আসন্ন ঢাকা সফরে সঙ্গী হতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুরোধ জানালেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পশ্চিমবঙ্গ সফরের প্রথম দিনে গতকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রী নিজেই মমতাকে তাঁর সঙ্গে ঢাকায় যেতে অনুরোধ জানান। মমতা সেই অনুরোধ গ্রহণ করেছেন। শেষ মুহূর্তে বদল না হলে মোদি জুন মাসের ৬ ও ৭ তারিখ দুদিনের সফরে ঢাকা যাবেন। দিল্লি ও ঢাকা পারস্পরিক আলোচনায় এই দুই দিন চূড়ান্ত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শনিবার দুদিনের সফরে পশ্চিমবঙ্গে যান। সফরের প্রথম দিনেই তিনি কলকাতার নজরুল মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন। সেখানেই মমতাকে তিনি তাঁর সফরসঙ্গী হতে অনুরোধ করেন। মমতা সেই অনুরোধ গ্রহণ করে মোদিকে জানান, তিনি অবশ্যই যাবেন। তবে দিন ক্ষণ চূড়ান্ত করার আগে যেন তাঁর সঙ্গে কথা বলা হয়। কারণ, জুলাই মাসে তাঁর লন্ডন যাওয়ার কথা। তা শুনে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেন, জুন মাসের প্রথম সপ্তাহেই তিনি ঢাকা যেতে চাইছেন। মমতা তাঁকে বলেন, তিনি রাজি।
দীর্ঘ টালবাহানা শেষে স্থল সীমান্ত বিল বাস্তবায়নের পর এই চুক্তি দু দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে এক অন্য উচ্চতায় তুলে দেবে বলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সংসদে জানিয়েছিলেন। এই সফরে সেই চুক্তি বাস্তবায়নের একটি নথিতে দুই প্রধানমন্ত্রী সই করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও এই বিষয় নিয়ে দুই দেশের আইন মন্ত্রকের দ্বিমত রয়েছে। বাংলাদেশ মনে করে, তাদের দিক থেকে চুক্তি অনেক আগেই রূপায়িত। বাধা ছিল ভারতের দিক থেকে। চার দশক পর চুক্তি রূপায়ণ করায় এখন ভারতের দিক থেকে একটি ‘লেটার অব র্যাটিফিকেশন’ বাংলাদেশকে দেওয়া দরকার। ভারতের আইন মন্ত্রক আবার মনে করছে, সেই ‘লেটার অব র্যাটিফিকেশন’-এ বাংলাদেশেরও সই দরকার। কারণ, তাতে বোঝা যাবে দুই দেশই চুক্তি বাস্তবায়নে একমত।
পানি প্রবাহের মতপার্থক্য মিটলেই তিস্তা চুক্তি
এর বাইরে দুই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বড় হয়ে উঠে আসবে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি। ২০১১ সালে মমতার বিরোধিতায় তিস্তা চুক্তি আটকে গিয়েছিল। চার বছর পর মমতার ঋজু মনোভাব অনেকটাই নমনীয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা গিয়ে মমতা নিজেই সেই নরম মনোভাবের পরিচয় রেখে আসেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছাড়াও প্রকাশ্যে তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন তিস্তা নিয়ে তাঁর ওপর ভরসা রাখতে। তিস্তায় শুকনা মৌসুমে পানি প্রবাহ নিয়ে এখনো দুই দেশে কিছুটা মতপার্থক্য রয়েছে। সেটা মিটলেই এই চুক্তি সম্পাদিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী মোদির সফরেই তা সম্ভব হবে কি না সংশয় আছে সে বিষয়ে।
পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল নিয়ে চুক্তি হবে
এই সফরে দুই দেশের উপকূল দিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল বিষয়ে একটি চুক্তি সই হবে। সম্প্রতি দিল্লিতে দুই দেশের সচিব পর্যায়ে এই বিষয়ে একটি অনুস্বাক্ষর হয়েছে। এই চুক্তিতে দুই দেশেরই বাণিজ্যে সুবিধে হবে। দু দেশের মধ্যে যে বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে তা স্বল্পমেয়াদি। প্রতি দু বছর অন্তর সেই চুক্তির নবায়ন প্রয়োজন। মোদির সফরে সেই চুক্তি দীর্ঘমেয়াদি করা হবে। কোনো পক্ষ বাতিল না করলে পাঁচ বছর অন্তর সেই চুক্তি আপনা-আপনিই নবায়ন বা ‘রিনিউ’ হয়ে যাবে। বাংলাদেশের নদীপথ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে পণ্য পরিবহনের জন্যও একটি প্রটোকল এই সফরে চুক্তি হবে। শুধু পররাষ্ট্র মন্ত্রকই নয়, ভারতের বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রকও মনে করছে, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফর দুই দেশের সম্পর্ককে সব দিক থেকেই এক অনন্য উচ্চতায় তুলে আনবে।