ফুসফুসে ক্যান্সার ও তার প্রতিকার

ফুসফুসে ক্যান্সার ও তার প্রতিকার

Lung-cancer-300x222ক্যান্সার একটি জটিল ব্যাধি। জটিলতা এবং ভয়াবহতার দিক থেকে এইডসের পরই ক্যান্সারের স্থান। ক্যান্সার হচ্ছে শরীরের কোষকলার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকৃতি। বিজ্ঞানীরা চিকিৎসা বিজ্ঞানে অনেকদূর অগ্রসর হওয়ার দাবি করলেও আজ পর্যন্ত ক্যান্সারের যথাযোগ্য প্রতিষেধক উদ্ভাবন করতে পারেননি। আসলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা যে সফলতা এত দিন অর্জন করেছেন, তার বেশির ভাগই জীবাণুঘটিত রোগের ক্ষেত্রে। এন্টিবায়োটিকের কল্যাণে যক্ষ্মাসহ যেকোনো জীবাণুঘটিত রোগের নিরাময় মানুষের কাছে এখন খোলামেলা ব্যাপার। কিন্তু যে রোগের জীবাণুই নেই, সেখানে করার কী আছে? এখানেই এত দিন ছিলেন ক্যান্সারের কাছে বড়ই নিরুপায় চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। তবে ইদানীং ফুসফুসের ক্যান্সার চিকিৎসায় নাটকীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ফুসফুসের ক্যান্সার কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। তবে চিকিৎসার সুবিধার জন্য ফুসফুসের ক্যান্সারকে স্মলসেল কারসিনোমা এবং নন-স্মলসেল কারসিনোমাÑ এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। স্মলসেল কারসিনোমা চিকিৎসায় খরচ বেশ কম। ক্যাম্পটো নামক ওষুধ দিয়ে বর্তমানে এর চিকিৎসায় বেশ ভালো ফল পাওয়া যাবে। নন-স্মলসেল কারসিনোমা চিকিৎসায় বর্তমানে ব্যবহার করা হচ্ছে টেক্সোটিয়ার নামক ওষুধটি। তবে এর সমস্যা হলো ওষুধটি বেশ দামি। বেশির ভাগ রোগীর পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা কষ্টকর। তবে টেক্সোটিয়াম দিয়ে চিকিৎসায় ব্যাপক সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে ক্যান্সার নিরাময়ে কেমোথেরাপি এবং বিকিরণ চিকিৎসার প্রচলন রয়েছে। এ ধারায় চিকিৎসায় রোগীর খারাপ কোষের সাথে সাথে ভালো কোষও মরে যায়। কিন্তু নতুন চিকিৎসায় শুধু ক্যান্সার-আক্রান্ত টিস্যুই লক্ষ্যবস্তু হবে। অর্থাৎ কেবল খারাপ কোষই মারা পড়বে, ভালো কোষের কোনো ক্ষতি হবে না। এই চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক কম এবং এতই সম্ভাবনাময় যে, ক্যান্সার হয়তো অদূরভবিষ্যতে জীবাণুঘটিত রোগের মতো চিকিৎসাযোগ্য হয়ে উঠবে। ‘টেক্সোটিয়ার’ নামে ওষুধটি ফুসফুসের ক্যান্সারে প্রথম ও দ্বিতীয়পর্যায়ের চিকিৎসা হিসেবে প্রচলিত চিকিৎসার চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর। মানুষ যে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে এই উদ্ভাবন আবিষ্কারগুলো তারই প্রমাণ। তবে ফুসফুসের ক্যান্সার যাতে না হতে পারে তার দিকেই বেশি খেয়াল রাখতে হবে। ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ। কারণ ধূমপান পরিহার করলে ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়। যে যত বেশি মাত্রায় এবং বেশি দিন ধরে ধূমপান করবেন তার এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তত বেশি বাড়িয়ে দেয়, যেমন সিগারেটের ধোঁয়া নিঃশ্বাসের সাথে ভেতরে নেয়া, একটি সিগারেটকে বারবার টানতে থাকা, জ্বলন্ত সিগারেটটি হাতের আঙুলের ফাঁকে না রেখে ঠোঁটের মধ্যে রেখে নিঃশ্বাস গ্রহণ করা, নেভানো সিগারেট আবার জ্বালিয়ে খাওয়া এবং সিগারেট খেতে খেতে একেবারে শেষ পর্যন্ত টেনে খাওয়া ইত্যাদি। পরিবেশ দূষণ বন্ধ করতে পারলে এবং ধূমপানের কু-অভ্যাস বন্ধ করতে পারলে একটি লোক অনায়াসেই ফুসফুসের ক্যান্সারের হাত থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন।

অন্যান্য বিজ্ঞান প্রযুক্তি