মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী পুলিশের হাতে আটক বিজিবির নায়েক আবদুর রাজ্জাককে নিয়ে জটিল হয়ে উঠছে পরিস্থিতি। নিজেরা অপহরণ করে এখন নায়েক রাজ্জাকের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা দেওয়ার পরিকল্পনায় অনড় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা সম্পর্কেও দায়িত্বশীল কেউ স্পষ্ট করে মুখ খুলছেন না। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট হয়, এমন কোনো পদক্ষেপ না দিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সমকালকে বলেন, কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে। এর বেশি এ মুহূর্তে আর কিছু বলা সম্ভব নয়।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিজিবির কঠোর টহলে সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের অবৈধ ইয়াবা ব্যবসার ক্ষতি হওয়ার প্রতিশোধ হিসেবেই তারা বিজিবি সদস্যের ওপর এ ধরনের অপমানজনক আচরণ করছে। গত ২০ জুন মিয়ানমারের অন্যতম প্রভাবশালী দৈনিক বার্মা টাইমসে ‘গভর্নমেন্ট ব্যাকড সিন্ডিকেট আনহ্যাপি উইথ বাংলাদেশ ইয়াবা ক্র্যাকডাউন’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা ঐতিহ্যগতভাবেই ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত এবং ইয়াবার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কঠোর পদক্ষেপে তারা নাখোশ।
উখিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বিজিবির টেকনাফের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু জার আল জাহিদ জানিয়েছেন, রাজ্জাককে ফিরিয়ে আনতে দু’দেশের মধ্যে পতাকা বৈঠকের জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। দ্রুত পতাকা বৈঠক হবে এবং রাজ্জাককে ফেরত পাওয়া সম্ভব বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সূত্র জানায়, মিয়ানমারের সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাফ নদীর যে এলকায় গোলাগুলি হয়েছে, সেখান থেকেই গত এক বছরে প্রায় ১২ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে বিজিবি। নাফ নদীর এই এলাকা চওড়া কম হওয়ায় এবং দমদমিয়া এলাকা থেকে আন্তঃজেলা বাস চলাচলের সুযোগ নিয়ে ওই রাস্তাটি ইয়াবা পাচারের কাজে ব্যবহার করছে পাচারকারীরা।
সূত্র জানায়, প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু এবার নয়, ২০১৪ সালের ২৮ মে মিয়ানমারের বিজিপি বাংলাদেশের বিজিবি সদস্য মিজানকে হত্যা করার পর তার মৃতদেহ হস্তান্তরেও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ জটিলতার সৃষ্টি করে এবং মিজানকে আরএসও সদস্য হিসেবে অপপ্রচার চালায়। পরে সহজ রাস্তা বাদ দিয়ে দুর্গম পাহাড়ি এলাকা দিয়ে মিজানের মৃতদেহ হস্তান্তর করে। মিয়ানমারের বিজিপির বারবার অপেশাদার এবং বর্বর আচরণের বিপরীতে বাংলাদেশ বারবারই পেশাদার আচরণ ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে।
বার্মা টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারে যে ৩৭টি কারখানায় ইয়াবা উৎপাদন করা হচ্ছে, তা মিয়ানমারের প্রভাবশালী সেনা কর্মকর্তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই কারখানাগুলো থেকে উৎপাদিত ইয়াবা বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ হয়ে অন্য দেশেও পাচার করা হয়। এই পাচারে বাংলাদেশেরও কিছু প্রভাবশালী চক্র জড়িত, যাদের সঙ্গে মিয়ানমারের ইয়াবা উৎপাদনকারীদের সুসম্পর্ক রয়েছে।
এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০০৫ সালের আগে থাইল্যান্ডে ইয়াবা পাচার করত মিয়ানমারের সরকার প্রভাবিত মাদক সিন্ডিকেট। ২০০৫ সালে থাইল্যান্ড সরকার ইয়াবার বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানোর পর ইয়াবা পাচারের নতুন লক্ষ্য হয় বাংলাদেশ। সম্প্রতি বাংলাদেশও ইয়াবার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে বাংলাদেশেও পাচার বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে মিয়ানমারের ইয়াবা পাচারকারী চক্র দৃশ্যত বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের প্রতি নাখোশ।