আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের এক সময়কার সহসমন্বয়ক আবদুল্লাহ আল গালিবকে গ্রেফতারের সময় ডিবি পুলিশ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করেছিল। এসব নথি ঘেঁটে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, গালিব ‘জুনুদ আল তাওহীদ ওয়াল খিলাফাহ’ নামে নতুন একটি সশস্ত্র জঙ্গি গ্রুপের সদস্য। এই গ্রুপটি সম্প্রতি দেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। এই গ্রুপটির লক্ষ্য ইসলামী স্টেট-আইএসের আদলে বাংলাদেশে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।
তবে গালিবের কাছ থেকে উদ্ধার করা অস্ত্র প্রশিক্ষণের একটি ভিডিও কিছুটা দুশ্চিন্তায় ফেলেছে গোয়েন্দাদের। বৃক্ষরাজিঘেরা কোনো একটি গ্রামের টিনের ঘরের পাশে উঠানে নেওয়া সেই প্রশিক্ষণে অন্তত ১০ জনের হাতে আধুনিক অস্ত্র দেখা গেছে। সেই প্রশিক্ষণকেন্দ্রটি কোথায়, তা খুঁজে বের করতেই ঘুম হারাম তাদের। তৃতীয় দফা রিমান্ডেও প্রশিক্ষণকেন্দ্রটি সম্পর্কে মুখ খুলছেন না গালিব।
গালিব মুখ না খুললেও ১৫ মিনিটের ওই ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দাদের ধারণা, অস্ত্র প্রশিক্ষণের দৃশ্যটি কোনো গ্রামের। গ্রামটি ভারতের সীমান্তবর্তী হতে পারে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, বিষয়টি তারা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছেন। কোথায় সেই প্রশিক্ষণ, প্রশিক্ষক কে বা মুখোশ পরে কারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, তা জানতে তদন্ত চলছে। তিনি বলেন, গালিবকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই সংগঠনের সদস্য ফিদা মুনতাসির সাকের এবং ফাইয়াস ইসমাম খান নামে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদেরও অস্ত্রের প্রশিক্ষণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
গত ৩০ মে রাজধানীর বারিধারা ডিওএইচএস এলাকার বাসা থেকে আবদুল্লাহ আল গালিবকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তার কাছ থেকে চারটি হার্ডডিক্স, দুটি পোর্টেবল হার্ডডিক্স, ১০টি সিডি ও বিভিন্ন ধরনের জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়। এগুলো যাচাই করেই পাওয়া যায় অস্ত্র প্রশিক্ষণের ভিডিওটি।
ডিবি পুলিশের তথ্যানুযায়ী, গালিবের বাবা সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর। গ্রামের বাড়ি যশোরের লেবুপাড়ায়। ঢাকার একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল থেকে ‘এ’ লেভেল, ‘ও’ লেভেল শেষ করে বারিধারায় বাবার বাসায় থেকেই আতরের ব্যবসা শুরু করেছিলেন গালিব। এর আড়ালেই তিনি সশস্ত্র জিহাদের লক্ষ্যে কাজ করতে থাকেন। সম্প্রতি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গ ছাড়াও নিষিদ্ধ হিযবুত তাহ্রীর ও জেএমবির সঙ্গেও গালিবের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন গোয়েন্দারা। অপর দুই সদস্যও এক সময় হিযবুত তাহ্রীর ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে জানতে পেরেছেন তারা।
ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. শাহজাহান বলেন, অস্ত্র প্রশিক্ষণের স্থানটি সম্পর্কে দুই দফা রিমান্ডেও মুখ খোলেননি গালিব। সর্বশেষ তৃতীয় দফায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এই প্রশিক্ষণে নিজে অংশ নিয়েছেন কি-না, না নিয়ে থাকলে ভিডিওটি তার কাছে কে দিয়েছে- দীর্ঘ জিজ্ঞাসায়ও এ বিষয়ে একেবারে নিশ্চুপ গালিব। তবে তিনি সশস্ত্র জিহাদ এবং নিজের লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন। আইএসের আদলে দেশে জিহাদের পরিকল্পনার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, ট্রাউজার ও কালো গেঞ্জি ও মুখোশ পরা অবস্থায় ৯ তরুণ পিস্তল নিয়ে শারীরিক কসরতের পাশাপাশি অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে একজন প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। একজনের হাতে ধারালো ছুরিও দেখা যায়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, চারদিকে সবুজ গাছেঘেরা কোনো বাড়ির আঙিনা বা খোলা স্থানে মাটিতে ওই প্রশিক্ষণ চলছে। পাশে টিনের একচালা একটি ঘরও দেখা যায়। প্রশিক্ষণস্থলের চারদিক কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ভিডিওটির শুরুতে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়দা নেতা আনোয়ার আল-আওলাকীর একটি বক্তব্য রয়েছে। পরে তা একজন বাংলায় অনুবাদ করে দুই পাশে দুই অস্ত্রধারীকে শপথ পড়াতে দেখা যায়।