ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক: ডাকাতপ্রবণ ৪০ পয়েন্ট

ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক: ডাকাতপ্রবণ ৪০ পয়েন্ট

pointঈদ সামনে রেখে মহাসড়কে বাড়ে ডাকাতদের তৎপরতা। চাঁদাবাজি করতে নতুন কৌশল নেয় পুলিশও। ঈদে ঘরমুখো যাত্রী ও বন্দরে পণ্য আনা- নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ দূর করতে এবার ডাকাতপ্রবণ ৪০টি পয়েন্টের তালিকা করেছে জেলা পুলিশ। ডাকাতদের প্রস্তুতির সম্ভাব্য স্থান, ডাকাতির এলাকা ও ডাকাতি শেষে নির্বিঘ্নে নেমে যাওয়ার স্থান বিবেচনায় এনে এ তালিকা করা হয়েছে। তালিকা ধরে এবার রাখা হবে পুলিশ পাহারা। ডাকাতপ্রবণ এসব এলাকার প্রতিটি পয়েন্টে সার্বক্ষণিক পাহারায় থাকবে পাঁচজন করে পুলিশ। পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধেও কন্ট্রোল রুম খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মহাসড়কের যে পয়েন্টে পুলিশ চাঁদার জন্য হয়রানি করবে, সেখান থেকেই যোগাযোগ করা যাবে এ কন্ট্রোল রুমে। সংশ্লিষ্ট পুলিশকে চিহ্নিত করতে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মহাসড়কে যানবাহন চলাচল নিরাপদ করতে ডাকাতপ্রবণ ৪০টি পয়েন্টে থাকবে সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারা।’ একই প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘মহাসড়কে পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও হয়রানির অভিযোগও পেয়েছি আমরা। তাই কন্ট্রোল রুম খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ডাকাতপ্রবণ ৪০টি পয়েন্ট পেয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আছে ৩৪টি পয়েন্ট। এ মহাসড়কের কুমিল্লা অংশকেই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে জেলা পুলিশ। তালিকায় সর্বাধিক ১২টি পয়েন্ট রয়েছে কুমিল্লা অংশে। ফেনী অংশে আছে ৯টি পয়েন্ট। আর সীতাকুণ্ড ও মিরসরাইয়ের দুই উপজেলায় এমন ডাকাতপ্রবণ এলাকা রয়েছে ৬টি। কুমিল্লার শেষ অংশ থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত সাতটি পয়েন্ট আছে। বাকি ৬টি পয়েন্ট চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে।

বৃষ্টির কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কিছু অংশে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। এসব স্থান দিয়ে গাড়ি যেতে হয় আস্তে আস্তে। ডাকাতরা এসব পয়েন্টকে ডাকাতির জন্য বেছে নিতে পারে বলে তথ্য দিয়েছেন গোয়েন্দারা। তাই ছোট-বড় এসব গর্ত মেরামত করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে সাত দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে পুলিশ। বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান-ট্রাক পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবু মোজাফফর বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে টানা বৃষ্টিতে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চালনো যাচ্ছে না। এসব স্থানে ডাকাতির আশঙ্কা আছে।

পরিবহন মালিকরা ডাকাতি বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ নিতে বলেছেন হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পুলিশকে। তল্লাশির নামে পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধেও হস্তক্ষেপ চেয়েছেন গাড়ির মালিকরা। আন্তঃজেলা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মনির আহমদ বলেন, ‘সারা বছর ডাকাতি হলেও ঈদের সময় মহাসড়কে এ নিয়ে ভোগান্তি বাড়ে। তাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে প্রশাসনকে।’ একই প্রসঙ্গে দেশের অন্যতম পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান হা-মীম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সাহাবউদ্দিন চৌধুরী ফারডু সমকালকে বলেন, ‘বন্দরে পণ্য আনা-নেওয়া করতে আমাদের ৯০টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রতিদিন গড়ে ৪০টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান পণ্য নিয়ে যাতায়াত করে। ঈদের সময় ডাকাতির ঘটনা বেশি থাকায় আমাদের টেনশনও অনেক বেশি থাকে। ডাকাতির কবলে পড়ে একটি চালান যদি সময়মতো যেতে না পারে তাহলে বিদেশে আমাদের হাজারো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়।’

পরিবহন মালিকদের নিয়ে বৈঠক করল প্রশাসন :মহাসড়কে যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন করতে গতকাল বুধবার চট্টগ্রামের পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। বিশেষ এ বৈঠকে জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, সিএমপি, সওজের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ বৈঠকে বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে সাত দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। বৈঠকে পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান-ট্রাক পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবু মোজাফফর, সড়ক ও জনপথ বিভাগের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার জিয়া উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর