বিএনপি-জামায়াত জোটের টানা হরতাল-অবরোধের কারণে এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আসেনি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার সকালে ফলাফলের অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর তিনি এ মন্তব্য করেন।
শনিবার সকাল সোয়া ১০টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলাফলের অনুলিপি তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাঙ্গামাটি ও নীলফামারীর জেলা প্রশাসক এবং কয়েকজন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেন।
ফলাফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিকূল অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এ ফলাফল করেছে। হরতাল-অবরোধ না থাকলে ও পরীক্ষার সময় বারবার না বদলাতে হলে পাসের হার আরও বাড়ত। বিএনপির জ্বালাও, পোড়াও, হরতাল, অবরোধের কারণে বারবার পরীক্ষায় সময়সূচি বদলাতে হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট হয়েছে।
রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে প্রতিকূল অবস্থায় পরীক্ষা দিয়েও পাসের হার এত বেশি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিকূল অবস্থায়ও এত পাসের হার কম কথা নয়। একটু সুন্দর পরিবেশ পেলে শিক্ষার্থীরা অবশ্যই পরীক্ষায় পাস করবে।
গতবারের চেয়ে এবার শতকরা ৫.৬৩ ভাগ শিক্ষার্থী কম পাস করেছে। এ বছর শতকরা ৮৭.০৪ ভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। গতবার তা ছিল ৯২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ২০১৩ সালের ফলাফলও এর চেয়ে ভালো ছিল। সেবার ৮৯ দশমিক ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। কমেছে জিপিএ-৫ও। গতবার জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ২২ হাজার ৩১৩ জন শিক্ষার্থী। আর এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৯০১ জন।
মানুষ পুড়িয়ে মারার রাজনীতি থেকে বিএনপি-জামায়াতকে বেড়িয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা মানুষের জীবন নিয়ে খেলবে তাদের কোনো ক্ষমা নেই। তাদের কোনো অধিকারই নেই। কেন মানুষ খুন করবে? কেন মানুষ পুড়িয়ে মারবে? কেন মানুষকে বোমা দিয়ে মারবে?
বিএনপি-জামায়াত মানুষ পুড়িয়ে মারা, মানুষের ক্ষতি করা, মানুষকে পঙ্গু করার কাজ থেকে বিরত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, প্রত্যেক জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলাই সরকারের লক্ষ্য। ছেলেমেয়েরা যাতে ঘরের কাছে উচ্চশিক্ষা নিতে পারে, সরকার সেই সুযোগ সৃষ্টি করতে চায়।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিকূলতার মধ্যেও ২০১৪ ও ২০১৫ সালে সময়মতো শিক্ষার্থীদের কাছে সরকার বই পৌঁছে দিয়েছে। এ সময় অনেকটা গেরিলা কায়দায় বই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
অবরোধ-হরতালে নাশকতার মধ্যে এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে শুধু সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার পরীক্ষা নেয় সরকার। এ ঘটনার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সময় আমাদের পরীক্ষা এলো। খুব স্বাভাবিকভাবে আমাদের ছেলে-মেয়েরা পরীক্ষা দিতে যাবে, সাথে অভিভাবক, শিক্ষকরা যান। শিক্ষামন্ত্রীকে আমি বললাম, এত মানুষের জীবন আমি ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারি না। ঠিক আছে, যখন হরতাল থাকবে না, অবরোধ থাকবে না, তখন ফাঁকে ফাঁকে পরীক্ষা হবে। যদিও হরতালে মানুষের সাড়া ছিল না, হরতাল বা অবরোধ কখনোই সফল হয়নি।
তিনি বলেন, তাদের অবরোধ বোধহয় এখনো চলমান, ওটা নাকি প্রত্যাহার হয়নি। যাই হোক, বাংলাদেশের মানুষ ওই হরতালে সাড়া দেয়নি। এটা একটা গোষ্ঠীর স্বার্থে, জনস্বার্থে না। সেজন্য তারা জনসমর্থন পায়নি। কিন্তু ওই অবস্থায়ও আমরা কোনো ঝুঁকি নিতে চাইনি। তাই পরীক্ষা নিতে হয়েছে ফাঁকে ফাঁকে। আমি জানি এভাবে পরীক্ষা দিতে আমাদের ছেলে-মেয়েদের খুবই কষ্ট হয়েছে। কারণ একটা বিষয়ে পরীক্ষা দিতে ভালো পড়াশোনা করে তারা প্রস্তুত। তারপর তাদের পরীক্ষা হবে না। আসলে মনটাইতো ভেঙে যায়। পরীক্ষার মনোযোগটাইতো নষ্ট হয়ে যায়। তারপরও এভাবেই তাদেরকে পরীক্ষা দিতে হয়েছে।
তারপরও এবার ৮৭ দশমিক ০৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা কিন্তু এর আগে ৯৩ ভাগ পর্যন্ত পাসের হার তুলতে সক্ষম হয়েছিলাম। খুব আকাঙ্ক্ষা ছিল- এবার আরও বৃদ্ধি পাবে। আমি জানি, যদি হরতাল-অবরোধ না থাকত, পরীক্ষার সময় বারবার পরিবর্তন না হত তাহলে অবশ্যই পাসের হার বাড়াতে আমাদের ছেলে-মেয়েরা পারত। ভবিষ্যতে আমি আশা করি, পাসের হার আরও বাড়বে।
হরতাল-অবরোধে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে অনিক, তারওতো পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল, তারওতো পাস করার কথা ছিল। কিন্তু সে দিতে পারেনি। বোমার আঘাতে তার একটা চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। তাকে বারবার ভারতে পাঠাচ্ছি। সেখানে চিকিত্সা চলছে। একটা চোখ সম্পূর্ণরূপে নষ্ট, সেখানে পাথরের চোখ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ রকম বহু আছে, দেখলে কষ্ট লাগে। এই বাচ্চাদের আজকে পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল।