‘৩ হাজার মে.ওয়াট বিদ্যুৎ কোথায় গেল’ সরকারি দলের সাংসদদের প্রশ্ন

‘৩ হাজার মে.ওয়াট বিদ্যুৎ কোথায় গেল’ সরকারি দলের সাংসদদের প্রশ্ন

দেশে বিদ্যুতের নাজুক পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় সংসদে খোদ সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- দেশের জাতীয় গ্রিডে ৩ হাজার মেগাওয়াট যুক্ত হয়েছে। তারপরেও এত লোডশেডিং। এখনো তীব্র গরম পড়েনি। তারপরেও গতবারের চেয়ে এবারের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। তাহলে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গেল কোথায়?

তারা বলেছেন, গ্রীষ্ম মৌসুমের শুরুতেই বিদ্যুতের করুণ অবস্থা দেখা যাচ্ছে। জাতীয় গ্রিডে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হলেও সেটার কোনো আলামত পাওয়া যাচ্ছে না। সকাল নেই, দুপুর নেই, রাত নেই- বিদ্যুৎ থাকছে না। সেচকাজের জন্য গ্রামে রাতে ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকার কথা থাকলেও সেটাও পাওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থা চলতে থাকলে কৃষকদের পক্ষে কৃষিকাজ করা সম্ভব হবে না।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে এসব ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, আমার বাসায়ও সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না। প্রধানমন্ত্রী ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করেছেন। অথচ বাসায় বিদ্যুৎ থাকে না। তাহলে এই বিদ্যুৎ কোথায় যায়। বিদ্যুৎমন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে বিষয়টি জানাতে হবে।

সরকারি দলের অপর সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, মফস্বল এলাকায় রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকবে বলে বলা হয়েছিল। কিন্তু কাগজ-কলমে এক রকম দেখি। আর বাস্তবে পাওয়া যায় অন্য রকম।

আনোয়ারুল হক বলেন, বিদ্যুতের অভাবে কৃষকরা জমিতে পানি দিতে পারছে না। গত বছর আমার এলাকায় কৃষকরা বিদ্যুতের অফিসে হামলা করেছিল। আমি থেকে সেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছিলাম। এবারও সেই পরিস্থিতি তৈরির মতো অবস্থা  হয়েছে।

শহিদুজ্জামান সরকার বলেন, দেশে যখন কোনো ডিজ অর্ডার ঘটে, তখন সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়াতে হয়। আর বিদ্যুৎ নিয়ে আজ দেশে ডিজ অর্ডার শুরু হয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনে আরইবিকে আরো বিদ্যুৎ দেন। দরকার হলে শহরে রাত ৮টা থেকে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেন। তা না হলে কৃষকরা কৃষিকাজ করতে পারবেন না।

এমাজউদ্দিন প্রামাণিক বলেন, অন্যদের এলাকার চেয়ে আমার এলাকায় বিদ্যুতের সমস্যা এক ডিগ্রি বেশি। আন্ডার ফ্রিকোয়েন্সি সিস্টেমে বিদ্যুৎ যায়। আমার পাওয়ার কথা ৭ মেগাওয়াট। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ২ মেগাওয়াট। এই অবস্থা চললে বরেন্দ্র অঞ্চলের ৩০ হাজার একর জমির ফসল বিনষ্ট হয়ে যাবে।

প্রয়োজনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য তিনি সরকারকে পরামর্শ দেন।

এক পর্যায়ে ডেপুটি স্পিকার বলেন, বিদ্যুৎ নিয়ে আপনারা অনেক বলেছেন। একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তি করার প্রয়োজন নেই। এ সময় ননীগোপাল মণ্ডল বলেন, বিদ্যুৎ নিয়ে অনেকে বলেছেন। আমি আর বিদ্যুৎ নিয়ে বলব না। আমার এলাকা সুন্দরবনের পাশে। এখানে বাঘ এসে লোকালয়ে বসে থাকে। মানুষের রাতে ঘুম হয় না। একটা বেড়া দেয়া হোক। বন ও পরিবেশমন্ত্রী যেন এটা করার ব্যবস্থা করেন।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, তিন বছর পার হয়েছে, আজো ভোলায় কোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হয়নি। আজ বিদ্যুতের সমস্যায় আমার এলাকার মানুষ জর্জরিত। এমন অবস্থাও হয় যে মোবাইল ফোনে চার্জ দেওয়ার মতো বিদ্যুৎও থাকে না।

মইন উদ্দিন খান বাদল বলেন, বিদ্যুতে ২০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। এটি সামগ্রিক অর্থনীতিকে বিশাল ধাক্কা দিচ্ছে। এরপরে বিদ্যুৎ নিয়ে কোনো অজুহাত শুনবো না। ইউ হ্যাভ টু ডেলিভার। এর অন্যথা হলে সংসদ সদস্যরা আরো প্রকটভাবে বিষয়টিকে ধরবে।

ধীরেন্দ্রনাথ শম্ভু বলেন, চাহিদা অনুযায়ী আমার এলাকায় বিদ্যুৎ চাই। মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, সকাল থেকে আমার বাসায় তিনবার লোডশেডিং হয়েছে।

অর্থ বাণিজ্য