বিএনপির ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচিকে সামনে রেখে সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে এগুচ্ছে ফরিদপুরের রাজনীতি।
কর্মসূচির মূল আয়োজক সংগঠন বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীকে শহরে দেখলেই তাদের হাত-পা ভেঙে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতারা।
অন্যদিকে, যেভাবেই হোক ‘ঢাকা চলো’ কর্মসূচি সফল করার প্রস্তুতি নিয়েছেন ফরিদপুর বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
জেলা আওয়ামী লীগের ঘোষণাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে মাঠে নেমেছেন তারা। যেকোনো মূল্যে রাজনীতির মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে চায় বিএনপি-জামায়াত।
৭ মার্চ বিকেলে শহরের জনতা ব্যাংকের মোড়ে আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের হুঁশিয়ারি আমলে নিচ্ছে না বিএনপি। র্যাব-পুলিশ ছাড়া আ’লীগ যদি দলীয়ভাবে বিএনপিকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে এ সময় তারাও হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবে না। দাঁতভাঙা জবাব দিতে সর্বাত্মক প্রস্তুত বিএনপি।
জেলা বিএনপির শীর্ষ কয়েক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
এর আগে গত ৬ মার্চ জেলা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিএনপি।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোদারেস আলী ইছা বলেন, ১২ মার্চের কর্মসূচির জন্য ফরিদপুর শহরে যে ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার লাগানো হয়েছিল তা পুলিশের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাতের অন্ধকারে সরিয়ে ফেলেছে। ডিজিটাল ব্যানারগুলো ছিঁড়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা যাতে ঢাকা যেতে না পারে সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা বাস মালিক গ্রুপকে বাস ভাড়া দিতে নিষেধ করা হয়েছে।
এছাড়া বুধবার শান্তিপূর্ণ মিছিল থেকে সালথা উপজেলা বিএনপির ৪ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল ও পুলিশ প্রশাসনের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান সৈয়দ মোদারেস আলী ইছা।
এতো সব বাধার পরও জেলা বিএনপি ঢাকায় যাবে বলে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি নিয়েছে।
এদিকে, গাড়ি না পাওয়ার আশঙ্কায় প্রতিদিনিই বাসে করে বিএনপি-জামায়াতের অনেক নেতাকর্মী ইতোমধ্যে ঢাকা যাওয়া শুরু করেছেন। তাদের বক্তব্য, যেখানেই বাধা আসবে সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না কাউকে।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ বলছে, ‘ঢাকা চলো’র নামে কোনো প্রকার নাশকতা সহ্য করা হবে না। বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। ৯ থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের কোনো নেতাকর্মীকে তাদের ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হবে না। কেউ যাতে পদ্মা পার হয়ে ঢাকা যেতে না পারে সে ব্যাপারে দলীয় সব নেতাকর্মীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ।
মানুষের জানমাল রক্ষা ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে এ ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ফরিদপুর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এখন মুখোমুখি অবস্থানে। যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বেধে যেতে পারে। কারণ, দু’দলই রয়েছে হার্ডলাইনে। কেই কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়।
এদিকে, ‘ঢাকা চলো’ কর্মসূচির দিন যতোই এগিয়ে আসছে জেলার রাজনীতির মাঠ ততোই গরম হচ্ছে।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক জুলফিকার হোসেন জুয়েল মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যদি র্যাব ও পুলিশ প্রটেকশনে না আসে তাহলে তাদের মোকাবিলা করতে বিএনপি প্রস্তুত রয়েছে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘যেভাবেই হোক আমরা ঢাকা যাবোই।’
এ অবস্থায় শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।