অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, প্রত্যেক বছরই বাজেট পেশ করার পর তা বাস্তবায়ন নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু প্রতি বারই বাজেট বাস্তবায়ন হচ্ছে। উপরন্তু গত কয়েক বছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার বেড়েছে। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটও যথাযথ ভাবেই বাস্তবায়ন হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়নের স্বার্থেই বড় বাজেট দেয়া হয়েছে। তা বাস্তবায়নে কর আদায় বাড়ানো প্রয়োজন। সময় এসেছে কর বাড়াতে বড় ঝাকি দেয়ার। এবার করদাতার সংখ্যা বাড়াতে বড় ঝাঁকি দেয়া হবে। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত বাজেট পরবর্তী এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মোস্তফা কামাল এবং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ, ইআরডি সচিব মেজবাহ উদ্দিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান সহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেট বাস্তবায়ন সব সময়ই বড় সমস্যা। আগে বাজেটের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ বাস্তবায়ন হতো। গত কয়েক বছর ধরে বাস্তবায়নের হার প্রায় ৯৫ শতাংশ। এটা সন্তোষজনক। এবারের প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন করতে লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় বাড়াতে বড় পদক্ষেপ নেয়া হবে। যারা কর দিচ্ছেন তাদের সাথে আরও নতুন করদাতা যোগ করা হবে। শিক্ষা খাতে বরাদ্দের হার কমানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে শিক্ষা খাতে ৭ থেকে ৮ শতাংশ বরাদ্দ দেয়ার কথা বলা হলেও আমাদের মতো দেশের জন্য এত বরাদ্দ (শতাংশের বিচারে) দেয়া কঠিন। কারণ আমাদের মতো নিম্ন কর (জিডিপিতে কর আদায়ের ভিত্তিতে) আদায়ের দেশের স্বল্প থেকে সব খাতেই ব্যয় করতে হয়। তবে মোটের হিসাবে শিক্ষা খাতে এবারও বরাদ্দ বেড়েছে।
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আমাদের করদাতার সংখ্যা বাড়ছে। তবে খুব ধীর গতিতে বাড়ছে। তাই করদাতার সংখ্যা বাড়াতে বড় ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। কর আদায় বাড়াতে এনবিআরের জনবল প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। কর আদায় প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। ৬ শতাংশের প্রবৃদ্ধির স্তর থেকে বের হতে করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর এখনই সময়। বাজেট কাটছাঁট সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, সব বাজেটেই কাটছাঁট করতে হয়। এটা থেকে কোনদিন মুক্তি মিলবে না। তবে যত কম কাটছাঁট করা যায় ততই মঙ্গল। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও দেশে সমন্বয় না করার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেক দিন ধরে বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বড় ধরনের লোকসানে ছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমায় পিডিবি লোকসান সমন্বয় করতে পেরেছে। তবে এ খাতে ভর্তুকি দেয়ার বিষয়ে কিছুটা জঞ্জাল রয়েছে। এখানে অর্থায়নের বিষয়টি স্বচ্ছ নয়। এখানে শুভঙ্করের ফাঁকি দূর করে কিভাবে যৌক্তিক ভাবে ভর্তুকি দেয়া যায় তা নিয়ে কাজ চলছে। ন্যূনতম কর বাড়ানোয় গ্রামের মানুষের উপর বেশি চাপ পড়বে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব সিটি কর্পোরেশনে হয়তো এক রকমের কর থাকবে। আর অন্য জায়গায় থাকবে কিছুটা কম। এ বিষয়গুলো আলোচনা সাপেক্ষে ঠিক করা হবে। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার কৃষকদেরকে যে সুবিধা দিচ্ছে তা আগে কখনই দেয়া হয়নি। রপ্তানিতে নগদ সহায়তা দেয়া হচ্ছে, সেচের কাজে ব্যবহূত সেচযন্ত্রের বিদ্যুত্ বিলে ২০ ভাগ রিবেট দেয়া হচ্ছে। সুতরাং কৃষকরা ভাল দাম পাচ্ছে না এটা সবসময় ঠিক নয়। আমির হোসেন আমু বলেন, বাস্তবসম্মত বাজেটই দেয়া হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশ সমৃদ্ধির পথে যাবে। এ লক্ষ্যেই বাজেট দেয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে সমৃদ্ধির সব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হবে। কেউ জাদুর চেরাগ নিয়ে আসেনি। রাতারাতি উন্নয়ন হয়ে যাবে না। এজন্য সময় দিতে হবে। আহম মুস্তফা কামাল বলেন, ৯৫ শতাংশ বাজেট বাস্তবায়ন হলেই যথেষ্ট। এর চেয়ে বেশি বাস্তবায়ন কদাচিত্ হয়। বাজেট বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় উন্নয়ন ব্যয় যথাযথভাবে করার ব্যাপারে কাজ করবে। এডিপি বাস্তবায়ন সাধারণত চতুর্থ প্রান্তিকে বেশি হয়। এতে কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠে। এজন্য আগের প্রান্তিকগুলোতেই যেন প্রকল্প বাস্তবায়ন বেশি হয়, সে বিষয়ে এবার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।