ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট জয়ের জন্য আজ বুধবার মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে নামছে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের দল। প্রস্তুতি ম্যাচ, ওয়ানডে সিরিজ ও একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে জয়ের পর খুলনায় প্রথম টেস্টে ব্যাটিং বীরত্বে পাকিস্তানের সাথে প্রথম ড্র মিলিয়ে বাংলাদেশ দল এখন আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে। এর মধ্যেই স্বাগতিক অধিনায়ক গতকাল মঙ্গলবার জানিয়ে দিয়েছেন পাকিস্তানকে হারাতে যা যা দরকার তার সবটাই করবে বাংলাদেশ দল।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এ টেস্টটিতে পাকিস্তান যে জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে মাঠে নামবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কেননা এতগুলো হারের পর টেস্ট র্যাংকিংয়ে তিন নম্বরে থাকা পাকিস্তান দলের নিশ্চিন্তে দেশে ফেরার জন্য টেস্টটিতে জয়ের কোন বিকল্প নেই। বিশেষ করে যখন র্যাংকিংয়ের বিচারে তাদের বিপক্ষ আছে নয়ে।
অধিনায়ক মুশফিক জানিয়ে রেখেছেন পাকিস্তানকে এ সফরে জয়হীন রাখতে তার দল দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। মুশফিক অবশ্য এটাও স্মরণ করিয়ে দেন যে, জিততে চাইলে পাকিস্তানের ২০টি উইকেটের দখল নিতে হবে তাদের। যদিও পেসার রুবেল হোসেন ইনজুরির কারণে ছিটকে পড়ায় বাংলাদেশের বোলিং বিভাগ কিছুটা অভিজ্ঞতার ঘাটতিতে থাকবে। রুবেলের জায়গায় দলে আসা আবুল হোসেন রাজু তিন টেস্ট খেলে তিন উইকেট নিয়েছেন ১২৩.৬৬ গড়ে। বোলিং প্রসঙ্গে মুশফিক জানান, উইকেট দেখে তারা আজ সিদ্ধান্ত নেবেন। তার ধারণা উইকেট বোলারদেরও আনুকূল্য দেবে। তাই পরিস্থিতি বুঝে পেসার রাজু, শাহাদাত হোসেন ও মোহাম্মদ শহিদের মধ্য থেকে দু’জন কিংবা তিনজনকেও খেলাতে পারেন। এমনকি অবস্থা বুঝে একজন বাড়তি স্পিনারকেও নেয়ার সম্ভাবনা আছে।
মুশফিকের মূল অনুপ্রেরণা খুলনা টেস্ট ও তার আগের ম্যাচগুলোর অনুপ্রেরণা। খুলনায় তামিম ইকবাল ডাবল সেঞ্চুরির পাশাপাশি ওপেনিং জুটিতে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন ইমরুল কায়েসকে নিয়ে। স্পিনার তাইজুল ইসলাম ছয় উইকেট নিয়েছেন। এগুলো ক্ষণে ক্ষণে অনুপ্রাণিত করছে দলকে। তাছাড়া মিরপুরে যে কয়টা টেস্ট খেলা হয়েছে তার সবগুলোতেই জয় পরাজয় নির্ধারিত হয়েছে।
মুশফিক মনে করেন, আবহাওয়া সমস্যা না করলে এ টেস্টটিতেও তাই হবে। তাছাড়া পরের সিরিজে ভারতের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হওয়ার জন্যও এ টেস্টটি ভালো কিছু দিয়ে শেষ করতে চায় বাংলাদেশ। অধিনায়ক জানিয়েছেন, এ জন্য তার দলের প্রতিটি সদস্য কঠিন পরিশ্রম করেছেন।
স্বাগতিকদের এ টেস্টটিতে জয় পেতে হলে অবশ্য সাকিব আল হাসানের কাছ থেকে প্রত্যাশিত বোলিং নৈপুণ্য পেতে হবে। অধিনায়ক এ প্রসঙ্গে বলেন, সাকিব দলের সেরা বোলার এবং মিরপুরে তার খুবই ভালো রেকর্ড আছে। সেজন্য তারা সাকিবের কাছ থেকে বোলিং নৈপুণ্যের প্রত্যাশায় মুখিয়ে আছেন।
টেস্টে ২০০০ সালে অভিষেকের পর বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত শক্তিশালী কোন দেশের বিরুদ্ধে সিরিজ জিততে পারেনি। বাংলাদেশ টেস্টে যে দুটি সিরিজ জিতেছে সেগুলো হলো সমগোত্রীয় জিম্বাবুয়ে ও মাঝে দুর্বল হয়ে পড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিরুদ্ধে। তবে সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন একটি বার্তা সংস্থাকে বলেছেন সময় এখন বাংলাদেশের আরো এগিয়ে যাওয়ার এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের। তিনি বলেন,‘আমরা জয়ের জন্যই চেষ্টা চালাব। আমরা ইতিবাচক মানসিকতার মধ্যেই আছি যা আমাদের বিপক্ষের বিরুদ্ধে এগিয়ে থাকতে সাহায্য করবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘খুলনায় আমাদের ঘুরে দাঁড়ানো দলের আত্মবিশ্বাসকে নতুন উচ্চতায় তুলে এনেছে। বৈচিত্র্যময় বোলিং ক্ষমতার অধিকারী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমরা যা করেছি তা খুব বেশি দলের বিরুদ্ধে সম্ভব নয়। এরকম একটা নৈপুণ্যের পর ছেলেরা নিশ্চিতভাবেই ঢাকায় জয়ের জন্যই মুখিয়ে থাকবে।’
পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহ উল হক অবশ্য মনে করেন মিরপুর টেস্টে কেউ সুস্পষ্ট ফেভারিট নয়। তার মতে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের পিচ খুলনার তুলনায় বেশি বাউন্স ও টার্ন হবে। তাই তার বোলাররা খুলনার চাইতে এখানে ভালো করতে পারে।
সফরকারী অধিনায়ক বলেন, ‘আমি মনে করি না কোন দলই ফেবারিট। এ মুহূর্তে দু’দলের অবস্থানই সমান। যে দল পাঁচ দিন ধরে শ্রেয়তর ক্রিকেট খেলবে, তাদের ম্যাচটি জয়ের সম্ভাবনা থাকবে।’