‘বাংলাদেশে যাওয়ার আগে থেকেই ভারতীয় ক্রিকেট দলে নানা টালবাহানার কথা পড়ছিলাম মিডিয়ায়। কয়েকজন তারকা ক্রিকেটার নাকি এই সফরে যেতেই চায়নি। তারা বোধহয় মনে করেছিল, এ তো বাংলাদেশ সফর। প্রথম সারির দল না গেলেই বা ক্ষতি কী? বাংলাদেশে ভারতের যে দলই যাক না কেন, সিরিজ জিতেই ফিরবে।’
এমনটাই লিখেছেন, ভারতীয় ক্রিকেট বিশ্লেষখ অশোক মলহোত্র।
অশোক আরো লিখেছেন:
তার ওপর চলল কোচ নিয়ে নাটক। চিফ কোচ বলে কাউকে নেওয়া হল না। উল্টে বলা হল, এই সফরের কোচের নাকি দরকারই নেই। বাংলাদেশে রওনা হওয়ার আগের দিনই রবি শাস্ত্রীকে তা সদর্পে ঘোষণাও করতে শুনলাম।
বাংলাদেশের প্রতি এই অবহেলার প্রবণতা সিরিজ শুরুর আগে থেকেই ভারতীয় ক্রিকেট দলে দেখা যাচ্ছিল। বিপক্ষকে নেহাত অবহেলা করে একটা সিরিজ খুইয়ে দেশে ফেরার চেয়ে বড় অপরাধ আর কী হতে পারে? কী করে বাংলাদেশের ১৯ বছরের এক আনকোরা পেসারের কাছে একের পর এক আত্মসমর্পণ করে এলো আমাদের বড় বড় তারকা ব্যাটসম্যানরা, তা ভেবে অবাক হয়ে যাচ্ছি।
মুস্তাফিজুর ছেলেটা যে প্রচণ্ড আগ্রাসী বোলিং করে, তা কিন্তু নয়। ওর হাতে মারাত্মক কাটার আছে ঠিকই, কিন্তু গতি নিয়ন্ত্রণ করে একেবারে ঠিকঠাক জায়গায় যে বলটা রাখে ও, সেটাও কম বিপজ্জনক নয়। রোববার ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের কাছে অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠল ওর এই বোলিংই। রোহিত, ধোনি, রায়নারা তো ওর এই স্লো বলেই আউট হল। এমন বলে যে ওরা কোনো দিন খেলেনি, তা তো নয়। কিন্তু এই বাঁ হাতি পেসারের বিরুদ্ধে ধোনিদের অস্বস্তি দেখে মনে হচ্ছিল ওর বোলিংটা বুঝতে বেশ অসুবিধা হচ্ছিল ওদের।
কিন্তু এই বলগুলো খেলতে ওদের এত অসুবিধা হলো কেন?
এখানেই তো অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের প্রশ্নটা এসে যাচ্ছে। যে জন্য বাংলাদেশকে নিয়ে সম্ভবত ওরা হোমওয়ার্কটা ঠিকমতো করেনি। এমনকী প্রথম ম্যাচে হারের পরও নয়। প্রথম ম্যাচে মুস্তাফিজুরের বোলিং দেখার পরও কী ভাবে সেটা সামলাতে হবে, তা যখন মাঝের দু’দিনে বুঝে উঠতে পারল না ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা, তখন বলতেই হবে কোচের অভাবে ভুগছে গোটা দল। আবার বলছি, দলে শাস্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে মনে প্রশ্ন জাগছে। রবি কি ক্রিকেটারদের টেকনিক্যাল দিকটাও দেখছে, না কি শুধু ওদের মানসিক ভাবে চাঙ্গা রাখাটাই ওর প্রধান কাজ? বাইরে থেকে দেখে তো মনে হচ্ছে যেন ওদের বলে দেওয়ার কেউ নেই, ভুলগুলো কোথায় হচ্ছে এবং কী ভাবে সেগুলো শোধরাতে হবে।
কোহলি আগের দিন বাজে শট খেলতে গিয়ে আউট হয়। এদিনও যে খুব ভালো বলে আউট হলো, তা কিন্তু নয়। ওকে দেখে মনে হচ্ছে আইপিএল মোড থেকে নিজেকে বার করতে পারেনি। দেখছিলাম, শেষ ন’টা ওয়ান ডে ম্যাচে ওর একটাও হাফ সেঞ্চুরি নেই। এ যদি ওর ব্যাড প্যাচই হবে, তা হলে আইপিএলের ঝোড়ো ইনিংসগুলো কী করে খেলল? এদিনও দেখলাম আউট হয়ে ফেরার পর বিপক্ষের ক্রিকেটারদের সঙ্গে তর্কাতর্কি করছিল। আগের দিন ধোনির সঙ্গে অত বড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও এত অসতর্ক কেন? তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে না পড়ে কোহলি বরং নিজের খেলায় মন দিক। দলের মধ্যে ওকে এই কথাটা বলার কেউ নেই বোধহয়।
ধোনির এদিন চারে আসার আইডিয়াটা ঠিকই ছিল। কিন্তু স্ট্র্যাটেজিটা খাটতে দিল না বাংলাদেশের বোলাররা। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের নিয়ে যে ওদের হোমওয়ার্কটা দুর্দান্ত হয়েছে, সেটাই বোঝা গেল ওদের বোলিং ও ফিল্ডিং দেখে। ভারতের প্রত্যেক ব্যাটসম্যানের দুর্বল জায়গাগুলো ওরা চিহ্নিত করেছে। সেখানেই বল করছে এবং ফিল্ডিং সে ভাবেই সাজাচ্ছে। ধোনি যখন ব্যাট করছিল, তখন তো একটা সময় দেখলাম ইনার সার্কলে সাতজন ফিল্ডার। বোঝা গেল, ধোনিকে চাপে রাখার স্ট্র্যাটেজি তৈরি ওদের। জানে, ধোনি প্রথম দিকে স্ট্রাইক রোটেট করে খেলে। ধোনির খুচরো রান নেওয়াটা আটকে ওরা ভারত অধিনায়ককে চাপে ফেলে দিল।
এটাই ভালো হোমওয়ার্কের ফল। আর এই অভাবটাই দেখা গেল ভারতীয়দের মধ্যে। – আনন্দবাজার পত্রিকা