সম্প্রতি ভারত সরকার বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে তুলা রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ তুলা আমদানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বস্ত্র ও বিশেষ করে রপ্তানি খাত অনিবার্য সংকটে পড়বে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী নেতারা মত দিয়েছেন।
এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারকে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে এ সংকট মোকাবেলার অনুরোধ জানিয়ে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি) একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে।
ইএবি এর প্রেসিডেন্ট আব্দুস সালাম মুর্শেদী ও সেক্রেটারি কাজী মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারত সরকারের এ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের স্পিনিং ও উইভিং মিলগুলোতে বিপর্যয় সৃষ্টির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে অধিকাংশ টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তির পুরো বিবরণ
ভারত সরকারের ফরেন ট্রেড দপ্তরের মহা-পরিচালক বিগত ০৫/০৩/১২ তারিখের এক নির্দেশনামা ইস্যুর মাধ্যমে ভারত থেকে বাংলাদেশে কাঁচাতুলা রপ্তানির ওপর অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ওই নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে কার্যকর হবে মর্মে জানানো হয়।
ভারত সরকারের এ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের স্পিনিং ও উইভিং মিলগুলোতে বিপর্যয় সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তুলার অভাবে অধিকাংশ টেক্সটাইল মিল বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চাহিদার তুলনায় মিলগুলোর উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে। উল্লেখ্য যে, তুলা আমদানির ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে দেয়া আদেশ, ফার্ম কমিটমেন্ট, চুক্তিপত্র এবং ঋণপত্র-এর ভিত্তিতে ভারত তুলা রপ্তানি না করলে নিম্নে বর্ণিত অবস্থার সৃষ্টি হবে-
(ক) অধিকাংশ টেক্সটাইল মিলের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকতে পারে। অনেক মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
(খ) নতুন সোর্সিংয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পরিমাণ তুলা আমদানি একটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার বিধায় তুলার অভাবে স্পিনিং মিল এবং উইভিং মিলগুলোর সুতা ও কাপড় সরবরাহের পরিমাণ বহুলাংশে হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
(গ) যে সকল টেক্সটাইল মিল কাপড় ও সুতা সরবরাহ করার জন্য পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ আছে, তা সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে এবং ফলশ্রুতিতে দেশের পোশাক রপ্তানিও হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে।
(ঘ) এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে সুতার দাম বৃদ্ধি পাবে এবং নিট পোশাকের এই কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি হলে আন্তর্জাতিক বাজারে নিট পোশাকের মূল্য প্রতিযোগিতামূলক হবে না, ফলে রপ্তানি হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে ইএবি-এর পক্ষ থেকে নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা দেয়া হ’ল:
(ক) বাংলাদেশ সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তুলার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণ
(খ) সমস্যা সমাধানে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্ত্তৃক সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ
(গ) পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিটিএমএ, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, ইএবি (এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন) এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর/এজেন্সির প্রতিনিধির সমন্বয়ে সরকার কর্তৃক একটি মনিটরিং কমিটি গঠনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও সমস্যার সমাধানকরণ
(ঘ) ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার আলোচনার মাধ্যমে এমন সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন, যাতে ভবিষ্যতে তুলা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ক্ষেত্রে নোটিশ হিসেবে বাংলাদেশি তুলা আমদানিকারকদের কমপক্ষে ৬ (ছয়) মাস সময় প্রদান করবে ভারত
অত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির সন্তোষজনক সমাধানের প্রয়াসে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতঃ মাননীয় পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী মহোদয়, মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী মহোদয় এবং মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী মহোদয়-এর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি) এর পক্ষ থেকে অনুরোধ জ্ঞাপন করা হল।