‘উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য তৈরিতে ওয়ালটন বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে’

‘উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য তৈরিতে ওয়ালটন বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে’

বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি এফবিসিসিআই সভাপতি একে আজাদ বলেছেন, উচ্চপ্রযুক্তির পণ্য তৈরিতে ওয়ালটন বাংলাদেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে।

আগামী বাজেটে ওয়ালটনের মতো উৎপাদনকারীদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার সুপারশি করা হবে। সরকারি সহযোগিতা পেলে পণ্য রফতানি করে ওয়ালটন প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

এফবিসিসিআই সভাপতি শুক্রবার গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন কারখানা পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

এ সময় তিনি এফবিসিসিআইয়ের একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। এফবিসিসিআই প্রতিনিধিদল শুক্রবার সকাল ১১টায় ওয়ালটন কারখানায় পৌঁছে।

প্রতিনিধিদলের সদস্যরা ওয়ালটনের ফ্রিজ, মোটরসাইকেল, এয়ারকন্ডিশনার তৈরির বিভিন্ন উৎপাদন ইউনিট ঘুরে দেখেন। বিশেষ করে এসব পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত সর্বাধুনিক মেশিনারিজ, সর্বশেষ প্রযুক্তি সমৃদ্ধ কোয়ালিটি কন্ট্রোল সিস্টেম, উন্নয়ন ও গবেষণার কাজগুলো তারা সরেজমিনে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করেন।

এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, এসেন গ্রুপের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, ইলেকট্রা ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সানাউল্লাহ শহীদ, আরবি গ্রুপের চেয়ারম্যান এসএম নুরুল আলম রেজভি, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম শামসুল আলম, ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল আলম, ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ইলিয়াস কাঞ্চন, এফবিসিসিআই উপ-সচিব এসএম মিজানুর রহমান প্রমুখ।

একে আজাদ বলেন, এখানে এসে আমদানিকারকদের ধারণা পাল্টে গেছে। ওয়ালটন কতটা এগিয়ে গেছে এখানে না এলে তা বোঝা যাবে না। ওয়ালটন পণ্যের কোয়ালিটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। এ ধরনের পণ্য আমদানিকারকদের ক্রমান্বয়ে আমদানি কমানোর আহ্বান জানান তিনি।

একে আজাদ আরো বলেন, ওয়ালটনের প্রত্যেকটি মেশিন অত্যাধুনিক। বিশ্বের সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে তারা। কোয়ালিটির ক্ষেত্রে তারা আইএসও ৯০০১ এবং ১৪০০০ পেয়েছে। রফতনির ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা পেলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এফবিসিসিআই সভাপতি আরো বলেন, ওয়ালটন দেশের চাহিদা মিটিয়েও তাদের উৎপাদিত পণ্য আরো ব্যাপকভাবে বিদেশে রফতানি করতে পারে। এরফলে একদিকে যেমন আমদানি খরচ কমবে, অন্যদিকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে। সেইসঙ্গে সৃষ্টি হবে ব্যাপক কর্মসংস্থানের।

ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম আশরাফুল আলম সাংবাদিকদের জানান, ওয়ালটনের নতুন একটি ফ্রিজ ফ্যাক্টরিতে শিগগিরই উৎপাদন শুরু হবে। এছাড়া এলসিডি ও এলইডি টিভি, প্রতিদিন ৫০ হাজার মোবাইলসেট তৈরির ফ্যাক্টরি স্থাপন করা হচ্ছে। এলসিএম ফ্যাক্টরি স্থাপনের পর বাংলাদেশ বিশ্বের সেনসেশন হয়ে উঠবে। এছাড়া আমাদের আরেকটি ড্রিম প্রজেক্ট হলো কার ফ্যাক্টরি- যার ঘোষণা আসতে পারে এ বছরই। ঘোষণার ২/৩ বছরের মধ্যেই তা গ্রাহকের হাতে পৌঁছবে।

ওয়ালটনের সিনিয়র উপ-পরিচালক উদয় হাকিম বলেন- এফবিসিসিআই সভাপতির এই পরির্দশনের পর আশা করি আগামী বাজেটে সরকার দেশীয় শিল্পের বিকাশে আরো বেশি ইতিবাচক উদ্যোগ নেবে। ধীরে ধীরে আমরা বিশ্ববাজারে জায়ান্ট হিসেবে খ্যাতি পাচ্ছি। খুব শিগগিরই আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অস্ট্রেলিয়ার বাজারে রফতানি করতে যাচ্ছি আমরা।

ওয়ালটনের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং প্রধান লোকমান হোসেন আকাশ বলেন, ২০১৫ সালের মধ্যে শ’খানেক দেশে ওয়ালটন পণ্য রফতানির পরিকল্পনা রয়েছে। বিশ্ববাজারে শীর্ষস্থান পেতে খুব পরিকল্পিতভাবে সাজানো হচ্ছে আমাদের প্রোডাকশন এবং মার্কেটিং প্ল্যান। পরিকল্পনা মতো এগুতে পারলে এ ধরনের পণ্য তৈরিতে বিশ্বের শীর্ষস্থান চলে আসবে বাংলাদেশের দখলে।

বাংলাদেশের সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে বড় ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য তৈরির এই কারখানায় কাজ করছেন ১২ হাজার লোক। প্রায় ৫ হাজার আউটলেটের মাধ্যমে ওয়ালটন বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের ১১টি দেশে ফ্রিজ, এসি, মোটরসাইকেল, এলসিডি ও এলইডি টিভি, ডিভিডি প্লেয়ার ইত্যাদি বাজারজাত করছে। ওয়ালটন বছরে ১৪ লাখ ফ্রিজ, তিন লাখ মোটরসাইকেল ও এয়ারকন্ডিশনার এবং ১০ লাখ টিভি সেট তৈরি করছে। ২০০৮ সালে এই কারখানায় উৎপাদন শুরু হওয়ার পর থেকে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রেখেছে ওয়ালটন। গুণগত উচ্চমান এবং সাশ্রয়ী মূল্যের কারণে খুব দ্রুত দেশের বাজারে আধিপত্য স্থাপন করেছে ওয়ালটন।

অর্থ বাণিজ্য