দুই দিনের সফরে আগামী ৬ জুন বাংলাদেশে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার ঢাকা ও নয়াদিল্লি থেকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন বাংলাদেশ সফরের তারিখ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে আগামী ৬ ও ৭ জুন তিনি বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফর করবেন।
উচ্চ পর্যায়ের একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই সফর দুই দেশের সম্পর্ককে আরো নিবিড় করবে ও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। নরেন্দ্র মোদী নিজে রাজনৈতিক, ভৌগলিক ও অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় ঘনিষ্ট প্রতিবেশি দেশ বাংলাদেশকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এই সফরে সংযোগ, বাণিজ্য, বিনিয়োগ খাতে নতুন বোঝাপড়া ছাড়াও পুরোনো ইস্যুগুলোর সম্মানজনক সমাধান করতে চাচ্ছেন তিনি।
দুপুরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঘোষণায় বলা হয়, নরেন্দ্র মোদীর আসন্ন সফরের মধ্য দিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে ভারতের সম্পৃক্ততার গুরুত্ব প্রতিফলিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আন্তরিক ও সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক আরো জোরদার এবং মৈত্রী ও বিশ্বাসের বন্ধন শক্তিশালী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ঘোষণায় আরো বলা হয়, সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ছাড়াও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও গতকাল প্রায় একই ধরনের ঘোষণায় নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের তারিখ জানায়। এতে বলা হয়, এ সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের চমত্কার সম্পর্ক আরো জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সফরের সময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদের আনুষ্ঠানিক বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব দিক নিয়ে আলোচনা হবে।
চলতি মাসের গোড়ার দিকে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে দীর্ঘ ৪১ বছরের স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনী বিল ভারতের পার্লামেন্টে সর্বসম্মতিতে পাশ হয়। মূলত এই বিল পাশের পরই নরেন্দ্র মোদীর সফরের প্রস্তুতি নতুন করে গতি পায়। ভারত ৬ ও ৭ জুন মোদীর বাংলাদেশ সফরসূচির প্রস্তাব করে। বাংলাদেশ এতে ইতিবাচক সাড়া দেয়। এরপর সফরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে ৬ ও ৭ জুন সফরের সম্ভাব্য তারিখ ধরেই দুই দেশের প্রস্তুতি চলছিলো। এরই অংশ হিসেবে ভারতীয় একটি অগ্রবর্তী দল গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পঙ্কজ শরণ:
বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ মঙ্গলবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রাষ্ট্রাচার বিভাগের শীর্ষ কর্মকতাদের সঙ্গে মোদীর সফরের প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করেছেন।
নরেন্দ্র মোদী ৬ জুন সকালে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে করে ঢাকা আসবেন এবং পরদিন সন্ধায় নয়াদিল্লি ফিরে যাবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ছাড়াও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ, সাভার স্মৃতি সৌধে শহীদদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে বক্তৃতা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন নরেন্দ্র মোদী। পূর্ণাঙ্গ সফরসুচি, সফরসঙ্গীদের তালিকা ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক বিষয়ে চূড়ান্ত করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ভারতীয় হাইকমিশন আরো বৈঠক করবে।
ঢাকায় তিনি হোটেল সোনারগাঁওয়ে অবস্থান করবেন। মোদীর সফরকে স্মরণীয় করে রাখতে ভারতের সঙ্গে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করতে কাজ করছে বাংলাদেশ। ভারত চায় বাংলাদেশ তথা পুরো অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে। এ সফরে মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের জন্য ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর সম্মাননা নরেন্দ্র মোদীর হাতে তুলে দেবে বাংলাদেশ।
দশটি চুক্তি ও সমঝোতা:
মোদীর সফরে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরের জন্য উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন, অভ্যন্তরীণ নৌ প্রটোকল নবায়ন, সমুদ্র অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ মোকাবিলা, শিক্ষা, সংস্কৃতি খাতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। নতুন দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নতুন ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের কথাও রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে ভারতকে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্দিষ্ট করে দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে। দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতাকে আরও নিবিড় করতে এবার প্রথমবারের মতো প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হবে। বিশেষ করে নেপাল ও ভুটানে ভারত যেভাবে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশের কুমুদিনী ট্রাস্টের একটি পানি প্রকল্পের মাধ্যমে এটি শুরু করার কথা রয়েছে। মোদীর সফরে শেষ পর্যন্ত দুই দেশের চুক্তি ও এমওইউর সংখ্যা দশে দাঁড়াতে পারে।
বাংলাদেশে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে ভারত আগ্রহ দেখাতে পারে। তবে বিষয়টি কৌশলগতভাবে স্পর্শকাতর বলে অনেকে মনে করেন।