মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ করা হলে এটা হবে সরকারের হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামী উগ্রপন্থী দলগুলোকে নীরব সমর্থন দেওয়া। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান এমন মন্তব্য করেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সোমবার ‘কন্যা শিশুর বিয়ের বয়স ১৮ বছর বহাল রাখাতে হবে’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি এটির আয়োজন করে।
সভায় মিজানুর রহমান বলেন, মেয়েদের বিয়ের বয়স কমানো মানে হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামী উগ্রপন্থী দলগুলোর প্রতি সরকারের নীরব সমর্থন। এর পরিণতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা এখানে বসে দেখা অসম্ভব। এই সাংঘাতিক ভবিষ্যতের দিকে যেন আমরা যাত্রা শুরু না করি।
এই বিবাহ আইন নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলে লুকোচুরি খেলা চলছে’ অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘সরকার একবার বয়স কমানোর ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করছে, আবার মন্ত্রী-আমলারা বয়স আগের মতোই থাকবে বলে মন্তব্য করছেন।
রাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের এ ধরনের লুকোচুরি চলতে পারে না। তথ্যাধিকার আইন অনুযায়ী এ বিষয়ে সরকারের সকল সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রের সামনে তুলে ধরতে হবে।
মেয়েদের বয়স কমানোর এ সিদ্ধান্ত আদালত নিলেও এটা হবে অসাংবিধানিক মন্তব্য করে তিনি বলেন, বয়স কমানো হলে এটা হবে রাষ্ট্রীয় অন্যান্য আইনের পরিপন্থী। আমি আইনের ছাত্র হিসেবে যতটুকু বুঝি, এই সিদ্ধান্ত যদি আদালতও নেয়, তাহলে এটা রাষ্ট্রদ্রোহী ও অসাংবিধানিক। আর এই সিদ্ধান্ত সরকারি আমলারাতো কোনোভাবেই নিতে পারেন না।
সিডো চুক্তির উপর বাংলাদেশ প্রসঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন একটি প্রতিবেদন তৈরি করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই প্রতিবেদনে আমরা বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক ইতিবাচক কথা উল্লেখ করেছি।
কিন্তু আন্তর্জাতিক সকল চুক্তিকে সরকার বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যদি মেয়েদের বিয়ের বয়স কমিয়ে দেয় তাহলে আমাদের প্রতিবেদনে আমূল পরিবর্তন ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। আমরা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরতে চাই না।
‘সরকার মেয়েদের বয়স কমালে কিছু মহল থেকে গ্রামীণ বাংলাদেশে অনেক সমর্থন মিলবে’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, গ্রামের পিতারা তাদের কন্যাসন্তানকে নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, তারা নিরাপত্তার স্বার্থে মেয়েকে আগে বিয়ে দিতে চান।
নিরাপত্তাহীনতার কারণ দেশে আইনের শাষণের সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি এবং কিছু মানুষের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় যা খুশি করার সুযোগ। এ ক্ষেত্রে অনেক বাবা মেয়ের নিরাপত্তার স্বার্থে এই আইনকে সমর্থন করতে পারেন।
‘মেয়েদের নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যর্থতার দায় কেন একজন কন্যাশিশুকে তার জীবন ও শৈশব দিয়ে খেসারত দিতে হবে’— প্রশ্ন রাখেন তিনি।
‘নিজেই নিজের ক্ষতি করে, নিজের সঙ্গে প্রতারণা করে এই জাতির কি উন্নতি সম্ভব’— এই প্রশ্ন রেখে মিজানুর রহমান আরো বলেন, যেখানে দেশে বাল্যবিবাহ রোধ করাই একটি চ্যালেঞ্জ; এটা কিভাবে দূর করা যায় সেটা আমাদের ভাবতে হবে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এর পরিবর্তে বিয়ের বয়স কমানো এর সমাধান হতে পারে না।
নারীনেত্রী শামীমা পারভীন বলেন, কৈশোরে অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন একটা সমস্যা। কিন্তু এটা প্রতিরোধে কোনো নির্দিষ্ট ব্যবস্থা না নিয়ে বাল্যবিবাহ মেনে নেওয়া যায় না।
তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন মানুষ অনেক উন্নত দেশে বিয়ের বয়স ১৬ আছে বলেন, কিন্তু সেসব দেশের প্রেক্ষাপট আর আমার দেশের প্রেক্ষাপট এক নয়। আমার দেশের অবস্থা অনুযায়ী আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে।
মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, উইমেন ফর উইমেনের সাবেক সভাপতি সালমা খান, জাতীয় নারী জোটের আহ্বায়ক আফরোজা হক রীনা, স্টপস টুওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার প্রমুখ।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম সভায় উপস্থাপিত সুপারিশসমূহ জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে ঘোষণা দেন।