ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘ভারতের যে কোটি কোটি মানুষ বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন, আমিও ছিলাম তাদের মধ্যে একজন।’
রোববার বঙ্গভবনের দরবার হলে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা অটল বিহারি বাজপেয়িকে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেয়া সম্মাননা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে অটল বিহারি বাজপেয়ির পক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের হাত থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট গ্রহণ করেন নরেন্দ্র মোদি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর হিন্দি ভাষায় দেয়া বক্তব্যে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘এটা ভারতবাসীর জন্য গৌরবের সময়। যে মহাপুরুষ তাদের ও দেশের সেবায় পূর্ণ জীবন ব্যয় করেছেন, পরিবর্তন এনেছেন তাদের জীবনে, রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির কারণে যিনি হয়ে উঠেছেন আমার মতো লাখো কর্মীর প্রেরণা- মহাভারতের সেই সুপুত্র ভারতরত্ন অটল বিহারী বাজপেয়িকে বাংলাদেশ সম্মানিত করছে।’
এজন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মোদি বলেন, একাত্তর সালে বিরোধী দলে থেকেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন অটল বিহারী বাজপেয়ি।
বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত থাকায় ৯০ বছর বয়সী অটল বিহারি বাজপেয়ি সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন নি।
মোদি বলেন, ‘আজ এই অনুষ্ঠানে অটল বিহারী বাজপেয়ি উপস্থিত থাকতে পারলে নিশ্চয়ই খুব আনন্দিত হতেন। আপনারা সবাই তার সুস্থতা কামনা করেছেন। আমার বিশ্বাস আপনাদের প্রার্থনা পূরণ হবে, অটল বিহারি সুস্থ হয়ে আবার আমাদের মধ্যে ফিরে আসবেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আজ এই মুহূর্তে সবচেয়ে আনন্দের বিষয়টি হল, মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির হাতে অটল বিহারিকে পুরস্কার দেয়া হচ্ছে- সেই রাষ্ট্রপতি নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধা। এটা একটা গৌরবের ব্যাপার। আরেকটি গর্বের বিষয়, যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ও মতাদর্শে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ করেছে এবং জয় পেয়েছে, সেই বঙ্গবন্ধুর মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত। এটাও সম্মানের ব্যাপার।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এসব কথা বলতে বলতে ফিরে যান অতীতে। বলেন, ‘আজ একটি তথ্য জানাচ্ছি; যা আগে কখনো বলিনি। ব্যাপারটি নিয়ে আমি গর্বিত। আমি সক্রিয় রাজনীতিতে অনেক পরে এসেছি। যখন একজন কর্মী হিসেবে কাজ করি তখন বাংলাদেশকে সমর্থন জানাতে অটল বিহারি বাজপেয়ি যে সত্যাগ্রহের ডাক দিয়েছিলেন, গ্রাম থেকে দিল্লিতে এসে একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দিয়েছিলাম সেখানে। ভারতের যে কোটি মানুষ বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাদের মধ্যে ছিলাম আমিও।’
১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর ভারতের সংসদে বিরোধী দলের সাংসদ হিসেবে দেয়া অটল বিহারির বক্তৃতার উদ্ধৃতি দিয়ে মোদি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষের রক্ত একত্রে ঝরেছে। সেই রক্তের বন্ধনে দু’দেশের মানুষের যে সন্ধি হয়েছে, তা কোনো দিন ভাঙ্গবে না। কোনো কূটনীতির শিকার হবে না।’
দু’দেশের সুসম্পর্ক অব্যাহত থাকবে বলে আশা ব্যক্ত করে মোদি বলেন, ‘অটল বিহারির সেই কথাগুলোকে নিয়তি দিতে হবে। ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক অটুট থাকবে। আমাদের স্বপ্নগুলো যৌথভাবে পূরণ হতে থাকবে।’