বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের সহস্রাধিক শিশুদের নিয়ে রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম মাঠে চলমান ‘খেলাঘর জাতীয় শিশু-কিশোর প্রশিক্ষণ ক্যাম্প-২০১২’ পরিণত হয়েছে সার্ক দেশগুলোর ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মৈত্রীমেলায়। বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা ও স্মারক সম্মাননা প্রদানসহ নানা আয়োজনে শুক্রবার ক্যাম্পের দ্বিতীয় দিন শিশু-কিশোর ও সংগঠকদের মৈত্রীর বন্ধনে মুখরিত হয়ে ওঠে।
দেশের সর্ববৃহৎ শিশু-কিশোর সংগঠন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর আয়োজিত চারদিনের এ প্রশিক্ষণ ক্যাম্প বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে। ক্যাম্প চলবে আগামী রোববার পর্যন্ত।
ক্যাম্পে দেশের ৪০টির মতো জেলা থেকে খেলাঘরের ১০০০ ভাই-বোন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সব পেয়েছির আসর ও কিশোর মেলা এবং নেপালের দিপীকা শিশু সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিশুরা অংশ নিচ্ছে। তাদের সঙ্গে রয়েছেন কর্মী-সংগঠকরা। তারা সুবিশাল জিমনেসিয়াম ক্যাম্পাসে তাবুবাসের মাধ্যমে ক্যাম্প কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে।
শিশু-কিশোরদের ব্রতচারী নৃত্য, ছড়াগীতি, ভঙ্গিগীতি, কুচকাওয়াজ, ডিসপ্লে, প্রাথমিক চিকিৎসা, সংবাদ লিখন ও সংবাদ পাঠ, সংগীত-নৃত্য ইত্যাদি বিষয়ে ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বাঙালি সংস্কৃতি, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সামাজিক আন্দোলন, বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও পরিবেশ আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন দেশের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ। স্বাধীনতার মাস উপলক্ষে ক্যাম্পস্থলে আয়োজন করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান ও মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর।
শুক্রবারের সান্ধ্য আয়োজন উৎসর্গ করা হয় খেলাঘরের নিবেদিতপ্রাণ সংগঠক প্রয়াত কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মাহবুবা নাহিদ টিটিমাকে। ক্যাম্প মঞ্চে ‘মাহবুবা নাহিদ টিটিমা স্মারক সম্মাননা’ প্রদান করা হয় তার পরিবার এবং বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন ও পথনাটক পরিষদকে। মাহবুবা নাহিদ টিটিমার মা মঞ্জুরা বেগম মেয়ে খেলাঘর সংগঠক তাসফিয়া রায়হান পরিবারের পক্ষে স্মারক সম্মাননা গ্রহণ করেন।
এর আগে ভোরে বাংলাদেশের জাতীয় এবং ক্যাম্পে অংশ নেওয়া খেলাঘর, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সব পেয়েছির আসর ও কিশোর মেলা এবং নেপালের দিপীকা শিশু সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাংগঠনিক পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে ক্যাম্পের দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। পতাকা উত্তোলন করেন খেলাঘর সংগঠক আল আজাদ ও ধীরেন হালদার।
সারাদিন ক্যাম্পবাসী শিশুদের ব্রতচারী নৃত্য, ছড়াগীতি, ভঙ্গিগীতি, কুচকাওয়াজ, ডিসপ্লে ও সংগীত-নৃত্য বিষয়ে এবং সংগঠকদের সাংগঠনিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। গানের প্রশিক্ষণ দেন সংগীতজ্ঞ অনুপ ভট্টাচার্য্য ও গীতিকার-সুরকার সেলিম রেজা। সাংঠনিক প্রশিক্ষণ পর্বে প্রশিক্ষণ দেন ‘বাঙালি সংস্কৃতি’ বিষয়ে অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী এবং ‘সমাজ বিনির্মাণে খেলাঘরের ভূমিকা’ বিষয়ে অধ্যাপিকা পান্না কায়সার ও আব্দুল মতিন ভূঁইয়া।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বিকেলে ‘খেলাঘর জাতীয় শিশু-কিশোর প্রশিক্ষণ ক্যাম্প-২০১২’ এর উদ্বোধন করেন বরেণ্য শিক্ষাবিদ-বুদ্ধিজীবী বাংলা একাডেমীর সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ও ক্যাম্প উদযাপন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা পান্না কায়সারের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছ, সাংবাদিক হারুন হাবীব, নেপালের দিপীকা শিশু সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রধান তারা সাপটা, সর্বভারতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন সব পেয়েছির আসরের সাধারণ সম্পাদক সনৎ ভট্টাচার্য্য ও বলরাম হালদার।
স্বাগত বক্তব্য দেন উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন ভূঁইয়া। আলোচনায় অংশ নেন খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী, নূরুর রহমান সেলিম, প্রণয় সাহা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ভারতের সব পেয়েছির আসর ব্রতচারী রায়বেশে ও নেপালি শিশুরা নেপালি নৃত্য পরিবেশন করে। খেলাঘরের ভাই-বোনেরা নৃত্যের তালে তালে তুলে ধরে আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।
ক্যাম্পের তৃতীয় দিন শনিবার মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করে যুদ্ধাপরাধীমুক্ত বাংলাদেশ গড়বার দৃপ্ত শপথে ঢাকার রাজপথে শিশু-কিশোর ৠালির আয়োজন থাকবে।
১১ মার্চ রোববার বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে ক্যাম্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সম্মানিত অতিথি থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাংবাদিক-মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, ক্যাম্পের কো-স্পন্সর শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রহমান সরকার এবং আরডিএফের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।