গৃহশিক্ষকের এ কেমন আচরণ!

গৃহশিক্ষকের এ কেমন আচরণ!

mamunচুরির ঘটনা ফাঁস করে দেওয়ায় ছাত্রকে হাত-পা বেঁধে একটি ড্রেনে ফেলে দিয়েছেন গৃহশিক্ষক। সোমবার সকালে ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীর সামনের রাস্তা থেকে জোবায়ের হোসেন (১৩) নামে ওই ছাত্রকে একটি প্রাইভেটকারে তুলে নেয় তার গৃহশিক্ষক মামুনুর রশীদ। পরে হাত-পা বেঁধে ফতুল্লার পঞ্চবটীর হরিহরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের একটি ভবন ও সাইকেল ফ্যাক্টরির মধ্যকার ড্রেনে ফেলে রেখে চলে যায়।

স্থানীয়রা এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লিটনের উপস্থিতিতে জোবায়েরকে উদ্ধার করেন। সে ফতুল্লার শাসনগাঁও শাহী মসজিদ এলাকার আসলাম মিয়ার ভাড়াটে নাসির হোসেন ও জিয়াসমিন আক্তার দম্পতির ছেলে এবং মুসলিম নগর কেএম উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র।

উদ্ধারের পর জোবায়ের জানায়, তার বাবা একটি চায়ের দোকান চালান এবং মা স্থানীয় একটি গার্মেন্টে চাকরি করেন। করনী গ্রুপের অবন্তী কালার নিটের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ গৃহশিক্ষক হিসেবে তাকে সন্ধ্যার পর বাসায় এসে পড়ান। গত ১৫ দিন আগে বাসায় পড়ানোর সময় শিক্ষক মামুন তাকে রুটি আনতে বাসার বাইরে পাঠান। রুটি নিয়ে এসে জোবায়ের দেখতে পায় তাদেও বাসায় ওয়্যার ড্রপের চাবি শিক্ষক মামুনের হাতে। শিক্ষক এ ঘটনা কাউকে না বলতে জোবায়েরকে শাসান। পরদিন শাসানোর পাশাপাশি এ ঘটনা কাউকে না বলার জন্য ৫ হাজার টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখান।

জোবায়েরের বাবা নাসির হোসেন বলেন, ওয়্যার ড্রপে ৩১ হাজার টাকা ছিল এবং এর চাবি ঘরের মধ্যেই রাখা ছিল। ঘটনার পরদিন টাকা হারানোর বিষয়ে জোবায়ের কিছু বলেনি। রোববার রাতে জোবায়ের জানায়, ১৫ দিন আগে শিক্ষক মামুন টাকা নিয়েছেন এবং এ ঘটনা কাউকে না বলতে তাকে শাসিয়েছেন। এতদিন ভয়ে এ কথা কাউকে বলেনি। ছেলের কাছ থেকে ঘটনা জানার পর রোববার রাতে স্থানীয়দের জানালে তারা সোমবার রাতে সালিশের আয়োজন করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়েই মামুন এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

জোবায়ের আরও জানায়, সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাসা থেকে বেরিয়ে সে বিসিকের সামনে আসামাত্র স্যার একটি প্রাইভেটকারে করে তার সামনে থামেন। স্যার তাকে গাড়িতে উঠতে বললে সে ওঠে। এরপর শিক্ষক ও তার সহযোগী জোবায়েরর হাত এবং পা বেঁধে ফেলেন। পরে গাড়িতে করে নিয়ে ২ ভবনের মাঝের একটি ড্রেনে ফেলে চলে যান। কিছুক্ষণ পর তার পকেটে থাকা মোবাইল ফোনটি বেজে ওঠে। ফোনের শব্দ শুনে স্থানীয় এক ব্যক্তি ড্রেনের সামনে এসে তাকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দেখতে পান। পরে লিটন চেয়ারম্যানসহ অন্যরা এসে তাকে উদ্ধার করেন।

ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান খান বলেন, তারা অবন্তী কালার নিটে গিয়ে ঘটনা জানিয়ে মামুনুর রশীদকে তাদের হেফাজতে দিতে বললে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হুমায়ূন কবীর জানান, মামুন প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করেছে সকাল ৮টায়। কিন্তু ঘটনা সাড়ে ১০টার। মামুন প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে থাকলে তা সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়বে। তাদের প্রতিষ্ঠানে ৪টি সিসি ক্যামেরা লাগানো রয়েছে। ২টির ফুটেজ পুলিশকে দেখানো হয়েছে। ওই ২টির ফুটেজে কিছু ধরা পড়েনি। বাকি ২টি সিসিটিভি ফুটেজ ওপেন না হওয়ায় সেগুলো দেখা সম্ভব হয়নি। বাকি ২টি সিসিটিভির ফুটেজে মামুনের বাইরে যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হবে বলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ