুলোর সামনে।
ভোর ৫টায় রাজধানীর কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে দেশ ট্রাভেলস পরিবহনের টিকিট কাউন্টারের তালা খোলা হয়। তার আগেই কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন। তিন-চার ঘণ্টা আগে থেকেই যাত্রীরা টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়ান বলে জানান চাঁপাইনবাবগঞ্জের যাত্রী শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সেহরির পর শেখেরটেক বাসা থেকে রওনা হই। ভেবেছিলাম সবার আগে দাঁড়াব। কিন্তু এসে শুনি, লাইনের প্রথম মানুষটি রাত ২টায় এসে দাঁড়িয়েছেন। অন্যবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি ভিড় গাবতলী
বাস টার্মিনালে। মধ্যমমানের বাসের কাউন্টারগুলোতে ভিড় তেমন একটা নেই। নামকরা প্রতিষ্ঠানের কাউন্টারে উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। গাবতলী বালুর মাঠে হানিফ পরিবহনের কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভোর সাড়ে ৫টায় টিকিট বিক্রি শুরুর আগেই লাইনে দাঁড়ান কয়েকশ’ মানুষ। লাইন নিয়ন্ত্রণে ছিল না স্বেচ্ছাসেবক বা নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী। ফলে যে যার মতো লাইন ভঙ্গ করে সামনে টিকিট নেওয়ার চেষ্টা করেন। ধাক্কাধাক্কি ও হুড়াহুড়িতে নাকাল হতে হয় যাত্রীদের। নারীদের জন্য আলাদা লাইন থাকলেও সেখানেও ছিল বিশৃঙ্খল অবস্থা। পুরুষরা দখল করে নেন লাইন। নারী যাত্রীরা পড়েন দুর্ভোগে। নীলফামারীর আবুল কালাম আজাদ বলেন, পুলিশ নেই ফলে কেউ কারও কথা মানছে না।
তবে অন্যবারের মতোই অভিযোগ, বাড়তি ভাড়ার। যাত্রীদের অভিযোগ, ঘোষণা থাকলেও সরকার নির্ধারিত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। রংপুর-দিনাজপুর রুটে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৮৫০ টাকা। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটের ভাড়া ৫২০ ও যশোরের টিকিট ৬৫০ টাকা। একইভাবে বরিশাল, খুলনা, কুষ্টিয়াসহ সব রুটেই যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।
যাত্রীদের অভিযোগের জবাবে পরিবহন প্রতিনিধিদের দাবি, ঈদে সরকার নির্ধারিত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। অন্য সময় যাত্রী ধরতে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম নেওয়া হয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া ৯৪ পয়সা। মিনিবাসে ভাড়া ৯৭ পয়সা। যাত্রাপথে সেতু ও ফেরি পারাপারের টোল যাত্রীকে দিতে হবে। তা ধরেই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু রাজশাহীর বাসে যাত্রী নাটোর গেলেও শেষ গন্তব্য অর্থাৎ, রাজশাহীর ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। ২৫০ টাকার ভাড়া হয়ে যাচ্ছে ৪০০ টাকা। হানিফ পরিবহনের ম্যানেজার (উত্তরাঞ্চল) ওয়াহিদুজ্জমান জানান, আসলে বাড়তি ভাড়া নয়। তবে যাত্রী যেখানেই নামুক, টিকিটে শেষ গন্তব্যের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
১৫ ও ১৬ জুলাইয়ের টিকিটের চাপ বেশি। ওয়াহিদুজ্জমান জানান, সবাই ওই দিনের টিকিট চাওয়ায় তাৎক্ষণিক ঘাটতি দেখা দিলেও পরে অনেকে ওই দিনের আগে ও পরের টিকিট নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের সুবিধার্থে হানিফ পরিবহনের পক্ষ থেকে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ গাড়ি চলবে। এতে সিট সংখ্যা প্রায় ৩২ হাজার। চাহিদার ভিত্তিতে আরও ৫০ থেকে ১০০ গাড়ি ছাড়ার প্রস্তুতিও রয়েছে।
দেশ ট্রাভেলস পরিবহনের ম্যানেজার রতন হোসেন জানান, ঢাকা থেকে বাস ছাড়ার সময় অতিরিক্ত ভিড় থাকলেও বাস ঢাকায় ফেরে যাত্রীশূন্য অবস্থায়। এ কারণে বিভিন্ন রুটে শেষ গন্তব্যের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।
গাবতলীতে ভিড় থাকলেও মহাখালী বাস টার্মিনালের চিত্র প্রতিদিনের মতোই। মূলত ঢাকার পাশের জেলাগুলোর জন্য এই টার্মিনাল হওয়ায় এখানে আগাম টিকিটের ব্যবস্থা নেই। তবে সিলেট, বিয়ানীবাজার, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহীসহ দূরপাল্লার কয়েকটি পথে মহাখালীতেও ঈদের আগে আগাম টিকিট ছাড়া হয়েছে বলে মহাখালী বাস টার্মিনালের সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম জানান। একই চিত্র রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালেও।
যত ভোগান্তিই হোক, একটি টিকিট হাতে পেয়ে সব দুঃখ-কষ্ট ভুলেছেন যাত্রীরা। পল্লবী থেকে লালমনিরহাটের টিকিট কিনতে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান হানিফ পরিবহনের কাউন্টারের লাইনে ছয় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে বেলা সাড়ে ১১টায় টিকিট পান। তিনি বলেন, দীর্ঘ অপেক্ষার পর টিকিট, বেশ খুশি লাগছে।